পূরণ হল না নীতীশের প্রত্যাশা, বিহারের বিশেষ মর্যাদার দাবিতে বড়সড় ‘না’ কেন্দ্রের

Bihar 'special category' status: স্পেশাল ক্যাটাগরি স্ট্যাটাস পাচ্ছে না বিহার। এবার সর্বদলীয় বৈঠকে সাফ জানিয়ে দিল কেন্দ্র সরকার।

কিংমেকারের চেয়ারে বসেও প্রত্যাশা পূরণ হল না বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের। স্পেশাল ক্যাটাগরি স্ট্যাটাস পাচ্ছে না বিহার। এবার সর্বদলীয় বৈঠকে সাফ জানিয়ে দিল কেন্দ্র সরকার।

এবারের লোকসভা ভোটে বিহারের মানুষ দু'হাত ভরে ভোট দিয়েছেন নীতীশ কুমারের দল জেডিইউকে। এমনকী ভালো ফল করেছে এনডিএ জোটের আওতায় থাকা বিহারের অন্যান্য ছোটখাটো দলগুলিও। লোকসভা ভোটের কয়েক মাস আগেই কংগ্রেসের হাত ছেড়ে ফের বিজেপির হাত ধরেছিলেন বিহারের 'পল্টুরাম' নীতীশ কুমার। আর সেই হাত ধরা যে জেডিইউ এবং বিজেপি, উভয়ের জন্যই লাভজনক হয়েছে তা প্রমাণ হয়ে গেল ভোটের ফলাফল হাতে আসতে না আসতেই। ২০২৪ লোকসভা ভোটে বিহারে শুধু ভালো ফলই করল না জেডিইউ, কার্যত নীতীশ চলে এলেন কিংমেকারের চেয়ারে।

অন্যদিকে, এই লোকসভা ভোটে বিজেপি গোটা দেশ জুড়েই খুব একটা ভালো ফল করতে পারেনি। সংখ্যাগরিষ্ঠতার স্বপ্নও মাঠে মারা গিয়েছে। এই সময় বিহারে নীতীশ, অন্ধ্রপ্রদেশে চন্দ্রবাবু নায়ডুদের মতো নেতাদের সমর্থন না পেলে তৃতীয় বার সরকার গড়া কঠিন হত বিজেপির পক্ষে। সেই সুযোগে একগুচ্ছ মন্ত্রক এবং একগুচ্ছ সুযোগসুবিধার কথা জানিয়ে রেখেছিল অধিকাংশ শরিক দলই। মন্ত্রক ভাগের বিষয়ে নীতীশের দাবিতে থাকা বেশ কয়েকটি দফতরের দায়িত্ব গিয়েছে জেডিইউয়ের ঝুলিতে। কিন্তু তার পরেও সব চেয়ে বড় দাবি ছিল বিহারকে বিশেষ ক্যাটাগরিতে মর্যাদা পাইয়ে দেওয়ার। তবে তাতে রাজি নয় মোদি সরকার।

আরও পড়ুন: মোদি মন্ত্রিসভা 3.O: বিজেপির ভাগ-বাঁটোয়ারা খুশি মনে মানবেন নীতীশ-নাইডুরা?

ভোটে জিতে কেন্দ্রে সরকার গড়েছে বিজেপি সরকার। সেই সরকার তড়তড়িয়ে চলছেও। এরই মধ্যে বোমা ফাটাল গেরুয়া শিবির। সর্বদল বৈঠকে সরাসরি প্রত্যাখ্যান করা হল জেডিইউয়ের অনুরোধ। জানিয়ে দেওয়া হল, কোনও রকম বিশেষ মর্যাদা পাচ্ছে না বিহার। ভারতীয় সংবিধান অনুযায়ী, এই মুহূর্তে কোনও নতুন রাজ্যকে এই মর্যাদা দেওয়ার সুযোগ নেই বলেই জানানো হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।

রবিবার আরজেডি নেতা মনোজ কুমার ঝা জানান, বিহার একই সঙ্গে বিশেষ মর্যাদা ও বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি জানিয়েছিল কেন্দ্রের কাছে। আজ থেকে নয়, বিহার থেকে ভেঙে যখন ঝাড়খণ্ড স্বাধীন রাজ্য হয়, তখন থেকেই এই বিশেষ মর্যাদার দাবি জানিয়ে আসছে বিহার। যে দাবিকে প্রথম থেকেই অমূলক বলে এসেছে অনেকেই। তবে জেডিইউ নেতা মনোজ জানান, কেন্দ্রীয় সরকারি নীতির বদল চান তারা। বিহারকে বহু ক্ষেত্রেই শ্রম সরবরাহের কেন্দ্র হিসেবে বিবেচনা করা হয়। সেই জায়গাটারও পরিবর্তন দাবি করেছেন তারা। এ সব কারণেই বিশেষ মর্যাদার দাবি বলেই জানান জেডিইউ নেতা।

১৯৬৯ সাল নাগাদ ন্যাশনাল ডেভলপমেন্ট কাউন্সিলের সভায় এই বিশেষ ক্যাটাগরি স্ট্যাটাস নিয়ে আলোচনা হয়। গাডগিল সূত্র মেনে অসম, জম্মু-কাশ্মীর ও নাগাল্যান্ডের মতো রাজ্যগুলিকে পরবর্তী কালে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়। যার মাধ্যমে কেন্দ্রীয় বরাদ্দের ক্ষেত্রে তাদের প্রয়োজনীয়তাগুলিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। ওই বছরই পঞ্চম অর্থ কমিশন নির্দিষ্ট কয়েকটি অঞ্চলের ঐতিহাসিক চ্যালেঞ্জগুলোর কথা মাথায় রেখে ওই স্ট্যাটাস দিয়েছিল। যার মাধ্যমে নির্দিষ্ট সুবিধাবঞ্চিত রাজ্যগুলি কেন্দ্রীয় সহায়তা, করছাড়ের মতো বেশ কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে।

আরও পড়ুন: বিহারের মানুষকে ইচ্ছা করে অন্ধকারে রেখেছেন লালু-নীতীশ! চাঞ্চল্যকর দাবি প্রশান্ত কিশোরের

২০১৪-১৫ অর্থবর্ষে মোট ১১টি রাজ্য এই বিশেষ মর্যাদার সুযোগ পেয়েছে। তবে ২০১৪ সালে বন্ধ হয়ে যায় পরিকল্পনা কমিশন। তার বদলে কাজ শুরু করে নীতি আয়োগ। যার পরে ১৪তম অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী বন্ধ হয়ে যায় গ্যাডগিল ফর্মুলাভিত্তিক অনুদানগুলি। ২০১৫ সালে ১৪তম অর্থ কমিশন শেয়ারেবল ট্যাক্স বণ্টনের ক্ষেত্রেও ভেদাভেদ তুলে দেয়। যার ফলে ক্রমে এই বিশেষ মর্যাদা দেওয়ার প্রথাও মুখ থুবড়ে পড়ে।

ফলে বিহারের বিশেষ মর্যাদা পাওয়ার আশাও নিভে গেল একেবারে। এতদিন ধরে ওই বিশেষ স্ট্যাটাসের আশা বুকে নিয়ে অপেক্ষায় ছিল নীতীশের দল। তবে সেই প্রত্যাশায় এবার একেবারে জল ঢেলে দিয়েছে কেন্দ্র সরকার।

More Articles