ধ্বংস হয়েছে ১০০ কোটি টাকারও বেশি সম্পত্তি, পথে বসেছে মানুষ, যে হাড়হিম ছবি দেখাল ২০২২
2022 most expensive year climate disaster : নিজের ঘরবাড়ি খুইয়ে পথে এসে বসেছে সাধারণ মানুষ। মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা এসে পড়েছে অর্থনীতিতে…
২০২২ সালের শেষ লগ্ন অনেকদিন আগেই পেরিয়ে এসেছে বিশ্ব। নানা ঘাট প্রতিঘাত, হাসি কান্নায় কেটেছে একটা গোটা বছর। কিন্তু ২০২২ সালে পৃথিবীজুড়ে ঘটেছে অজস্র ধ্বংসলীলা। বাড়িঘর ভেঙে পড়েছে, রাস্তাঘাট ধসে গিয়েছে। অজস্র মানুষ ভিটেমাটি হারিয়েছেন। এর পাশাপাশি আরও ভয়ংকর আকার ধারণ করছে পরিবেশ দূষণ। যার ফল? ২০২২-এ পৃথিবী জুড়ে ১৮টি বড়সড় প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে গিয়েছে। নিজের ঘরবাড়ি খুইয়ে পথে এসে বসেছে সাধারণ মানুষ। মাথায় হাত পড়েছে তাঁদের। আর এই একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ধাক্কা এসে পড়েছে অর্থনীতিতে…
সম্প্রতি আমেরিকার ন্যাশনাল ওশিয়ানিক অ্যান্ড অ্যাটমস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন একটি বিশেষ রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। ২০২২ সাল জুড়ে এই সংস্থাটি বিভিন্ন প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও তার ক্ষতির পরিমাণ নিয়ে কাজ করছিল। সেই সমীক্ষাতেই উঠে আসে ভয়াবহ তথ্য। প্রতিষ্ঠানের রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০২২-এর একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের কারণে ধ্বংস হয়েছে এক বিলিয়ন মার্কিন ডলারের থেকেও বেশি সম্পত্তি। ভারতীয় মুদ্রায় যার পরিমাণ ১০০ কোটি ছাড়িয়ে যায়! ১৯৮০ সাল থেকে হিসেব করলে দেখা যাবে, এই ক্ষয়ক্ষতির বিচারে ২০২২ পৃথিবীর তৃতীয় ভয়ংকরতম বছর! এবং উল্লেখ্য, এই ক্ষতির হিসেব স্রেফ উত্তর আমেরিকার। পৃথিবীর অন্যান্য জায়গার হিসেব জুড়লে এই সংখ্যা আরও কয়েকশো কোটি ছাড়াবে!
২০২২-এর ডিসেম্বর মাসে আমেরিকা দেখল ভয়ংকর তুষারঝড়। যার দাপটে মুখ থুবড়ে পড়ে সেখানকার জনজীবন। এমনিতেই আমেরিকার চাকরির বাজারে এখন খারাপ সময়। বড় বড় তথ্যপ্রযুক্তি কোম্পানিগুলি খরচ ও ক্ষতির মোকাবিলা করতে ব্যাপকহারে কর্মী ছাঁটাই শুরু করেছে। তার মধ্যে একের পর এক দুর্যোগ ঘটেই চলেছে মার্কিন প্রদেশে।
খরা
২০২২ সালে আমেরিকা দেখেছে ভয়ংকর খরা। পশ্চিম ও মধ্য-পশ্চিম আমেরিকায় এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি পড়ে। অবস্থা এমন হয় যে, অন্যতম প্রধান নদী মিসিসিপির জলস্তর ২০ ফুট নিচে নেমে যায়। রিজার্ভারে জলের পরিমাণ রেকর্ড সংখ্যায় কমে যায়। পাশাপাশি সবচেয়ে ক্ষতিকারক প্রভাব পড়ে কৃষিক্ষেত্রে। মাঠের পর মাঠ জলহীন অবস্থায় শুকিয়ে যায়। হঠাৎ করে এই বিপর্যয়ের কারণ কী? বিজ্ঞানীরা বলছেন, যত দিন যাচ্ছে, পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। ফলে তার প্রভাব এসে পড়ছে এসব জায়গায়।
হারিকেন ইয়ান
২০২২-এ আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করেছে এই হারিকেন। সেপ্টেম্বরে ফ্লোরিডায় আছড়ে পড়ে এই শক্তিশালী ঝড়। ১৫০ কিমি গতিবেগে এগোতে থাকে, তছনছ হয়ে যায় গোটা এলাকা। সেইসঙ্গে শুরু হয় প্রবল বৃষ্টি। কেবল ফ্লোরিডাতেই ১৪৪ জন এই হারিকেনের দাপটে মারা গিয়েছেন। আর সেই ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কা এখনও স্বাম্লে উঠতে পারেনি আমেরিকা। ১১৩ বিলিয়ন ডলারের ক্ষতি সামলানো কি চাট্টিখানি কথা! মুখ থুবড়ে পড়ে অর্থনীতি। সেই ধ্বংসলীলার সাক্ষ্য এখনও বহন করে চলেছে পৃথিবীর শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ।
এছাড়াও ২০২২ জুড়ে দেখা গিয়েছে একের পর এক বন্যা, ঝড়, ঘূর্ণিঝড়। এর কারণে পশ্চিম ভার্জিনিয়া থেকে উইসকনসিন অবধি বিদ্যুৎ ব্যবস্থা একেবারে ভেঙে পড়ে। প্রচুর মানুষ ঘর হারান। কিন্তু এত ভয়ংকর আকার কেন?
বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা তো সবে শুরু। পরিবেশ দূষণ, বিশ্ব উষ্ণায়ন ভয়াবহ জায়গায় পৌঁছেছে। যত দূষণ বাড়ছে, পৃথিবী জুড়ে উষ্ণতা ক্রমশ বাড়ছে। কেবল আমেরিকা নয়, গোটা বিশ্বে এমন সমস্যা দেখা যাচ্ছে। ফলে সেই প্রভাব এসে পড়ছে জলবায়ুর ওপর। ঋতুগুলি নিজের চরিত্র বদলে ফেলছে, বদলে যাচ্ছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের চরিত্র। গবেষকরা বলছেন, তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আর্দ্রতাও বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। ফলে গরম আর আর্দ্রতা মিলেমিশে আরও ভয়ংকর করে তুলছে সাইক্লোন, হারিকেনকে। যত দিন যাবে, ঝড়-ঝঞ্ঝা, খরা, বন্যা ইত্যাদি বিপর্যয়ের সংখ্যা বাড়বে। সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে ভয়াবহতা, ক্ষতির মাত্রা। ভারতের ক্ষেত্রে আমফানের সময় যেমন দেখা গিয়েছিল। ফলে এমন ক্ষয়ক্ষতি এরপরও দেখা যাবে। কে জানে, সেসব এর থেকেও ভয়ংকর জায়গায় যাবে কিনা!