সকালে স্বাভাবিক, রাত হলেই একেবারে নিথর! যে পাকিস্তানি ভাইদের কাহিনি এখনও রহস্যে ভরা

Solar Kids of Pakistan : আজও সেই রহস্যের কূলকিনারা হয়নি। কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল? তা জানতে একবার ফিরে যেতে হবে পাকিস্তানে।

গরমের মধ্যে সারাদিন স্কুল-কলেজ কিংবা অফিসের চাপে ব্যতিব্যস্ত হওয়ার পর রাতের বেলা অনেকেরই আর শক্তি থাকে না। মনে হয়, বাড়ি ফিরে বিছানায় গা এলিয়ে দিলেই শান্তি। এটা অত্যন্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। আচ্ছা যদি এমন হয়, দিনের বেলা আপনি অন্যান্যদের মতোই কাজকর্ম করছেন, দিব্যি খাচ্ছেন দাচ্ছেন। কিন্তু রাত হলেই অন্য মূর্তি। একটু একটু করে শরীর যেন সিমেন্টের ভাস্কর্য হয়ে যাচ্ছে। নড়াচড়ারও ক্ষমতা থাকছে না। আবার পরদিন সকালবেলায় সব ঠিকঠাক। এমন কোনও অদ্ভুত ঘটনার কথা শুনেছেন কখনও? মাত্র কয়েক বছর আগেও এমন কোনও ঘটনার কথা গোটা বিশ্বও সেভাবে জানত না। কিন্তু এমন এক কাহিনি সামনে এল, যার পর তাবড় তাবড় গবেষকরাও হাঁ হয়ে গেলেন। আর সাধারণ মানুষরা ভাব্ল, এ নিশ্চয়ই কোনও অলৌকিক ঘটনা! সাধারণভাবে তো এমনটা কখনও ঘটে না! আজও সেই রহস্যের কূলকিনারা হয়নি। কিন্তু ঠিক কী হয়েছিল? তা জানতে একবার ফিরে যেতে হবে পাকিস্তানে।

পাকিস্তান – নামটা বললেই অনেকের মনের ভেতর অনেক কিছু চলে। কিন্তু সেসব দূরে সরিয়ে রেখে আসা যাক এক অদ্ভুত ঘটনার দিকে। পাকিস্তানেরই দক্ষিণ-পশ্চিমে রয়েছে বালুচিস্তান প্রদেশ। নানা ঘটনায় আন্তর্জাতিক মিডিয়ার সামনে উঠে আসে এই প্রদেশটির নাম। তারই প্রধান শহর কোয়েটা। এমনিতে ছবির মতো সুন্দর এই জায়গা। অনেকের কাছেই ভ্রমণের উৎকৃষ্ট পরিবেশ। সেই কোয়েটারই কাছে এক গ্রামে বাস করেন মহম্মদ হাশিম। নিতান্ত ছাপোষা একটি পরিবার, স্ত্রী আর সন্তানদের নিয়ে মধ্যবিত্ত জীবন কাটাচ্ছিলেন। এই দম্পতির মোট ছয়টি সন্তান জন্মগ্রহণ করেছিল। কিন্তু হঠাৎ করেই জন্মের পর দুজন মারা যায়। এখন বাড়িতে চার সন্তান।

এই চারজনেরই দুজন হল আব্দুল রশিদ এবং শোয়েব আহমেদ। ২০১৬ সাল। সেই সময় আব্দুলের বয়স মাত্র নয়, আর শোয়েব ১৩ বছরের কিশোর। হঠাৎই এই দুই পাক বালকের খবর গোটা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। কেন? আব্দুল আর শোয়েবের মধ্যে একটা অদ্ভুত ব্যাপার দেখা যায় ছোট থেকেই। দুজনেই দিনের বেলা আর পাঁচটা সাধারণ বাচ্চার মতোই একদম ফিট থাকে। খেলে, ঘোরাঘুরি করে, পড়াশোনা করে। ঠিকমতো খায় দায়। কিন্তু এটা ততক্ষণই থাকে, যতক্ষণ সূর্য আকাশে থাকে। পশ্চিম দিগন্তে যেই সূর্যাস্ত হয়, অমনি পরিস্থিতি একেবারে বদলে যায়। একটু একটু করে নড়াচড়া বন্ধ হয়ে যায় দুই ভাইয়ের। দিনের ছটফটে আব্দুল-শোয়েব রাতে একেবারে জড় পদার্থের মতো হয়ে যায়। একেবারে অবশ হয়ে যায় গোটা শরীর। খাবারটুকুও খেতে পারে না। আবার ভোরে সূর্য উঠলে সব ঠিকঠাক!

এ আবার কেমন রোগ! এমন কথা তো এর আগে কখনও শোনা যায়নি! দুই ভাইয়ের বাবা মহম্মদ হাশিম সামান্য এক নিরাপত্তারক্ষী হিসেবে কাজ করেন। তাঁর সহজ সরল মন্তব্য, সূর্যদেবের থেকে সরাসরি শক্তি পায় তাঁর এই দুই ছেলে। তাই রাত হলেই ঝিমিয়ে পড়ে। কিন্তু সত্যিই কি তাই? রহস্য আর ফিসফিসানি ছড়িয়ে পড়ল সর্বত্র। কিন্তু ডাক্তাররাও এর কোনও তল খুঁজে পেলেন না। তবে একটা ব্যাপার লক্ষ্য করলেন যে, সূর্যের সঙ্গে এর কোনও যোগাযোগ নেই। কারণ, দিনের বেলা অন্ধকার ঘরে রেখে দিলেও আব্দুল আর শোয়েব স্বাভাবিক বাচ্চাদের মতোই আচরণ করে। যত সমস্যা সূর্যাস্তের পরই।

২০১৬ সালে পাকিস্তানের বালুচিস্তানের এই দুই ভাইয়ের এমন অদ্ভুতুড়ে কাহিনি সামনে আসার পর গোটা বিশ্বের বিজ্ঞানী, চিকিৎসকদের মধ্যে শুরু হয় উত্তেজনা। তার আগে অবধি এই ধরনের বাচ্চাদের নিয়ে সেরকম কোনও গবেষণা হয়নি। কী করে হবে? কালেভদ্রে এক আধজনের ক্ষেত্রেই এমন দেখা যায়। এরকম বাচ্চাদের নাম দেওয়া হল ‘সোলার কিড’। আর ২০১৬ সাল থেকেই এই ব্যাপারে বিস্তারে গবেষণা ও চর্চা শুরু হল। যার কেন্দ্রে আব্দুল রশিদ আর শোয়েব আহমেদ।

অবস্থা এমন দাঁড়াল যে, পাকিস্তান সরকার এই শিশুদের চিকিৎসার সমস্ত ব্যয়ভার গ্রহণ করল। পাকিস্তানের তাবড় ডাক্তাররা তো বটেই, বিদেশের অভিজ্ঞ চিকিৎসকরাও জড়িয়ে পড়লেন এই ঘটনায়। শুরু হল গবেষণা। ইসলামাবাদের একটি হাসপাতালে দুই ভাইকেই ভর্তি করা হয়। ওখানেও একই অবস্থা। কেবল দুই ভাইয়ের শরীর থেকেই নয়, বালুচিস্তানের ওই গ্রাম থেকে মাটি, জল, বাতাসের নমুনাও সংগ্রহ করেন বিজ্ঞানীরা। বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণাগারে পাঠানো হয় সেসব। সেইসঙ্গে চলতে থাকে আব্দুল আর শোয়েবের চিকিৎসা।

পরের দিকে ডাক্তারদের চেষ্টায় সুস্থ হয় এই দুই কিশোর। বাড়িও ফিরে যায়। কিন্তু গবেষণা থামেনি আজও। কেন এমন সমস্যা হয়েছিল? দিনের বেলায় তরতাজা, সন্ধ্যা হলেই নিথর, আবার পরদিন সব ঠিকঠাক! এমন রোগের কথা তো এর আগে শোনা যায়নি। চিকিৎসাই বা হবে কী করে! কী করেই বা হয় এই রোগ? সোলার কিডরা কি এখনও আছে এই পৃথিবীতে? গবেষণা জারি রয়েছে এখনও। কিন্তু রহস্য এখনও পর্দার আড়ালেই থেকে গিয়েছে।

More Articles