সব যোগাযোগ বন্ধ! বাংলাদেশে আটকে ভারতের পড়ুয়া ফিরতে পারবেন তো?
Indian Students stuck in Bangladesh: এখনও পর্যন্ত ৫৭২ জন ভারতীয় ছাত্র, ১৩৩ নেপালি ও চার ভুটানি পড়ুয়াকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
বাংলাদেশ উত্তাল। কোটা পদ্ধতির সংস্কার চেয়ে আন্দোলনে নেমেছিলেন পড়ুয়ারা। সেই আন্দোলন দমাতে অভাবনীয় পদক্ষেপ করে হাসিনা সরকার। পড়ুয়া থেকে শুরু করে আমজনতা, প্রাণ যায় ১৫০ জনেরও বেশি মানুষের। ইন্টারনেট যোগাযোগ বন্ধ করে বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা হয় বাংলাদেশকে। মোবাইল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে শুধু বাংলাদেশের নয়, উৎকণ্ঠায় দিন কাটছে এই বাংলার মানুষদেরও। বাংলাদেশে এই মুহূর্তে আটকে রয়েছেন মুর্শিদাবাদের হরিহরপাড়া এক বাসিন্দা। তিনিও পড়ুয়া। অগ্নিগর্ভ বাংলাদেশে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় সবই বন্ধ। সন্তান আটকে রয়েছে প্রতিবেশী দেশে। কোনও খবর না পেয়ে আতঙ্কে তাঁর পরিবার।
ওই পড়ুয়ার নাম নাসিম হাসান বিশ্বাস। কোটা সংস্কার নীতি নিয়ে গত প্রায় এক সপ্তাহ ধরে উত্তপ্ত বাংলাদেশ। এই রক্তক্ষয়ী আন্দোলনের জেরে বিভিন্ন মহাবিদ্যালয়, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ। শতাধিক পড়ুয়া মৃত। এই আতঙ্কের মধ্যেই বাংলাদেশে আটকে থাকা বহু পড়ুয়ার মধ্যে একজন, নাসিম। উৎকণ্ঠায় রয়েছেন তাঁদের পরিবারের মানুষ। ফোনে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যাওয়াতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে দুশ্চিন্তা। হরিহরপাড়ার বাসিন্দা নাসিম হাসান বিশ্বাস ঢাকার ডেলটা মেডিক্যাল কলেজের এমবিবিএস ফাইনাল ইয়ারের ছাত্র। এই অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতিতে তিনি আটকে রয়েছেন ঢাকা বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায়। ওই একই কলেজের ডাক্তারি পড়ুয়া রানিনগরের ইমরুল কায়েসও। তিনিও আটকে রয়েছেন ঢাকা শহরে। নাসিমের পরিবারের দাবি, ঘরে ফেরার জন্য ভারতের এই পড়ুয়ারা বাস পাচ্ছেন না। বিমান পরিষেবা ইতিমধ্যেই বাতিল হয়েছে। ফলে নাসিম, ইমরুলের মতো অনেকেই পড়ে রয়েছেন বিমানবন্দর সংলগ্ন এলাকায়। অনেক আবার ভিড় করছেন বাসস্ট্যান্ডে।
আরও পড়ুন- থমকে আমদানি রপ্তানি! বাংলাদেশে আন্দোলনের জেরে যেভাবে ক্ষতি কয়েক’শ কোটির
ছেলে আদৌ বাড়ি ফিরতে পারবে কিনা এই দুশ্চিন্তায় অসুস্থ হয়ে পড়ছেন নাসিমের মা-ও। ইন্টারনেট বন্ধ। ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। কয়েকশো বার চেষ্টা করে মাত্র একবার কথা হয়েছে ছেলের সঙ্গে! নাসিমের বাবা হাফিজুল ইসলাম বলেন, “ছেলে জানিয়েছে আন্দোলনের উত্তাপের আঁচ তাদের কলেজেও পড়েছে। ওই কলেজের নিরপত্তারক্ষী খুন হয়েছেন। ছেলে বাড়ি ফেরার জন্য বাস পায়নি। প্লেনও পায়নি। ইন্টারনেট সংযোগও নেই। ফলে ঠিক মতো যোগাযোগ করা যাচ্ছে না।"।
নাসিম তাঁর বাবাকে জানিয়েছেন, অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছেন তাঁরা। তবে ঘরে না ফেরা পর্যন্ত আতঙ্ক কাটবে না কিছুতেই। বাংলাদেশে পাঠরত পড়ুয়া ও তার পরিবারের মানুষের প্রতিটি ক্ষণ কাটছে অনিশ্চিত এক আবহে। দিন কয়েক আগেই, পরিস্থিতি যখন চরমে উঠত শুরু করে ভারতের অনেক পড়ুয়াই বাংলাদেশ থেকে ঘরে ফিরে আসেন। তবে এখনও মুর্শিদাবাদ, নদিয়ার অনেক পড়ুয়া আটকে রয়েছেন বাংলাদেশের বিভিন্ন শহরে। মুর্শিদাবাদের সাংসদ আবু তাহের খান বলেছেন, "জেলা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলব। বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীকেও জানাব। ছেলেমেয়েরা যাতে ঘরে ফিরতে পারে তার ব্যবস্থা করা হবে।”
আরও পড়ুন- অগণিত মৃত্যু, সরকারি সম্পত্তি ধ্বংস! শাসক-বিরোধী সংঘর্ষে কতটা ক্ষয়ক্ষতি বাংলাদেশে?
বাংলাদেশে আটকে পড়া পড়ুয়াদের দেশে ফেরানোর চেষ্টা করছে বিএসএফ। চালু হয়েছে হেল্পডেক্স। বিএসএফ সূত্রে খবর, আইসিপি পেট্রাপোল, এলসিএস গেদে, ঘোজাডাঙা এবং মাহাদিপুরে পড়ুয়াদের জন্য আলাদা ডেস্ক করা হয়েছে। এখনও পর্যন্ত ৫৭২ জন ভারতীয় ছাত্র, ১৩৩ নেপালি ও চার ভুটানি পড়ুয়াকে ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। বাংলাদেশ বর্ডার ফোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে। বিএসএফের তরফে জানানো হয়েছে, রাতেও কোনও পড়ুয়ার দল সীমান্তে এলে তাঁদের সাহায্য করা হবে। পেট্রাপোলের ইমিগ্রেশন ডেস্ক এখন সারা দিন-রাত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএসএফ। নিরাপত্তার দিকেও বাড়তি নজর দেওয়া হয়েছে। খোলা হয়েছে মেডিক্যাল ক্যাম্পও।