লকডাউনের স্মৃতি উস্কে বন্ধ স্কুল-কলেজ-অফিস! কোন পথে বাগে আসবে রাজধানীর মাত্রাতিরিক্ত দূষণ?
Delhi Air Pollution: শহরের বর্তমান দূষণের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের সমস্ত স্কুলের পঠনপাঠন ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
কোভিডের সময় সংক্রমণ এড়াতে স্কুল বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছিল প্রশাসন। জারি হয়েছিল লকডাউন। তবে সেই কোভিড-ফাঁড়া কেটেছে অনেকদিন হল। লকডাউনও উঠেছে। তবে ফাঁড়া কাটেনি দিল্লির। রাজধানী জুড়ে ফের তৈরি হয়েছে লকডাউন পরিস্থিতি। পুরোপুরি না হলেও অর্ধেক তো বটেই। প্রতিবছর শরৎ কাটতে না কাটতেই দিল্লিতে ব্যাপক হয়ে ওঠে বায়ুদূষণ। বাতাসের গুণগত মানের সূচক এমন জায়গায় নেমে যায়, যে তা মাথাব্যথার কারণ হয়ে ওঠে প্রশাসনের। এবারও তার ব্যতিক্রম হল না। পরিবেশ দূষণ সামাল দিতে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের অংশ হিসেবে দিল্লি জুড়ে জারি করা হল আংশিক লকডাউন। বন্ধ হল পড়ুয়াদের স্কুল। অফিসে হাজিরা ৫০ শতাংশ কমিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।
কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (সিপিসিবি)-এর তথ্য অনুযায়ী, রবিবার সকালে রাজধানীর বাতাসের গুণগত মান দাঁড়িয়ে ছিল ৪৬০-এ। প্রতিবছরের মতোই রোজই ঘন ধোঁয়াশায় ঢাকছে শহর। নিঃশ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে বাসিন্দাদের। শীত না পড়তে পড়তেই দিল্লির সকাল-বিকেল জুড়ে পুরু কুয়াশার চাদর। সিপিসিবি বলছে, রবিবার আয়ানগরের বাতাসের গুণগত মানের সূচক বা একিউ পৌঁছেছে ৪৬৪-তে। দ্বারকার সেক্টর ৮-এ বাতাসের গুণগত মান ৪৮৬, জহাঙ্গিরপুরীতে ৪৬৩ এবং ইন্দিরা গান্ধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের টার্মিনাল ৩-তে একিউআই ৪৮০। ফলে ইতিমধ্যেই রাজধানীতে দূষণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণসীমা পার করে গিয়েছে। যাকে 'অতি ভয়ানক' হিসেবে ধরছেন পরিবেশবিদেরা।
আরও পড়ুন: দূষণে নাভিশ্বাস, রাজধানী দিল্লি পরিত্যক্ত নগরীতে পরিণত হবে?
দূষণ রুখতে কেন্দ্রের কমিশন ফর এয়ার কোয়ালিটি ম্যানেজমেন্ট বেশ কিছু পদক্ষেপের খসড়া তৈরি করেছে ইতিমধ্যেই। তাকেই বলে গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান। অর্থাৎ একিউআই লেভেল ‘অতি ভয়ানক-এর সীমা পেরোলে সে সময় জিএআরপির চতুর্থ পর্যায় মেনে পদক্ষেপ করা হয়। আর দিল্লিতে আপাতত সেই পদক্ষেপই অবলম্বন করার নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। দূষণ-বিরোধী জিআরপিএ মেনে প্রথম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় পর্যায়ে যা যা পদক্ষেপ করা দরকার, তা-ও করা হবে বলে জানানো হয়েছে। এর পাশাপাশি দিল্লিকে স্বাভাবিক জায়গায় ফিরিয়ে আনতে আর কী কী পদক্ষেপ করা যায়, সে নিয়ে বৈঠকও করেছে কেজরীওয়াল সরকার।
এই পরিস্থিতিতে ৬ নভেম্বর, সোমবার কেন্দ্রের তরফে জারি করা হয়েছে একগুচ্ছ নতুন নির্দেশিকা। রাজ্য জুড়ে যে গতিতে দূষণ বাড়ছে, তা রুখতে একাধিক পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। শহরের বর্তমান দূষণের কথা মাথায় রেখে রাজ্যের সমস্ত স্কুলের শ্রেণির পঠনপাঠন ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সেখানে। তবে অনলাইন ক্লাস চলবে। তবে দশম ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারা ওই নিয়মের আওতায় পড়বে না। রয়েছে আরও একগুচ্ছ নিয়ম।
জিআরএপির চতুর্থ পর্যায়ে মোট আটটি পদক্ষেপের কথা বলা হয়েছে। আর সেই খসড়া মেনেই একাধিক বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে দিল্লির উপরে। এই মুহূর্তে এলএনসি বা সিএনজি চালিত ছাড়া দিল্লিতে কোনও ট্রাক প্রবেশ করতে পারবে না। ডিজেল চালিত মাঝারি মাপের যান এবং ভারী মালবাহী যানও তো একেবারেই নয়। তবে জরুরি পরিষেবা বহনকারী ট্রাক এবং চার চাকার ক্ষেত্রে ছাড় দিয়েছে কেন্দ্র।
এই জিআরপি খসড়া অনুযায়ী, চাইলে রাজ্য সরকার কলেজ, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিতে পারে। ইতিমধ্যেই রাজধানীর সমস্ত প্রাথমিক স্কুলগুলি ১০ নভেম্বর পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তবে আসতে হবে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি এবং একাদশ শ্রেণির পঠনপাঠন অনলাইন করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে কেন্দ্রের তরফে।
শুধু স্কুলই নয়। নতুন নিয়ম জারি অফিসগুলিতেও। খসড়া অনুযায়ী, রাজ্য সরকার নিজের কর্মীদের বাড়িতে বসে কাজের নির্দেশ দিতে পারে। ইতিমধ্যেই সরকারের তরফে ৫০ শতাংশ হাজিরা কমিয়ে আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর আগেও দিল্লির রাস্তায় জোড়-বিজোড় নীতি বলবৎ ছিল। বর্তমান দূষণ পরিস্থিতি বিচার করে ফের রাজধানীতে জোড়-বিজোড় নম্বর প্লেটের ভিত্তিতে রাস্তায় গাড়ি চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একদিন জোড় সংখ্যার নম্বর প্লেট বিশিষ্ট গাড়ি চললে পরের দিন চলবে বিজোড় নম্বর প্লেটের গাড়ি। এতে রাস্তায় গাড়ির চাপ অনেকটাই কমানো যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন:শহুরে পরিবেশবিদের ডায়েরি : অরিন্দম রায়
এত কিছুর পরেও কি রোখ টানা যাবে ভয়ঙ্কর এই দূষণে। প্রতি বছরই এই সময়টা মাত্রাছাড়া দূষণে ভোগে দিল্লি। পঞ্জাব-সহ একাধিক এলাকায় ফসলের নাড়া পোড়ানোর ফলেই বিপদসীমার নিচে নেমে যায় বাতাসের গুণগতমান। তার পরে ট্র্যাফিকজাত দূষণ তো রয়েইছে। কেকের উপর চেরির মতোই তাকে আরও মাত্রাছাড়া করে তোলে দিওয়ালির বাজি। হাজার সতর্কতা, হাজার নিয়ম এনেও ঠেকানো যায়নি পরিস্থিতি। ঠিক সে কারণেই করোনার বহু আগে থেকেই দিল্লিবাসীর মুখে চেপেছিল মাস্ক। আর এবার করোনা পেরিয়েও ফের লকডাউন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে দিল্লিতে। গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যান দিয়েও কি আদৌ শোধরানো যাবে পরিস্থিতি নাকি প্রতিবছরের মতোই মুখ থুবড়ে পড়বে এই প্রতিরোধী প্ল্যানও, সেটাই দেখার।