প্রেসিডেন্ট ভোটে লড়ছেন না বাইডেন! কেন এমন সিদ্ধান্ত মার্কিন প্রেসিডেন্টের?

US Presidential Election 2024: মাত্র চার মাস পরেই ভোট। তার আগেই প্রেসিডেন্টের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন জো বাইডেন। কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত।

আমেরিকায় প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনের আর দেরি নেই বিশেষ। নভেম্বরে ভোট। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট ভোটকে কেন্দ্র করে সরগরম হয়ে উঠেছে আমেরিকার রাজনীতি। দিন কয়েক আগেই রিপাবলিকান দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের কান ফুঁড়ে বেরিয়ে যায় বন্দুকবাজের গুলি। সেই ঘটনা নিয়ে হইচইয়ের মধ্যেই এবার প্রেসিডেন্ট ভোট থেকে সরে দাঁড়ানোর কথা ঘোষণা করলেন ডেমোক্র্যাট দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জো বাইডেন। দেশবাসীর উদ্দেশে লেখা একটি খোলা চিঠিতে নিজেই সেই সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন দেশের বর্তমান প্রেসিডেন্ট।

মাত্র চার মাস পরেই ভোট। তার আগেই প্রেসিডেন্টের দৌড় থেকে নিজেকে সরিয়ে নিলেন জো বাইডেন। কেন হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত। স্বাভাবিক ভাবেই মার্কিনি রাজনীতিতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে জল্পনা। ৮১ বছর বয়সী বাইডেনের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বেগ ছিল গোড়া থেকেই। তা সত্ত্বেও তাঁকেই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীপদে নির্বাচন করা হয়েছিল দল ডেমোক্র্যাটের তরফে। সম্প্রতি আমেরিকার প্রেসিডেন্সিয়াল বিতর্কে অংশ নেন বাইডেন। সেখানে তাঁর আচরণ যেন কিছুটা অসংলগ্নই ঠেকে বাইডেনের। এমনকী ট্রাম্পের একাধির বক্তব্যের বিরুদ্ধেই ঠিকমতো যুক্তি সাজিয়ে উঠতে পারেননি তিনি। যা থেকে শুরু হয় ঘরে-বাইরে জোরদার সমালোচনা।

আরও পড়ুন: বন্দুকের নলই আমেরিকায় ক্ষমতার উৎস

প্রশ্ন উঠে যায়, আমেরিকার মতো দেশ নিয়ন্ত্রণেক ভার বাইডেনের মতো অশীতিপর বৃদ্ধর হাতে কতটা সুরক্ষিত। পাশাপাশি আমেরিকার মানুষ কি ততটাই ভরসা রাখতে পারবেন বাইডেনে। এসব নানা কথা উঠতে থাকে ডেমোক্র্যাট পার্টির অন্দর থেকেই। তার পরেই সামনে এল জো বাইডেনের এই সিদ্ধান্ত। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দল এবং নিজের পরাজয় এড়াতে লড়াই থেকে সরে দাঁড়ালেন বাইডেন। আমেরিকায় দৈনিক ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’-এর প্রতিবেদন অনুসারে, তাঁকে নির্বাচনী ময়দান থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন ওবামাও। তার পরেও বাইডেন দাবি করেন, তিনি প্রেসিডেন্ট পদে লড়তে এবং জিতলে আরও পাঁচ বছর এই দায়িত্ব পালন করতে সক্ষম। দলের মধ্যে ঐক্য এবং সংহতির ডাক দিয়েছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট। তাঁর দাবি, তাঁর স্বাস্থ্যের সম্পর্কে যে রটনা চলছে, তা রিপাবলিকানদের ‘চক্রান্ত’। বর্তমানে কোভিড সংক্রমণ ধরা পড়েছে বাইডেনের। তিনি গৃহবন্দি রয়েছেন। এই ডিবেটের পরেই, নিউইয়র্ক টাইমস তার সম্পাদকীয়তে লিখেছিল যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে তাঁর দেশের স্বার্থেই এই নির্বাচনের দৌড় থেকে সরে আসা উচিত। এর পরে, ডেমোক্র্যাট সমর্থকদেরও একাংশ বাইডেনকে সরে আসার দাবি জানিয়েছিল। কিন্তু বাইডেন এবং তাঁর প্রচার কমিটি তখন বলেছিল যে, তিনি পরাজয় মেনে নিতে প্রস্তুত নন। আবার ভোটে দাঁড়াবেন। কিন্তু শেষমেশ স্বাস্থ্যের কারণে সরে দাঁড়ালেন বাইডেন।

Biden Drops Out Of Re-election Battle With Trump, Endorses Kamala Harris

 

নিজের এক্স হ্যান্ডেলে বাইডেন লিখেছেন, “দেশের স্বার্থে এবং দলের স্বার্থে আমার সরে দাঁড়ানো প্রয়োজন। আমার মেয়াদের বাকি সময়টুকু একনিষ্ঠ ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করে যেতে চাই।” এর পাশাপাশি ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা এবং তাঁর সঙ্গে কাজ করা সকলকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাইডেন। আগামী সপ্তাহে দেশবাসীকে বিস্তারিত ভাবে তাঁর এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে জানাবেন বলেও জানিয়েছেন বাইডেন। কমলা হ্যারিসকে বাইডেন নিজের সমর্থন জানাতেই তা নিয়ে কটাক্ষ করেছেন রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি দাবি করেন, বাইডেনকে হারানোর থেকে কমলা হ্যারিসকে হারানো তাঁর জন্যে বেশি সহজ কাজ হবে। মার্কিন সংবাদ চ্যানেল সিএনএন-কে বাইডেন প্রসঙ্গে ট্রাম্প বলেন, 'আমেরিকান ইতিহাসের সবচেয়ে জঘন্য প্রেসিডেন্ট বাইডেন।' ট্রাম্প নিজের সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্প বাইডেনকে কটাক্ষ করে এ-ও লেখেন, 'কূটবুদ্ধি জো বাইডেন রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য উপযুক্ত ছিলেন না। অবশ্যই তিনি আমেরিকার সেবা করার জন্য উপযুক্ত নন - এবং কখনওই তিনি উপযুক্ত ছিলেনও না! …তাঁর নেতৃত্বের কারণে আমরা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। তবে তিনি যে ক্ষতি করেছেন, খুব দ্রুত আমার এর প্রতিকার করব। আমেরিকাকে আবার মহান বানাব!'

আরও পড়ুন:বন্দুকের জয়গান গেয়েছে যে, বন্দুক আজ তাকেই তাক করছে

স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে, বাইডেন যদি না হন, তাহলে কে? ডেমোক্র্যাট শিবিরের হয়ে কে দাঁড়াচ্ছেন তবে আমেরিকার ভোটে? আর সেই আলোচনায় বারবার উঠে এসেছে যে নামটি, তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত কমলা হ্যারিস। বাইডেন পর্যন্ত কমলাকে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের জন্য সমর্থন জানিয়েছেন। ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসই প্রেসিডেন্ট পদের জন্য উপযুক্ত বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। তবে কমলা একা নন, একই সঙ্গে লড়াইয়ের ময়দানে রয়েছেন প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার স্ত্রী মিশেল ওবামা এবং ক্যালিফর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসমও। তবে শেষপর্যন্ত কে থাকতে চলেছেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে ডেমোক্র্যাটদের হয়ে, তা স্পষ্ট হতে হতে আরও কয়েক দিন।

More Articles