এবার নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত! দেনায় ডোবা পাকিস্তানের জন্যে কী অপেক্ষা করছে?

Pakistan Currency: স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের গভর্নর জামিল আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সমস্ত কাগজের নোট পলিমার প্লাস্টিকের নোট দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হবে।

দেনার দায়ে ডুবে পড়শি দেশ পাকিস্তান। গত জুন মাসেই দেখা গিয়েছিল, চড়া সুদের হারে দেশের তফসিলি ব্যাঙ্ক থেকে প্রায় ৩.২ ট্রিলিয়ন পাকিস্তানি মুদ্রা ধার করেছে পাক সরকার। পুরনো ধার মেটাতে নতুন ধার নেওয়া ছাড়া আর কোনও সহজ রাস্তা খোলা নেই তাদের হাতে। সরকারের আয়বৃদ্ধি সত্ত্বেও খরচ কোনও ভাবেই কমাতে পারছে না সে দেশের সরকার। কিছুদিন আগেই সরকার বদল হয়েছে সে দেশে। নতুন সরকার দেশের অর্থনীতি সামলাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছে। এর মধ্যেই বিরাট সিদ্ধান্ত নিল শাহবাজ সরকার। শিগগিরই বদলে ফেলা হবে পাকিস্তানের সমস্ত নোট। পুরনো নোট বদলে ফেলা হবে পলিমার প্লাস্টিকের তৈরি নোট দিয়ে।

বছর আটেক আগে নোটবন্দি পরিস্থিতির মুখোমুখি পড়েছিল ভারত। ২০১৬ সালের নভেম্বর মাসের ঘটনা। রাতারাতি দেশের সমস্ত ৫০০ ও ১০০০ টাকার নোট বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদি সরকার। কালো টাকা ফেরাতেই এই সিদ্ধান্ত বলে দাবি করেছিল মোদি সরকার। তবে তার ফল হয় ভয়াবহ। কার্যত ভেঙে পড়ে ভারতের অর্থনৈতিক কাঠামো। মার খায় অসংগঠিত ক্ষেত্রগুলো। যার মাশুল কার্যত আজও দিতে হচ্ছে ভারতের অর্থনীতিকে। পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবস্থা এমনিতেই বেহাল। বালুচিস্তান, পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক এলাকায় প্রায়দিনই সরকারবিরোধী বিক্ষোভ দেখাচ্ছে স্থানীয় মানুষ। জিনিসপত্রের দাম আকাশছোঁয়া। বিদ্যুতের বিল থেকে শুরু করে প্রায় সব কিছুর খরচ সামলাতেই নাভিশ্বাস উঠছে মানুষের। কর বাড়িয়েও খরচ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। এই পরিস্থিতিতে নোট বদলের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের জন্য ঠিক কতটা লাভজনক হতে চলেছে, তা নিয়ে উঠতে শুরু করেছে প্রশ্ন।

আরও পড়ুন: ৪৫ দিনে ১১ বিলিয়ন ডলার ধার! যে ভাবে ডুবছে পাকিস্তান

পাকিস্তানের এই নোটবদলের সিদ্ধান্ত যে ভারত সরকারের নোটবন্দির সিদ্ধান্তের থেকে খুব বেশি আলাদা হতে চলেছে, তেমনটা হলফ করে বলতে পারছেন না ওয়াকিবহাল মহল। ইতিমধ্যেই পাকিস্তান প্রশাসনের তরফে এ সংক্রান্ত ঘোষণা করে দেওয়া হয়েছে, স্থানীয় মানুষ যাতে আগেভাগে সতর্ক হতে পারে। স্টেট ব্যাঙ্ক অব পাকিস্তানের গভর্নর জামিল আহমেদ জানিয়েছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে দেশের সমস্ত কাগজের নোট পলিমার প্লাস্টিকের নোট দিয়ে প্রতিস্থাপিত করা হবে। এতে জাল মুদ্রার সমস্যা শেষ হবে বলেই দাবি করা হয়েছে পাকিস্তান প্রশাসনের তরফে। পাশাপাশি নতুন এই নোটগুলি এমন ভাবে ডিজাইন করা হবে, যাতে নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যগুলি আরও জোরালো হয়।

জামিল আহমেদ সেনেটের একটি কমিটিকে জানিয়েছেন, নতুন নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি নতুন হলোগ্রাম দিয়ে ডিজাইন করা হবে নোটগুলিকে। ১০, ৫০, ১০০, ৫০০, ১০০০ ও ৫০০০ টাকার ওই নতুন নোট ইস্যু করা হবে তার পর। তবে সিনেট কমিটি জানিয়েছে, পুরনো নোটগুলি অবিলম্বে সরানো হচ্ছে না। আগামী ৫ বছর পর্যন্ত বৈধ থাকবে সেগুলি। তার পরে পর্যায়ক্রমে সেগুলি বাজার থেকে তুলে নেওয়া হবে।

Why Is Pakistan About To Change Its Currency

 

পাক স্টেট ব্যাঙ্কের গভর্নর জানান, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক এই নতুন ধরনের পলিমার প্লাস্টিকের নোট নিয়ে ইতিমধ্যে বিস্তর পরীক্ষা-নিরিক্ষা করছে। প্রাথমিক ভাবে এগুলি জনসাধারণকে ব্যবহার করার পরীক্ষাও হচ্ছে। তাঁদের তরফে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া মিললে সমস্ত নোট প্লাস্টিকে পরিণত করা হবে। তবে পাকিস্তান একা নয়। বর্তমানে অন্তত চল্লিশটি দেশে পলিমার প্লাস্টিক নোট ব্যবহার করা হয়। ১৯৯৮ সালে প্রথম বার অস্ট্রেলিয়ায় এই নোট চালু করা হয়েছিল। এই ধরনের পলিমার প্লাস্টিকের নোট জাল করা কঠিন বলেই মনে করেন বিশেষজ্ঞমহল।

Why Is Pakistan About To Change Its Currency

 

পাকিস্তানে পাঁচ হাজার টাকার নোট ব্যবহার নিয়ে যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। এমনিতেই আর্থিক ভাবে দুর্বল দেশ। জিনিসপত্রের দাম এত বেশি, এদিকে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা তলানিতে ঠেকেছে। এই পরিস্থিতিতে ৫ হাজারের মতো বড় অঙ্কের নোট ব্যবহার নিয়ে নানা মহল থেকে বারবার ওজরআপত্তি উঠেছে। তবে তার পরেও সে ব্যাপারটি নিয়ে মাথা ঘামাতে রাজি নন পাক সরকার। পাকিস্তানের গভর্নর জামিল আহমেদ অবশ্য স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, ৫ হাজার টাকার নোট ব্যবহার অব্যাহত থাকবে পাকিস্তানে। এখনই তা বন্ধ করার কোনও পরিকল্পনা নেই কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের। সেনেটের সদস্য মহম্মদ আজিজও জানান, এই ধরনের বড় অঙ্কের নোট আসলে দুর্নীতি সহজ করে দেয়। তবে স্টেট ব্যাঙ্কের গভর্নর জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে ৫ হাজার টাকার নোট পাকিস্তানের প্রয়োজন। ফলে তা তুলে নেওয়ার প্রশ্ন নেই।

আরও পড়ুন:“পরবর্তী পাকিস্তান হবে বাংলাদেশ”, কেন বলছেন শেখ হাসিনার পুত্র জয়?

তবে এই অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নোট বদলের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিকে আরও দুর্বল করে দেবে না তো ভিতর থেকে? এমনিতেই দেনায় দেনায় জেরবার পাকিস্তান। বিদেশী শক্তির থেকে তো বটেই, দেশের ব্য়াঙ্কগুলি থেকেও ধার নিতে পিছপা হচ্ছে না পাকিস্তান সরকার। এই পরিস্থিতিতে পলিমার প্লাস্টিকের নোট কি আদৌ সুদিন নিয়ে আসতে পারবে আর্থিক ভাবে ডুবে থাকা পাকিস্তানে? নাকি আরও খারাপ সময়ের জন্যই দিন গুনছে ভারতের এই পড়শি দেশ।

More Articles