অন্তর্বর্তী বাজেটের মতোই হতাশা না স্বপ্নপূরণ? কোন কোন দিকে নজর থাকবে নির্মলার পূর্ণাঙ্গ বাজেটে?

Union Budget 2024: তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদি। ২৩ জুলাই, মঙ্গলবার নতুন সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেট। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ চেয়ে রয়েছেন সেই বাজেটের দিকেই।

লোকসভা ভোটে জিতে তৃতীয় বার সরকার গড়েছে বিজেপি। অবশ্য ২০২৪ লোকসভা ভোটে একক সংখ্য়াগরিষ্ঠতা জোটেনি গেরুয়া শিবিরের ভাগ্যে। শরিক দলের সমর্থন নিয়ে তবেই সরকার গড়তে পেরেছেন মোদি। নিয়ম মেনেই ভোটের বছরে ফেব্রুয়ারি মাসে প্রকাশ করা হয় অন্তর্বর্তীকালীন বাজেট। আর সেখানে প্রবল আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে প্রায় কিছুই ঘোষণা করেনি মোদি সরকার। যেখানে ভোটমুখী বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনের কাছে জনগণের প্রত্যাশা ছিল অনেকটাই। সেখানে খানিকটা খালি হাতেই ফিরতে হয়েছিল দেশবাসীকে। বিশেষত আয়কর-সহ একাধিক ক্ষেত্রে বেশ কিছু ছাড়ের প্রত্যাশায় ছিলেন মানুষ। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন তখন বলেছিলেন, ভোটে জিতে সরকার গড়েই পূর্ণাঙ্গ বাজেট প্রকাশ করা হবে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেলেও সরকার গড়েছে বিজেপি। তৃতীয়বার ক্ষমতায় এসেছেন নরেন্দ্র মোদি। ২৩ জুলাই, মঙ্গলবার নতুন সরকারের পূর্ণাঙ্গ বাজেট। স্বাভাবিক ভাবেই মানুষ চেয়ে রয়েছেন সেই বাজেটের দিকেই। কোন কোন খাতে কী কী নয়া ঘোষণা করতে চলেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন।

এ নিয়ে সপ্তম বার বাজেট ঘোষণা করতে চলেছেন নির্মলা সীতারমন। যা ভারতের রাজনীতির ইতিহাসে রেকর্ড। ২০২৪ অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে মোট ১১,১১,১১১ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছিল। যা নাকি দেশের জিডিপির প্রায় ৩.৪ শতাংশ। সেই বাজেটে ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষে জিডিপি বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৭.৩ শতাংশ। তবে তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের ঘোষণার সঙ্গে মেলেনি। সেই বাজেট ঘোষণায় রাজস্ব সংগ্রহ ও জিএসটি সংগ্রহের ক্ষেত্রে সাফল্যের জন্য ভারতের অর্থনীতি আরও মজবুত হয়েছে বলেই দাবি করেছিলেন অর্থমন্ত্রী। ২০২৩-এর ডিসেম্বরে জিএসটি সংগ্রহ করা হয়েছে ১.৬৫ লক্ষ কোটি টাকা। এ নিয়ে সাতবার জিএসটি সংগ্রহ ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা ছাড়াল বলে জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

আরও পড়ুন: আসছে বাজেট, নির্মলার থেকে কী কী চাইছেন মধ্যবিত্ত?

২০৪৭ সালের মধ্যে 'বিকশিত ভারত' গড়ে তোলার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছে ভারত। তার মধ্যে ছিল একাধিক উদ্যোগ ও প্রকল্পের কথা। 'সবকা সাথ সবকা বিকাশ' মন্ত্রে ব্রতী মোদি সরকার গত দশ বছরে ২৫ কোটি মানুষকে দারিদ্রসীমার উপরে তুলে এনেছে বলেও দাবি করা হয়ে কেন্দ্রীয় বাজেটে। ভোটের বাজারেও মোদির বুকে বেশ কয়েকবার সেই দাবির কথা শোনা গিয়েছে। অন্তর্বর্তীকালীন বাজেটে নির্মলা দাবি করেন, 'প্রধানমন্ত্রী মুদ্রা যোজনা'র আওতায় ৪৩ কোটি প্রাপককে ২২.৫ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দিয়েছে সরকার। এর মধ্যে রয়েছেন ৩০ কোটি মহিলা শিল্পোদ্যোগীও। ভারতের অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে পূর্বাঞ্চল এবং সেখানকার মানুষের উন্নয়নের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার কথাও বলেছিলেন নির্মলা সীতারমন। তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় (গ্রামীণ) ৩ কোটি বাড়ি তৈরির লক্ষ্যমাত্রা প্রায় পূরণ হওয়ার পথে। আগামী পাঁচ বছরে আরও ২ কোটির বেশি বাড়ি তৈরির কাজ হাতে নেওয়া হবে। একইভাবে, ১ কোটি বাড়ির ছাদে সৌরবিদ্যুৎ বসানোর কথাও জানান তিনি। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্পদ যোজনায় ৩৮ লক্ষ কৃষক উপকৃত এবং ১০ লক্ষ কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। প্রযুক্তিতে দক্ষ তরুণদের কাছে সোনালি যুগ তৈরি করার কথা জানিয়ে নির্মলা জানান, ৫০ বছরের জন্য সুদমুক্ত ঋণ প্রদানের লক্ষ্য নিয়ে অন্তত ১ লক্ষ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গড়ছে মোদি সরকার।

এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ, খনিজ পদার্থ এবং সিমেন্টের ক্ষেত্রে রেলের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক করিডর গড়ে তোলার কথা জানিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী। সেইসঙ্গে, বন্দর যোগাযোগ করিডরের কথাও জানান তিনি। মানুষ যাতে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে রেল সফর করতে পারেন, সেজন্য ৪০ হাজার সাধারণ বগিকে বন্দে ভারত-এর উপযোগী করে তোলার কথা জানিয়েছিলেন নির্মলা বাজেটের সময়। একই সঙ্গে অসামরিক বিমান পরিবহণের ক্ষেত্রে বিমানবন্দরের সংখ্যা দ্বিগুণ করার কথাও ঘোষণা করা হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, দেশে এখন ৫১৭টি নতুন রুটে ১.৩ কোটি যাত্রী যাতায়াত করেন। যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে ১ হাজারের বেশি নতুন বিমান তৈরির বরাতের কথাও জানিয়েছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।যত দিন বাড়ছে, ভারতে জনবিস্ফোরণ ঘটছে। ইতিমধ্যেই জনসংখ্যার নিরিখে ভারত এক নম্বরে। আগামী দিনে এই জনসংখ্যা বৃদ্ধির মতো চ্যালেঞ্জের মোকাবিলায় উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি তৈরির কথাও ঘোষণা করেছিলেন দেশের অর্থমন্ত্রী। সে সময়েই তিনি জানিয়েছিলেন, জুলাইয়ের পূর্ণাঙ্গ বাজেটে ‘বিকশিত ভারত’-এর বিস্তারিত রোডম্যাপ তুলে ধরবে কেন্দ্র সরকার।

তবে এই সব ঘোষণা থাকলেও যে ক্ষেত্রটি জুড়ে মানুষের প্রত্যাশা ছিল তুঙ্গে, সেই সংক্রান্ত কোনও ঘোষণা আসেনি অর্থমন্ত্রকের তরফে। কর-কাঠামোয় নতুন কোনও বদলের কথাও সামনে আনা হয়নি সেই বাজেটে। আমদানি শুল্ক থেকে শুরু করে প্রত্যক্ষ-অপ্রত্যক্ষ করও একই রেখে দেওয়া হয়েছে। তবে স্টার্ট আপ এবং লগ্নির ক্ষেত্রে করের বিষয়ে বেশ কিছু সুবিধা দেওয়া হয়েছে। তবে পূর্ণাঙ্গ বাজেটে করদাতাদের জন্য বড় ঘোষণা থাকতে পারে, এমন আকার ইঙ্গিতে বুঝিয়েছিলেন নির্মলা। মঙ্গলবারের বাজেট নিয়ে মানুষের আগ্রহ কিঞ্চিত বেশি। কী কী নতুন ঘোষণা থাকতে পারে নির্মলার পূর্ণাঙ্গ বাজেট ঘোষণায়?

২০২৩-২৪ সালের অর্থনৈতিক সমীক্ষা বলছে, গত এক দশকে উৎপাদন খাতে কর্মসংস্থান তৈরি হওয়ার সুযোগ ক্রমশই কমেছে। বহু কৃষকই কৃষিকাজ ছেড়ে দিচ্ছেন। আর তার জন্য দায়ী ঋণব্যবস্থা বলেই দুষেছেন অনেকে। এ দেশের কর্মশক্তি মোটি ৫৬.৫ কোটি বলে অনুমান করা হচ্ছে। যার মধ্যে ৪৫ শতাংশেরও বেশি অংশ রয়েছেন কৃষিতে। ১১.৪ শতাংশ উৎপাদনে, ২৮.৯ শতাংশ পরিষেবায় ও ১৩ শতাংশ নির্মাণকাজের সঙ্গে যুক্ত বলে জানা গিয়েছে। দেশের সরকারের কাছে কর্মসংস্থান তৈরি করাটাই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। কারণ যে ভাবে দেশে বেকারত্ব বাড়ছে, তাতে তা যথেষ্ট দুশ্চিন্তার বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল। এই পরিস্থিতিতে কর্মসংস্থান তৈরি নিয়ে কী কী ঘোষণা থাকে নির্মলার বাজেটে, সে দিকে চোখ থাকবে দেশের।

আরও পড়ুন: অন্তর্বর্তী বাজেটে মধ্যবিত্তের হাতে পেনসিল? আয়কর নিয়ে যা জানালেন নির্মলা

ইকোনমিক সার্ভে অনুযায়ী এ দেশের জনসংখ্যার প্রায় ৬৫ শতাংশের বয়স ৩৫ বছরের নীচে। যাদের মধ্যে প্রায় ৫১ শতাংশেরই প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা শেখ করার পরে দেশের আধুনিক অর্থনীতির চাহিদা অনুযায়ী কর্মদক্ষতা থাকে না। যদিও গত দশ বছরে এই সংখ্যাটা বেড়েছে ৩৪ শতাংশ বেড়েছে বলেই জানা গিয়েছে। অর্থনীতির প্রবৃদ্ধির জন্য এই সংখ্যাটা আরও বাড়ানো প্রয়োজন। তার জন্য সরকার কী ধরনের উদ্যোগ নিতে চলেছে, সেটাও একটা ভাবার মতোই বিষয়। ভোটের আগে উস্কে ওঠা কৃষিবিক্ষোভ বেশ বিপাকে ফেলেছিল মোদি সরকারকে। ক্ষমতায় এসেই তড়িঘড়ি মোদি কিসাননিধি সম্মান প্রকল্পে প্রায় ১০ কোটি কৃষককে ২০ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করেন। তবে সেটুকই কি যথেষ্ট? কৃষির কাঠামোগত সমস্যাগুলিই অর্থনীতিতে বড়সড় প্রভাব ফেলে বলেই মনে করা হয়। একই সঙ্গে খাদ্যদ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধিও একটা সমস্যা। সেই সব সমস্যার কোনও হাল কি থাকতে চলেছে নির্মলার পূর্ণাঙ্গ বাজেটে? সে দিকেও নজর থাকবে দেশবাসীর।

সেই সঙ্গে করদাতাদের জন্য ছাড়ের ব্যবস্থা, এবং নয়া অর্থবর্ষে কোন কোন জিনিসের দাম কমতে চলেছে, কোন কোন জিনিসেরই বা দাম বাড়বে, তা জানতেও অধীর মানুষ। সেই সমস্ত রহস্যের উপর থেকেই পর্দা উঠবে ২৩ জুলাই। এখন প্রশ্ন, দেশের মানুষের প্রত্যাশা কি আদৌ পূরণ করতে পারবে নয়া সরকার? নাকি অন্তর্বর্তী বাজেটের মতোই খালি হাতেই ফিরতে হবে দেশবাসীকে পূর্ণাঙ্গ বাজেটেও, উত্তর মিলবে শীঘ্রই।

More Articles