করোনাকে চিনিয়েছিলেন তিনিই, আজ আক্রান্ত নিজেই, যে কারণে অ্যান্টনি ফাউসি থেকে যাবেন ইতিহাসে

অতিমারী নিয়ন্ত্রণে বিরতিহীনভাবে কাজ করে গেছেন অ্যান্টনি ফাউসি। ২০২১ সালের মে মাসে এই বিজ্ঞানী-চিকিৎসক বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা হানা দেওয়ার পর থেকে সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে পারেননি তিনি।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রধান চিকিৎসা-উপদেষ্টা অ্যান্টনি ফাউসি করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ১৫ জুন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগবিষয়ক জাতীয় সংস্থার (এনআইএডিআই) তরফে একথা জানানো হয়েছে। তবে সংস্থার দেওয়া বিবৃতিতে জানা গেছে, খুব সামান্যই উপসর্গ রয়েছে ফাউসির। এই মুহূর্তে কোয়ারেন্টিনে রয়েছেন তিনি। সংবাদ সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, অতিমারীর শুরু থেকে এই প্রথমবার করোনা-আক্রান্ত হলেন ৮১ বছরের ফাউসি।

গতকাল অ্যান্টিজেন টেস্ট করালে রিপোর্ট পজিটিভ আসে। এনআইএডিআই ডিরেক্টর ফাউসির করোনা সংক্রমণের খবর জানিয়ে প্রেস বিবৃতি প্রকাশ করা হয় সংস্থার তরফে। ওই বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, "করোনা টিকার দু'টি ডোজ এবং দু'টি বুস্টার ডোজ নেওয়া আছে ফাউসির। সম্প্রতি তিনি বাইডেনের সংস্পর্শেও আসেননি।"

ফাউসির বর্তমান শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে এনআইএইচ জানিয়েছে, "ফাউসি সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন'-এর (সিডিসি) কোভিড-সংক্রান্ত নির্দেশনা ও তাঁর চিকিৎসকের দেওয়া পরামর্শ মেনেই বাড়িতে থেকে কাজ চালিয়ে যাবেন। করোনা পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ এলে তখন আবার এনআইএইচে সশরীরে কাজে ফিরবেন।"

আরও পড়ুন: এই বছরেই শেষ হচ্ছে না অতিমারী, মনে করছেন বিজ্ঞানীরা

কোভিড-১৯ মোকাবিলায় মার্কিন কেন্দ্রীয় সরকারের পদক্ষেপ ও পরিকল্পনা নিয়ে কথা বলতে ১৬ জুন সেনেটের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, শ্রম ও পেনশন কমিটির বৈঠকে তাঁর অংশ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সংক্রমণের কারণে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এই বৈঠকে উপস্থিত থাকবেন ফাউসি।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, গত বছরের শেষের দিকে করোনার ওমিক্রন ভ‍্যারিয়েন্টের কারণে সংক্রমণের হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছিল। এর সর্বশেষ স্ট্রেন বিএ পয়েন্ট ফোর এবং বিএ পয়েন্ট ফাইভ- সব ধরনের প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করতে সক্ষম। ফলস্বরূপ যুক্তরাষ্ট্রর আক্রান্তের সংখ্যাও বেড়েছে আগের তুলনায়।

কে অ্যান্টনি ফাউসি?
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেনের প্রধান চিকিৎসা-উপদেষ্টা এবং দেশের অ্যালার্জি ও সংক্রামক রোগ-সংক্রান্ত সংস্থার ডিরেক্টর পদে রয়েছেন চিকিৎসক অ্যান্ট‌নি ফাউসি। হোয়াইট হাউসের তৈরি করোনা টাস্ক ফোর্সের প্রধান মুখ ছিলেন তিনি। এছাড়া ১৯৮১ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যেকটি মহামারী মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি। এইডস রোগের সংক্রমণের বিরুদ্ধে প্রাথমিক লড়াইয়ে নেতৃত্বের জন্য বিশ্বজুড়ে প্রশংসিত হয়েছেন তিনি। মহামারীর প্রথম দিকে ট্রাম্প প্রশাসন যখন পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ, তখন মার্কিন অধিবাসীদের কাছে ফাউসিই ছিলেন প্রধান ভরসা।

করোনা রুখতে ড. ফাউসি ছিলেন মার্কিন অধিবাসীদের গাইড। সংক্রমণ ঠেকাতে ট্রাম্প প্রশাসন যে পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, সর্বসমক্ষে তার সমালোচনা করেছিলেন তিনি। এই কারণে শেষের দিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং ফাউসির সম্পর্কের অবনতি ঘটে। ২০২০ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারে বারবার তাঁর বিরুদ্ধে কড়া কথায় আক্রমণ শানিয়েছেন ট্রাম্প। এমনকী, ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হলে ফাউসিকে বরখাস্ত করবেন।

ফাউসির তত্ত্বাবধানে এনআইএডিআই -এর তরফে পরিচালিত এক সমীক্ষায় জানা যায়, ফেব্রুয়ারি, ২০২২ সালের মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ আমেরিকান কোভিড-১৯-এ সংক্রমিত হয়েছিল। সংক্রমণের হার আজ নিঃসন্দেহে অনেক বেশি।

দু'বছর ধরে অতিমারী চললেও ফাউসির সংক্রমণ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা চোখে পড়েছে একাধিকবার। সাম্প্রতিক হোয়াইট হাউজের তরফে আয়োজিত এক ডিনার পার্টিতে দেখা যায়নি তাঁকে। ওই দিনের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত অতিথিদের করোনার সম্পূর্ণ টিকা নেওয়া থাকলেও সেই পার্টি সুপার স্প্রেডার হিসেবে কাজ করেছিল।

মে মাসেই তিনি বলেছিলেন, অতি‌মারী পরিস্থিতি কাটলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কোভিড-১৯ -এর সংক্রমণ থেকে মুক্ত হয়নি। তাই মানুষের এখনও সচেতন থাকা উচিত বলেও সতর্ক করেছিলেন তিনি। তাঁর কথা দেশবাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল। তিনি আরও বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং সমগ্র বিশ্ব বর্তমানে অতিমারীর মধ্য দিয়ে চলেছে। তবে এই অতিমারীর বিভিন্ন পর্যায় রয়েছে। এই মুহূর্তে দেশের সংক্রমণ যে পর্যায়ে আছে, তা অনেকটাই কম, তাই ভয়ের তেমন কারণ নেই‌।"

চিনের ইউহান শহর থেকে করোনা কীভাবে সমগ্র বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে, তার রূপরেখাও দিয়েছিলেন ফাউসি। এই সম্পর্কে কয়েক হাজার পাতার ইমেল বেশ কিছু মাস আগেই সমাজমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে ফের চর্চার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে ইউহানের সেই ল্যাবরেটারি। ২০২১ সালে ভারতে করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে কী ভয়ংকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল, তা সমগ্র বিশ্ব দেখেছে। এই প্রসঙ্গে ফাউসি বলেছিলেন, "অকালেই সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে দেওয়ায় ভারত এমন কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে। ভারত এমন পরিস্থিতির কথা কল্পনাও করতে পারেনি, ভেবেছিল অতিমারী শেষ হয়ে গেছে, যার ফলাফল এই মাত্রাতিরিক্ত সংক্রমণ।"

অতিমারী নিয়ন্ত্রণে বিরতিহীনভাবে কাজ করে গেছেন অ্যান্টনি ফাউসি। ২০২১ সালের মে মাসে এই বিজ্ঞানী-চিকিৎসক বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রে করোনা হানা দেওয়ার পর থেকে সাপ্তাহিক ছুটি কাটাতে পারেননি তিনি।

More Articles