শক্তিক্ষয় নামেই, বাংলাদেশেও যে তাণ্ডব চালাল রেমাল

Cyclone Remal in Bangladesh: রেমাল বাংলাদেশে আছড়ে পড়ার আগেই সেখানে রবিবার ঘটে গিয়েছিল বড়সড় দুর্ঘটনা। বাংলাদেশের বাগেরহাটে মোংলা নদীতে ডুবে যায় এক নৌকা।

আয়লা, আমফানের স্মৃতি উস্কে দিয়ে বাংলায় ঝাঁপাল রেমাল। শুধু বাংলা নয়, বাংলা হয়ে সোজা বাংলাদেশের উপকূলে গিয়ে আছড়ে পড়ল সুপার সাইক্লোনটি। বাংলা জুড়ে তো খেলা দেখিয়েইছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল, তার প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশেও। তবে বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়তে না পড়তেই অনেকটাই শক্তিক্ষয় হয়েছে। ফলে এ পার বাংলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে যে তাণ্ডব দেখিয়েছে রেমাল, তেমন প্রভাব পড়েনি বাংলাদেশে।

রেমালের দাপটে উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে একটানা বৃষ্টি ও ঝোড়ো হাওয়া বয়েছে একইসঙ্গে বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে। সোমবার সকালে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তরের তরফে জানানো হয়েছে, আরও কয়েক ঘণ্টা ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব থাকবে। তার পর ধীরে ধীরে তা একেবারে দুর্বল হয়ে যাবে। তবে সোমবার সারাদিনই বৃষ্টি হতে থাকবে বলে জানানো হয়েছে আবহাওয়া দফতরের তরফে।

আরও পড়ুন: আয়লার ভূতই ফিরে এল রেমাল হয়ে? কতটা ভয়াবহ ছিল ১৫ বছর আগের সেই দিন?

রবিবার রাত প্রায় আটটা নাগাদ বাংলাদেশের উপকূলে আছড়ে পড়ে রেমাল। ঘূর্ণিঝড়টির গতিপথ ছিল খেপুপাড়ার দক্ষিণ-পশ্চিমে মংলা ও পশ্চিমবঙ্গের সাগরদ্বীপের মাঝামাঝি অংশে। ল্যান্ডফলের সময় এর গতিবেগ ছিল ১৩৫ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টা। এর পরে খেপুপাড়া উপকূলবর্তী এলাকা দিয়ে এগোতে থাকে ঘূর্ণিঝড়টি। যার প্রভাবে রাতেই সাতক্ষীরা, খুলনা, বাগেরহাট, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা-সহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝোড়ো হাওয়া ও বৃষ্টি শুরু হয়। হাওয়ার গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। এর প্রভাবে বিভিন্ন এলাকায় জলোচ্ছ্বাস হয়। সুন্দরবন এলাকা রবিবার রাত থেকেই ৫ ফুট জলের নিচে তলিয়ে গিয়েছিল। সাতক্ষীরায় জলস্তর বেড়ে যায় প্রায় ৭ ফুট।

রবিবার রাত থেকে আজ সোমবার বেলা ১১টা পর্যন্ত বাংলাদেশের পটুয়াখালী, ভোলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম বরিশালে অন্তত ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাংলাদেশের ভোলার লালমোহন উপজেলার পশ্চিম চরউমেদ ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ড এলাকায় ঝড়ের জেরে ঘর ভেঙে দেয়াল চাপা পড়ে মারা যান এক প্রৌঢ়া। সাতক্ষীরার শ্যামনগরে আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার পথে গাছ চাপা পড়ে মৃত্যু হয় ৬৫ বছরের ব্যক্তির। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চরে আটকে পড়া নিজের ফুফু ও বোনকে নিরাপদ আশ্রয়ে আনতে তাদের বাড়িতে যাচ্ছিলেন শরীফ হাওলাদার (২৫) নামের এক যুবক। পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় চরে আটকে পড়া আত্মীয়দের উদ্ধার করতে গিয়ে ডুবে মৃত্যু হয় বছর পঁচিশের এক যুবকের। ঘূর্ণিঝড় রেমালের ঝড়-বৃষ্টিতে বরিশালের রুপাতলী এলাকায় একটি বিল্ডিংয়ের দেওয়াল ধসে মৃত্যু হয় এক হোটেলের মালিক ও কর্মীর। চট্টগ্রামে ঝড়ের জেরে নির্মীয়মান বাড়ির দেওয়াল ধসে মৃত্য়ু হয় এক যুবকের।

রেমাল বাংলাদেশে আছড়ে পড়ার আগেই সেখানে রবিবার ঘটে গিয়েছিল বড়সড় দুর্ঘটনা। বাংলাদেশের বাগেরহাটে মোংলা নদীতে ডুবে যায় এক নৌকা। এমনিতেই রেমালের জন্য সমুদ্র ও নদী উত্তাল ছিল রবিবার সারাদিন। ঝড়ের জন্য আগে থেকেই জারি হয়েছিল সতর্কবার্তা। সেসব উপেক্ষা করেই বেশি মুনাফার লোভে অতিরিক্ত যাত্রী চাপানো হয় নৌকায়। যার ফলে ঘটে দুর্ঘটনা। নৌকাটিতে অন্তত আশিজনের কাছাকাছি যাত্রী ছিলেন বলে খবর। নৌকাডুবির খবর পেয়েই উদ্ধারে নামে নৌ-পুলিশ, দমকল ও উপকূলরক্ষীবাহিনীর ডুবুরিরা। রাত পোহালেও অনেকেরই খোঁজ মেলেনি। তার উপর ঝড়ের দাপট। যার ফলে বহু মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা করা যাচ্ছে।

রেমাল আছড়ে পড়ার আশঙ্কায় আগে থেকেই কোমর বেঁধেছিল প্রশাসন। প্রায় লক্ষাধিক মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় নিরাপদ আশ্রয়ে। দেশের উপকূলীয় জেলা ও সমুদ্রবন্দরগুলোতে জারি করা হয়েছিল ১০ নম্বর মহা বিপদ সংকেত। মাছ ধরার নৌকা, ট্রলার এবং সামুদ্রিক জাহাজকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়। ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় ৭৮ হাজার স্বেচ্ছাসেবক মোতায়েন করা হয়। উপকূল এলাকায় তৈরি করা হয় ৪ হাজার আশ্রয়কেন্দ্র। চট্টগ্রামে ঘূর্ণিঝড় রেমালের মোকাবিলায় তৈরি করা হয়েছিল ১ হাজার ৩৪টি আশ্রয়কেন্দ্র। ছয়টি উপজেলায় ৩৮ টন চালের পাশাপাশি নগদ অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল আগেভাগেই। রেমাল মোকাবিলায় জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে সারা হয়েছিল একাধিক প্রস্তুতি সভাও।

আরও পড়ুন:শক্তি কমলেও আজও তাণ্ডব রেমালের! কোথায় কোথায় তুমুল ঝড়-বৃষ্টি?

এত কিছু সত্ত্বেও এড়ানো যায়নি দুর্ঘটনা। নৌকাডুবির পাশাপাশি ঝড়ে দেওয়াল চাপা পড়ে বহু ক্ষয়ক্ষতির খবর এসেছে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকেই। ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রাতেই প্লাবিত হয় হাতিয়া উপজেলার নিঝুম দ্বীপ, চরঘাসিয়া, ঢলচর-সহ একাধিক নিচু এলাকা। ক্ষয়ক্ষতি হয় কাঁচা বাড়িঘরগুলিরও। উপড়ে গিয়েছে বহু গাছ। এখনও পর্যন্ত বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অংশ বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন। জলমগ্ন রাস্তাঘাট। বিভিন্ন এলাকায় যানচলাচল। সোমবার দিনভর বৃষ্টির পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর। রবিবারের ঝড়ের পর সোমবারের সারা দিনের বৃষ্টি। সঙ্গে ঝোড়ো হাওয়া। সেই বৃষ্টির জেরে বাংলাদেশে কতটা ক্ষয়ক্ষতি বাড়ে, সেটাই দেখার।

More Articles