গোপনে প্রস্তুত করা হয় চকলেট, ৭৭ বছর পেরিয়ে এসেও যেভাবে বাজার ধরে রাখল ‘ফেরেরো রোচার’

Ferrero Rocher : চকলেট জগতে পরিচিত সদস্য ফেরেরো রোচার, কীভাবে দিনে দিনে এত জনপ্রিয় হয়ে উঠল এটি?

ফেরেরো রোচার, চকলেট জগতের এক পরিচিত নাম। বেশ পুরনো সদস্যও বটে। সোনালি রঙের রাংতায় মোড়া গোলাকার এই চকলেটের স্বাদ এখন বিশ্বজুড়ে। এদেশেও যথেষ্ট জনপ্রিয় এই চকলেটের স্বাদ। তবে এর প্রথম শুরুটা অবশ্য হয়েছিল ইতালিতে। আজ থেকে প্রায় ৭৫ বছরেও বেশি সময় আগে। বর্তমানে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা অজস্র চকলেটের ভিড়ে ফেরেরো রোচার চকলেটের লোগোটি বিলাসবহুল চকোলেট ব্র্যান্ড হিসেবে যথেষ্ট জনপ্রিয়। ফেরেরো রোচার হল ফেরেরো কোম্পানির তৈরি অন্যতম পণ্যগুলির মধ্যে একটি। চকলেট মানেই সম্পর্কের মধ্যে একটা নতুন মিষ্টতা প্রদান, ফেরেরোও তার ব্যতিক্রম নয়।

যদিও চকলেট প্রস্তুতকারক হিসেবে পরিচিতি লাভ করার অনেক আগে থেকেই ডেজার্ট কোম্পানি হিসেবে জনপ্রিয়তা পাকা করে নিয়েছিল ফেরেরো কোম্পানি। ১৯৪৬ সালে ইতালিতে প্রথম আনুষ্ঠানিক ভাবে পথ চলা শুরু করে এই বিশেষ চকলেট। ইতালীয় ব্র্যান্ড চকলেট এবং হ্যাজেলনাট, এই দুই ধরন হিসেবে কম দিনের মধ্যে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে শুরু করে “ফেরেরো”। পাশাপাশি কিন্ডার সারপ্রাইজ, নুটেলা এবং কিন্ডার বুয়েনোর মতো অন্যান্য সুপরিচিত আইটেমগুলিও একে একে বাজারে আনতে শুরু করে তারা। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে উপহার হিসেবে অনেকেই চকলেটকে বেছে নেন, আর সেই সূত্রেই মিষ্টি মুখের জগতে এক আইকন হয়ে উঠেছে ফেরেরো রোচার।

আরও পড়ুন - ২০০ বছর আগেও ছিল ‘চকলেট ডে’-এর রেওয়াজ, ইতিহাস জানলে অবাক হবেন আপনিও

ফেরেরো কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা পিট্রো ফেরেরো প্রথম সাধারণ হ্যাজেলনাট এবং কোকোর অনন্য ক্রিম তৈরি করে সারা ইতালিতে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাঁর পুত্র মিশেল ফেরেরো, বাবার দেখানো পথ অনুসরণ করে ব্যবসাকে আরও সম্প্রসারিত করার কথা ভাবেন। তিনিই প্রথম বাজারে নিয়ে আসেন বিশেষ ফেরেরো রোচার চকলেট ব্র্যান্ডটি। পরবর্তীতে ১৯৭৯ সাল নাগাদ মিশেলের হাত ধরে ব্যবসা আরও ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ইতালি থেকে ইউরোপের অন্যান্য অংশেও প্রথমবারের মতো ফেরেরো রোচার চালু করেন তিনিই। যদিও মাঝে লেবেল প্রিন্টিং এবং ম্যানুফ্যাকচারিং সংক্রান্ত সমস্যার কারণে প্রাথমিক লঞ্চের পরে উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বেশ কিছুদিন।

তবে সবথেকে মজার বিষয় হল, এই বিশেষ চকলেট তৈরির সমস্ত প্রক্রিয়াই বেশ গোপন। যাতে সহজে কেউ তা অনুকরণ করতে না পারে। শুধু তাই নয়, উৎপাদনের সময় কোনও নোটবুক বা স্মার্টফোন ব্যবহারের অনুমতিও দেওয়া হয় না। খুব কমজনই এই বিশেষ উৎপাদন প্রক্রিয়াটি অন্বেষণ করার সুযোগ পেয়েছেন। চকলেট তৈরির মূল প্রক্রিয়াটি শুরু হয় একটি চকোলেট হ্যাজেলনাট ক্রিম দিয়ে ভরা ওয়েফারের ফ্ল্যাট শীট দিয়ে, যা পিট্রো রোচার দ্বারা প্রবর্তিত হয়েছিল। এরপর ওই চকলেটকর বলার মতো আকৃতি দেওয়ার জন্য অতিরিক্ত ওয়েফার যোগ করার আগে ক্রিমটি একটি হ্যাজেলনাটের অংশের সাথে যোগ করা হয়। সম্পূর্ণ ত্রিস্তরীয় চকোলেটটি দুধের চকোলেট, কাটা হ্যাজেলনাটের একটি স্তর এবং চকলেটের আরেকটি স্তর দিয়ে আচ্ছাদিত থাকে।

আরও পড়ুন - মায়া সভ্যতার মানুষও চকোলেট খেত! কেমন স্বাদ ছিল? কতটা বদলেছে কয়েক হাজার বছরে?

নামটি ফরাসি হলেও, ফেরেরো রোচার চকোলেটটি মূলত ইতালীয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ফেরেরো পরিবার ইতালিতে প্রথম মিষ্টির নতুন কোম্পানি তৈরি করেন। নাম ফেরেরো। পরে সেই কোম্পানিই নিয়ে আসে ফেরেরো রোচার চকোলেট।এর লোগো থেকে শুরু করে সুন্দর সোনার ফয়েল যা দিয়ে চকলেটগুলিকে মুড়িয়ে পরিবেশন করা হয়, সবকিছুর মধ্যেই রয়েছে একটা বিশেষত্ব। যা সহজেই ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে সক্ষম। শুধু তাই নয় এই বিশেষ ধরনের প্যাকেজিং ব্র্যান্ডের সামগ্রিক চিত্রকে শক্তিশালী করতেও সহায়তা করে। জানা যায়, এই বিশেষ চকলেটটির নামকরণ করা হয়েছিল লর্ডেস রোমান ক্যাথলিক মন্দিরের একটি শিলার নাম অনুসারে। “Rocher” নামের অর্থ ফরাসি ভাষায় “শিলা” বা “বোল্ডার”, যা চকোলেটের অনন্য গোল আকৃতিকে চিহ্নিত করে। বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়ে ফেরেরো রোচার চকোলেটটির জনপ্রিয়তা আকাশছোঁয়া। এর পিছনে অবশ্য একটা বড় ভূমিকা রয়েছে কোম্পানির সতর্ক বিজ্ঞাপন এবং ব্র্যান্ডিং কৌশলের। ক্রিসমাসের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এটি। আজ, সারা বিশ্ব জুড়ে বিক্রি হয় এই চকলেট। বিলাসবহুল উপহার হিসেবেও অনেকে দেখেন ফেরেরো রোচারকে।

বছরের পর বছর ধরে চকলেট জগতে আইকনিক নাম হয়ে উঠেছে ফেরেরো রোচার। পাশাপাশি এর বিশেষ লোগোটিও বজায় রেখেছে কোম্পানির ঐতিহ্য এবং ইতিহাস। যা সময়ের সঙ্গে ব্যবসার চেহারাকে আরও উন্নত করতে সাহায্য করে। আজ, বিশ্বব্যাপী বিলাসবহুল চকলেট হিসেবে প্রথম সারিতে আসে এই চকলেটের নাম। আজ এতগুলো বছর পেরিয়ে এসেও অজেয় ফেরেরো রোচার।

More Articles