আমেরিকার মতো ভারতীয় ব্যাঙ্কও কি ডুবতে পারে? কতটা সুরক্ষিত আপনার টাকা?
Indian Bank : একদিকে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি রয়েছে চাপে, অন্যদিকে কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা, তার ওপর এই ব্যাংক ডুবে যাওয়ার ঘটনা। ভারতীয় ব্যাংক ব্যবস্থাতেও কি এসে পড়বে এর প্রকোপ? ভাবাচ্ছে যেসব প্রশ্ন
রাতারাতি ধস নামল অর্থনীতিতে, ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হওয়ার ঘটনায় কপালে ভাঁজ আমেরিকার। ইতিমধ্যেই সেই আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বের অন্যান্য দেশেও। আমেরিকার মতো ভারতেও এমন ঘটনা ঘটলে কতটা বিপদে পড়তে পারে আমানতকারীরা সেই নিয়ে চলছে পর্যালোচনা। আমেরিকার ‘সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক’-এর ডুবে যাওয়া বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করেছে। সেই আতঙ্কেই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে আমেরিকার ‘সিগনেচার ব্যাংক’ নামে আরও একটি ব্যাঙ্ক ডুবে গিয়েছে। সামনে কী পরিস্থিতি আসতে চলেছে এই জুজু তো রয়েছেই, পাশাপাশি অর্থবছরও শেষ হতে চলেছে ফলে সেই নিয়ে একের পর এক নিয়ম সামনে আসছে। সব মিলিয়ে এখন খবরের শিরোনাম দখল করে আছে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি।
সময়টা ২০০৮ সাল। আমেরিকায় ‘সাবপ্রাইম’ সংকটের জেরে দেউলিয়া হয়েছিল ‘লেম্যান ব্রাদার্স’। সেই ঘটনার রেশ অবশ্য কেটে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। আবারও ১৫ বছর পরে ডুবল ‘সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্ক’, ‘সিগনেচার ব্যাঙ্ক’। একদিকে মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি রয়েছে চাপে, অন্যদিকে কর্মী ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা, তার ওপর এই ব্যাংক ডুবে যাওয়ার ঘটনা। ভারতীয় ব্যাংক ব্যবস্থাতেও কি এসে পড়বে এর প্রকোপ? ভাবাচ্ছে এইসব প্রশ্ন।
আরও পড়ুন - লম্বা লাইনের ঝক্কি ছাড়া কীভাবে ঘরে বসেই জানতে পারবেন প্যান-আধার লিংক আছে কিনা
গোটা বিশ্বেই ব্যাঙ্ক ব্যবস্থা এমনটাই যেখানে আমানতকারীদের আতঙ্ক একটা বড় ভূমিকা পালন করে। আমানতকারীরা যদি একবার এমন আতঙ্কে ভুগতে শুরু করে যে, ব্যাঙ্কে সঞ্চিত অর্থ মোটেই নিরাপদ নয়, যে কোনও মুহূর্তে চোট যেতে পারে সবই, তবে সুরক্ষার অভাবে ভুগবেন তাঁরা। এবং বিয়ে ব্যাংকে বেশি অর্থ জমানো থেকেও বিরত থাকবেন, আর এর ফলে ব্যাংক ব্যবস্থার পক্ষে ব্যবসা চালিয়ে যাওয়া খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। কারণ, আতঙ্কে ভুগে আমানতকারীরা তাদের টাকা তুলতে শুরু করলেই ব্যাঙ্কের ডুবে যাওয়া অনিবার্য হয়। ঠিক যেমনটা ঘটেছে আমেরিকান সিলিকন ভ্যালি এবং সিগনেচার ব্যাংকের ক্ষেত্রে।
যদিও ইতিমধ্যেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বিডেন জনগণকে আশ্বস্ত করেজানিয়েছেন যে, তাদের সঞ্চিত অর্থ নিরাপদ। এমনকী ট্রেজারি বিভাগ, ফেডারেল রিজার্ভ এবং ফেডারেল ডিপোজিট ইন্স্যুরেন্স কর্পোরেশন (FDIC) তাদের সম্মিলিত ঘোষণায় গ্যারান্টি দিয়েছে যে, সিলিকন ভ্যালি ব্যাঙ্কের দেউলিয়া হওয়ার ফলে করদাতাদের কোনও ক্ষতি হবে না। কিন্তু ভারতীয় ব্যাঙ্কের ক্ষেত্রে এমন পরিস্থিতি হলে কী হবে?
ভারতীয় ব্যাঙ্কগুলোর ক্ষেত্রে RBI-এর অনুমোদিত DICGC বা আমানত বীমা এবং ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন, বীমা কভারেজ প্রদান করে। যদি কোনও ভাবে বিপদের মুখে পড়ে ব্যাংক তবে আমানতকারীদের প্রতি ব্যাঙ্কে সর্বোচ্চ ৫,০০,০০০ টাকা পর্যন্ত প্রদান করা হয়, যার মধ্যে স্থায়ী আমানত, সঞ্চয় অ্যাকাউন্ট, পুনরাবৃত্ত আমানত এবং চলতি অ্যাকাউন্ট সবই অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। এখানে, DICGC নীতি সুদ এবং প্রাথমিক উপাদান উভয়ই প্রদান করে বীমা।
আরও পড়ুন - মোটা টাকা ট্যাক্স বাঁচাতে চান? ৩১ মার্চের মধ্যে এই কাজ সারতেই হবে
এই সমস্ত নিয়মের বাইরে থাকা বিষয়গুলি হল, যথা - কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের কোনও আমানত, আন্তঃব্যাঙ্ক রেমিটেন্স, স্টেট ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক যা রাজ্য সমবায় ব্যাঙ্কে জমা করে, ভারতের বাইরে প্রদত্ত অর্থপ্রদানের ফলে বকেয়া যে কোনও পরিমাণ, এবং কোম্পানীর দ্বারা রিজার্ভ ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার পূর্ব অনুমোদন থেকে স্পষ্টভাবে ছাড় দেওয়া যে কোনও অর্থ।
আপনার ব্যাঙ্ক DICGC-এর আওতায় আছে কিনা তা কীভাবে বুঝবেন?
ব্যাঙ্কগুলিকে বীমাকৃত ব্যাঙ্ক হিসাবে মনোনীত করার সময়, ডিআইসিজিসি তাদের মুদ্রিত ফ্লায়ারগুলিও প্রদান করে যাতে কর্পোরেশন তাদের গ্রাহকদের জন্য যে নিরাপত্তা প্রদান করে তার রূপরেখা দিতে পারে। যদি একজন ব্যক্তির একাধিক ব্যাঙ্কে টাকা থাকে, তবে বীমা কভারেজ প্রতিটি ব্যাঙ্কে আমানতের জন্য পৃথকভাবে প্রয়োগ করা হয়।
যদিও এই বিষয়টি সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গেই বিশেষজ্ঞ মহলে একটা বিষয় বারবারই বলা হচ্ছে যে, ভারতের ব্যাঙ্কগুলি আমেরিকার মতো একটি শিল্পকেন্দ্রিক নয়। ভারতের ব্যাংকগুলি মূলত নির্ভরশীল ছোট ছোট আমানতকারীর উপর। তারা কখনওই একসঙ্গে ব্যাঙ্ক থেকে টাকা তুলে নিতে আসে না। শুধু তাই নয় ভারতের কোন ব্যাংকই তাদের আমানতের একটা বড় অংশ সরকারি বন্ডে ঢালে না। ফলে রিজার্ভ ব্যাংকের তরফে সুদ যতই বাড়ানো হোক না কেন রাতারাতি ব্যাংক ডুবে যাওয়ার ঘটনা ভারতবর্ষের ক্ষেত্রে বিরল বলেই জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। সুতরাং অকারণ চিন্তা না করে সমস্ত বীমা সংক্রান্ত নথি। ভালোভাবে যাচাই করে ব্যাঙ্কের স্থায়ী, সঞ্চয় অথবা সেভিংস অ্যাকাউন্টে অর্থ জমালে সাধারণত বড়ো কোনও বিপদের আশঙ্কা নেই।