নারীশ্রমের মূল্য নিয়ে অমূল্য কাজ! নোবেল-অর্থনীতি মঞ্চের কুর্নিশ সেই ক্লদিয়া গোল্ডিনকে

Nobel Prize in Economics 2023, Claudia Goldin: বিশ্বজোড়া শ্রমবাজারের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন নারীরা। আর তাঁদের পারিশ্রমিক নিয়ে যে বিশ্বজোড়া বৈষম্য সেই ব্যাপারটিকেই নিজের গবেষণায় তুলে ধরেছেন ক্লদিয়া গোল্ডিন।

অক্টোবর মানে যেমন উৎসবের মাস, নোবেল-ঘোষণার মাসও বটে। ইতিমধ্যেই প্রায় সব কটি বিভাগে নোবেল ঘোষণা সম্পূর্ণ। বাকি ছিল শুধু অর্থনীতি। পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, চিকিৎসা, সাহিত্য এবং শান্তির পরে সোমবার সামনে এল নোবেল-অর্থনীতির ঘোষণাও। এই বিশেষ বিভাগের নোবেল পুরস্কারটি ঘিরে বাঙালিদের প্রতিবছর আলাদা রকমের আগ্রহ থাকে। হবে না-ই বা কেন! এর আগে দু-দু'বার অর্থনীতির নোবেল ব্যাগস্থ করেছে ভারত। তবে এ বছর অর্থনীতির নোবেল কিন্তু আমেরিকার। ২০২৩ সালের অর্থনীতির নোবেল পুরস্কারটি জিতে নিয়েছেন মার্কিন অর্থনীতিবিদ ক্লদিয়া গোল্ডিন। অর্থনীতি ক্ষেত্রে তাঁর বিশেষ অবদানকে সম্মানিত করেছে নোবেল মঞ্চ।

যে বিষয়টির জন্য নোবেল পেয়েছেন ক্লদিয়া, সেটি চমকপ্রদ। প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই নারীদের উঠে আসার জন্য অনেকটা করে কালঘাম ফেলতে হয়েছে। সেখানে মহিলা শ্রমিকদের লড়াইয়ের কথাটা যে ব্রাত্য থেকে যাবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, তাতে আর নতুন কথা কি! কিন্তু সেই ব্রাত্যজনের লড়াইয়ের কথাটাই নিজের গবেষণায় তুলে ধরেছেন ক্লদিয়া। আর সেই কাজই তাঁকে এনে দিয়েছে অনোন্য সম্মান।

আরও পড়ুন: নারীর অধিকারের লড়াইয়ে বারবার জেল, সেই অদম্য নার্গিসকেই এবার শান্তির নোবেল

অর্থনীতিতে নোবেল প্রাপকদের ইতিহাসে মহিলা অর্থনীতিবিদদের সংখ্যাও হাতে গোনা। ২০০৯ সালে এলিনোর ওস্ট্রোম নামে এক মার্কিন অর্থনীতিবিদ অর্থনীতিতে নোবেল পান। সেই প্রথম নোবেল অর্থনীতি পুরস্কারের ইতিহাসে খাতা খোলেন নারীরা। ২০১৯ সালে অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায় ও মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে যৌথভাবে নোবেল পেয়েছিলেন এস্থার ডাফলো। আর তার পরে ২০২৩। ফের নোবেল পুরস্কার পেলেন কোনও মহিলা অর্থনীতিবিদ। একক ভাবে নোবেল বিজয়ী নারী হিসেবে ক্লদিয়া দ্বিতীয়।

Claudia Goldin wins Nobel Prize in Economics for work on women’s labour market outcomes

বিভিন্ন ক্ষেত্রে মহিলা শ্রমিকদের অবদান ও তাঁদের উপার্জন নিয়েই গবেষণা ক্লদিয়ার। কাজ এক, পরিশ্রম এক। শারীরিক এবং মানসিক ধকলও এক। তবু আজও বহু ক্ষেত্রেই নারী ও পুরুষের বেতনের দূরত্ব থেকে যায় যোজনের। ঠিক কী কারণে এই বেতনবৈষম্য। তারই তত্ত্ব তালাশ করেছেন ক্লদিয়া। তাঁর বিষয় অর্থনীতি হলেও নারীসাম্য ও সামাজিক পরিস্থিতির দিকেই ঝুঁকে তাঁ গবেষণা। আসলে অর্থনৈতিক কাঠামোর উপরেই দাঁড়িয়ে থাকে কোনও একটি দেশ, দেশের সামাজিক অবস্থা। তাই অর্থনীতিকে সমাজ থেকে সরিয়ে এনে দেখা কঠিন। আর ক্লদিয়ার বিশেষত্ব এখানেই যে তিনি এমন একটি বিষয় তুলে এনেছেন, যা নিয়ে এত বছরে কথা হয়েছে অপেক্ষাকৃত কমই। এতদিন ধরে নারীসাম্যের জন্য লাগাতার লড়েছেন তিনি। আর সেই লড়াইকেই সম্মান জানাল নোবেল-মঞ্চ। সোমবার রয়্যাল সুইডিশ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সের তরফে ঘোষণা করা হয়েছে ক্লদিয়ার নাম।

আমেরিকার নিউ ইয়র্কেই জন্ম এবং বেড়ে ওঠা ক্লদিয়ার। ১৯৭২ সালে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনায় যুক্ত তিনি। শ্রমের বাজারে নারীদের অবস্থান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছেন ক্লদিয়া। বিশেষ কোনও দেশ বলে নয়, বিশ্বজোড়া শ্রমবাজারের একটা বড় অংশ জুড়ে রয়েছেন নারীরা। তবে তাঁদের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে যে বৈষম্য বহু বছর ধরে চলে আসছে বছরের পর বছর ধরে। আর সেই ব্যাপারটিকেই নিজের গবেষণায় তুলে ধরেছেন তিনি। আমেরিকার ইতিহাস ঘেঁটে ২০০ বছরেরও বেশি সময়কার তথ্য সংগ্রহ করেছেন তিনি। দেখিয়েছেন, সময় পাল্টালেও কীভাবে অপরিবর্তিত রয়ে গিয়েছে শ্রমের বাজারে নারী-পুরুষের বেতন-বৈষম্যে। অর্থনীতিতে নোবেল পুরষ্কার কমিটির চেয়ারম্যান জ্যাকব সভেনসন জানান, শ্রমবাজারে নারীর ভূমিকাটুকু বুঝে নেওয়া সমাজের জন্য ভীষণ জরুরি। আর ক্লদিয়ার এই ভূমিকাকেই কুর্নিশ জানাচ্ছে নোবেল কমিটি।

আরও পড়ুন:অপরের জন্য লিখে সাহিত্যে নোবেল, কে এই জন ফসে?

অর্থনীতির এই নোবেল পুরস্কার ‘দ্য সোয়েরিয়েজ রিক্সব্যাঙ্ক প্রাইজ ইন ইকনমিক সায়েন্সেস ইন মেমোরি অব আলফ্রেড নোবেল’ হিসেবে পরিচিত। অর্থনীতি বিভাগের এই নোবেলটি শুরু হয়েছিল বাকি পুরস্কারগুলির থেকে কিঞ্চিৎ দেরিতে। এ কারণে অর্থনীতির নোবেল পুরস্কার আদৌ নোবেল কিনা সে নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেন। তবে এই সব সংশয়ের অনেক উপরে যে ক্লদিয়ার এই কাজ, তা নিয়ে বোধহয় কোনও বিতর্কের অবকাশ নেই।

More Articles