তাপপ্রবাহ, রাজ্য জুড়ে জারি হলুদ সতর্কতা! কেন এত বাড়ছে গরম?
Kolkata Weather: পশ্চিমবঙ্গের একাধিক রাজ্যে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর। কলকাতার একাধিক জায়গায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা।
দোল যেতে না যেতেই লাল চোখ দেখাতে শুরু করেছে সূর্য। ক'দিনের মধ্যেই তাপমাত্রা যেন আকাশ ছুঁয়েছে। সকাল থেকেই বোঝা যাচ্ছে রোদের প্রখর তেজ। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই অস্বস্তি বাড়ছে বই কমছে না। মার্চের শেষ থেকেই যে খেল দেখাতে চলেছে গ্রীষ্ম, তাতে এপ্রিলের শেষ কিংবা মে মাস নাগাদ কী অবস্থা হতে চলেছে রাজ্যবাসীর, তা ভেবে কপালে ভাঁজ পড়েছে অনেকেরই। তার মধ্যে এ বছর আবার লোকসভা ভোট। আগামী ১৯ এপ্রিল থেকেই শুরু হয়ে যাচ্ছে ভোটগ্রহণ। চলবে ১ জুন পর্যন্ত।
সাধারণত এপ্রিল মাসের মাঝামাঝি থেকে গরম বাড়তে শুরু করে। তবে এবার অতদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করেনি গ্রীষ্মকাল। একদিন আগে পর্যন্তও কলকাতার তাপমাত্রা ঘোরাফেরা করেছে ৩৭ ডিগ্রির আশেপাশে। শুক্রবার কলকাতার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা পৌঁছে যেতে পারে ৩৯ ডিগ্রি তাপমাত্রায়। তেমন আশঙ্কাই প্রকাশ করেছে আবহাওয়া দফতর। গরমকে আরও অস্বস্তিকর করেছে বাতাসের আর্দ্রতা। যা বুধবার সর্বোচ্চ ৯১ শতাংশে পৌঁছয়। ফলে অস্বস্তিতে জেরবার হতে হয়েছে মানুষতে।
পশ্চিমবঙ্গের একাধিক রাজ্যে তাপপ্রবাহের সতর্কতা জারি করেছে ভারতীয় আবহাওয়া দফতর (আইএমডি)। পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর ও পশ্চিম বর্ধমানে রবিবার পর্যন্ত এই পরিস্থিতি জারি থাকবে বলে জানানো হয়েছে। একই সঙ্গে কলকাতার একাধিক জায়গায় জারি করা হয়েছে হলুদ সতর্কতা। উত্তর ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, হাওড়া, হুগলি, কলকাতার পাশাপাশি পুরুলিয়া, ঝাড়গ্রাম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ এবং নদীয়ার মতো নামও রয়েছে সেই তালিকায়। জেলার দিকে তাপমাত্রা শহরাঞ্চলের চেয়ে এমনিই বেশ খানিকটা বেশি। বাঁকুড়া, বিষ্ণুপুরের মচো একাধিক জায়গায় তাপমাত্রা পেরিয়ে গিয়েছে ৩৯ ডিগ্রি। আগামী কয়েকদিনে সেই তাপমাত্রা আরও বেশ খানিকটা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
আরও পড়ুন: ১০ মিনিটের ঝড়ে তছনছ জলপাইগুড়ি! ভোটের মুখে বড় ইস্যু হবে মিনি-টর্নেডোও?
আবহাওয়া দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, স্বাভাবিকের চার থেকে পাঁচ ডিগ্রি সেলসিয়াস উপরে থাকবে বেশ কয়েকটি জেলায়। শনিবার পর্যন্ত তাপপ্রবাহের সতর্কতা। ৪২ ডিগ্রিতে পৌঁছে যেতে পারে গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলার তাপমাত্রা। আগামী দু-তিনদিনে ২-৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বাড়বে। বৃহস্পতিবার দক্ষিণবঙ্গের চার জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে। পুরুলিয়া বাঁকুড়া বীরভূম এবং পশ্চিম বর্ধমান রয়েছে সেই তালিকায়। শুক্রবার পুরুলিয়া বাঁকুড়া পূর্ব ও পশ্চিম বর্ধমান পূর্ব ও পশ্চিম মেদিনীপুর ঝাড়গ্রাম বীরভূম জেলায় তাপপ্রবাহের সতর্কবার্তা। বেশ কিছু এলাকায় লু- বইবার সম্ভাবনা।
এক সপ্তাহ আগেই আচমকা ঝড়ে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের একাধিক এলাকা। জলপাইগুড়ি, কোচবিহার-সহ বেশ কিছু জায়গা তছনছ হয়ে গিয়েছে ঝড়ের দাপটে। অন্তত ৫ জনের মৃত্যু হয়। জখম হন শতাধিক। ঘর ভেঙে, গাছ পড়ে অসংখ্য এলাকা জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। শনিবার আবার দক্ষিণ ২৪ পরগনা, পূর্ব মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, পশ্চিম মেদিনীপুর, বাঁকুড়া এবং পশ্চিম বর্ধমানের দু-এক জায়গায় হাল্কা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বজ্রবিদ্যুৎ সহ হালকা মাঝারি বৃষ্টির সঙ্গে কোথাও কোথাও ৪০ থেকে ৫০ কিলোমিটার গতিবেগে দমকা ঝড় হবে। উত্তরবঙ্গের বেশ কয়েকটি জেলায় বজ্রপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ দিনাজপুর এবং মালদহেও জারি করা হয়েছে সতর্কতা।
এপ্রিল শুরু না হতে হতেই যে ভাবে গরম বাড়তে শুরু করেছে, তাতে মাস গড়ালে কী হতে চলেছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আবহাওয়া দফতর। প্রতিবছর বাড়ছে পরিবেশ দূষণ। যার জেরে পাল্টে যাচ্ছে জলবায়ু। গলে যাচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত হিমবাহ। যার ফলে জল বাড়ছে সমুদ্রের। হু হু করে বাড়ছে পৃথিবীর গরম।বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে কলকাতায় দিন ও রাতের তাপমাত্রা আশ্চর্যজনক ভাবে বেড়েছে। আর এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির অন্যতম কারণ বঙ্গোপসাগরে উচ্চনিম্নচাপ অঞ্চল তৈরি না হওয়া। তেমনটাই জানিয়েছেন আবহাওয়া বিশেষজ্ঞেরা। আশঙ্কা করা হচ্ছে, ২০৮০ সালের মধ্যে কলকাতার বার্ষিক গড় তাপমাত্রা অন্তত ৪.৫ ডিগ্রি বাড়তে চলেছে। মানে আগামী ২০-২৫ বছরে গরমকালে স্বাভাবিক তাপমাত্রা ছুঁতে চসেছে প্রায় ৫০ ডিগ্রি তাপমাত্রা। জেলাগুলির অবস্থা তো আরও শোচনীয় হতে চলেছে।
আরও পড়ুন: আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনা, অন্ধকারে ভারতে কাজুবাদাম চাষের ভবিষ্যৎ
আবহাওয়াবিদেরা জানাচ্ছেন, ১৯৯০ সালের আশপাশের সময় থেকেই কলকাতায় বেড়েছে তাপমাত্রা। পুকুর ভরাট, পাইকারি হারে গাছ কেটে কংক্রিটের শহক বানানো রয়েছে তার নেপথ্যে। খুব বেশিদিন নয়, কলকাতা মরুভূমিতে রূপান্তরিত হতে চলেছে। এমন আশঙ্কাই প্রকাশ করছেন পরিবেশবিদেরা। মাঝেমধ্যেই আয়লা, আমফান, যশের মতো ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ এসে পড়ে রাজ্যের উপর। তার নেপথ্যেও কিন্তু রয়েছে অবিরাম বৃক্ষছেদন, পরিবেশ দূষণই। সম্প্রতি একদল পরিবেশ বিশেষজ্ঞ জানিয়েছেন, খুব বেশি দেরি নয়, ২০২৯ সাল নাগাদই কলকাতায় এত গরম পড়বে যে দিনের বেলায় রাস্তায় বেরোনো অসম্ভব হয়ে পড়বে। আগামী ২০ বছরেই তাপমাত্রা আটচল্লিশ ডিগ্রিতে পৌঁছতে চলেছে কলকাতার, যা আসলে সাহারা মরুভূমির তাপমাত্রা। আর তার সূচনা বোধহয় এপ্রিলের গোড়াতেই হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছে রাজ্যবাসী।