৫ হাজার ভারতীয়কে 'সাইবার দাস' বানিয়ে রেখেছে কম্বোডিয়া! সামনে এল যে ভয়ঙ্কর তথ্য
Cyber-Slavery: গত মার্চ মাসেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, অন্তত ৫ হাজার ভারতীয়কে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখা হয়েছে কম্বোডিয়ায়। এবং তাঁদের দিয়ে অনবরত সাইবার দাসত্ব করানো হচ্ছে।
ভালো চাকরি, অতিরিক্ত আয়, পরিবারকে আরও একটু ভালো রাখার চেষ্টায় দেশ থেকে হাজার হাজার যুবক বিদেশে ছোটেন প্রতিবছর। সেখানে গিয়ে বিভিন্ন সময় তাঁদের বিভিন্ন রকম হেনস্থা, প্রতারণার ফাঁদেও পড়তে হয়। সর্বস্বান্ত হয়ে যান বহু। কিছুদিন আগেই খবর এসেছিল, কাজের লোভ দেখিয়ে বহু ভারতীয় যুবককেই রাশিয়ায় নিয়ে গিয়ে যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হয়েছে। এবার সামনে এল আরও এক ভয়ঙ্কর ঘটনা। কাজ, ভালো উপায়ের টোপ দিয়ে অজস্র ভারতীয়কে কম্বোডিয়া নিয়ে গিয়ে তাঁদের দিয়ে সাইবার স্লেভারি বা সাইবার দাসত্ব করানোর অভিযোগ উঠেছে প্রতারকদের বিরুদ্ধে।
গত মার্চ মাসেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে জানানো হয়েছিল, অন্তত ৫ হাজার ভারতীয়কে ইচ্ছার বিরুদ্ধে আটকে রাখা হয়েছে কম্বোডিয়ায়। এবং তাঁদের দিয়ে অনবরত সাইবার দাসত্ব করানো হচ্ছে। কী এই সাইবার স্লেভারি বা দাসত্ব? জোর করে আটকে রাখা ওই সব ভারতীয়দের সাইবার অপরাধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে অন্তত ৫০০ কোটি টাকার জালিয়াতি হয়েছে ভারত থেকে, এমনটাই জানাচ্ছে নয়াদিল্লি। নিশানা আসলে ভারত। আর সেখানে সাইবার অপরাধ সংগঠিত করার জন্য বন্দি করা হয়েছে চাকরির লোভে কম্বোডিয়ায় পাড়ি দেওয়া ভারতীয়দেরই। শুধু কম্বোডিয়াই নয়,মায়ানমার, লাওসের মতো দেশগুলিতেও এই ধরনের অপরাধচক্র সক্রিয় বলে দাবি করেছে স্বরাষ্ট্র, বিদেশ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক।
আরও পড়ুন: এআই প্রয়োগে বাড়ছে সাইবার ক্রাইম: কতটা বিপদের মুখে আপনি?
সম্প্রতি কম্বোডিয়ায় বন্দি হওয়া ভারতীয়কে দেশে ফেরাতে কম্বোডিয়া সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ দেশের সরকার। ইতিমধ্যেই কথা হয়েছে দূতাবাসের সঙ্গেও। গত মে মাসেই ফাঁদে পড়া ৩৬০ জন ভারতীয়কে দেশে ফেরানো হয়। সম্প্রতি আরও ১৪ জন ভারতীয়কে দেশে ফেরাতে কম্বোডিয়ার দূতাবাসের সঙ্গে সমস্ত আইনি প্রক্রিয়া শেষ করেছে নয়াদিল্লি। এই প্রতারণার ফাঁদ ঠেকাতে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল ভারত সরকার। যেখানে বিভিন্ন মন্ত্রকের প্রতিনিধিরা ছিলেন। ছিলেন সিবিআই, এনআইএ ও সিবিআইসি-র প্রতিনিধিরাও।
ইন্ডিয়ান সাইবার ক্রাইম কো অর্ডিনেশন সেন্টারের সিইও রাজেশ কুমার জানিয়েছেন, দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলি থেকে উঠে আসা এমন অসাধু কাজকর্ম রুখতেই কাজ করছে এই কমিটি। লোভনীয় চাকরির টোপ দিয়ে বহু ভারতীয়কে কম্বোডিয়া নিয়ে যাওয়া হত। সেখানে তাঁদের কার্যত ‘সাইবার স্লেভ’ বানানো হত। কম্বোডিয়া পৌঁছে তাঁদের থেকে ছিনিয়ে নেওয়া হত পাসপোর্ট। এরপর জোর করে প্রতারণার জাল ফেলতে বলা হত। অনলাইনে ভারতীয়দের প্রতারণা করার জন্য বাধ্য করা হত তাঁদের। দিনে প্রায় ১২ ঘণ্টা করে কাজ করানো হয় তাঁদের দিয়ে। কাজে একটু এদিক-ওদিক হলেই মেলে কঠিন শাস্তি। খেতে পর্যন্ত দেওয়া হয় না তাদের। ফেসবুকের মতো সোশ্যাল মিডিয়া খুঁজে খুঁজে সম্ভাব্য নিশানা ঠিক করতে হয় তাঁদের। যাঁরা সহজেই পা দেবে এই সাইবার অপরাধীদের ফাঁদে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নিশানায় থাকে মেয়েরা।
আরও পড়ুন: ডিজিটাল ভারতে সাইবার জালিয়াতির বাড়বাড়ন্ত, দেশের নয়া জামতাড়া এবার ভরতপুর
কম্বোডিয়াতে কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো এ কাজে সাহায্য করেছে নয়াদিল্লিতে। এই চক্র থেকে উদ্ধারের পর ভারতীয় ওই সব শ্রমিকদের নিজেদের দায়িত্বে রাখে তারাই। কম্বোডিয়ায় ভারতীয় নাগরিকদের জনকল্যাণমূলক কমিটির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে ভারত সরকার। গত বছর ৩১ ডিসেম্বর এক কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীকে ৬৭ লক্ষ টাকার প্রতারণা করে সাইবার অরকাধীরা। সেই ঘটনা গ্রেফতার হয়েছিল আট জন। যারা কম্বোডিয়ায় মানুষপাচারের সঙ্গে যুক্ত বলে জানতে পেরেছিল পুলিশ। সেই সূত্র ধরে তদন্ত করতে করতেই এই সাইবার দাসত্ব ও ভারতীয়দের ব্যবহারের মতো অপরাধের উপর থেকে পর্দা উঠতে থাকে। কম্বোডিয়ায় যে বিপুল সংখ্যক ভারতীয়কে আটকে রেখে এই অপরাধ সংগঠিত করানো হচ্ছে, তা-ও পরিষ্কার হতে থাকে তখনই।