হিন্দুভোটও ফসকে যাচ্ছে! নির্বাচনের মাঝেই আকবরপুরের নাম বদল করতে কেন মরিয়া যোগী?

Akbarpur Name Change Yogi Adityanath: "শহরের নাম উচ্চারণ করলে মুখের স্বাদটাই খারাপ হয়ে যায়,” বলছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী।

ভোট চলছে দেশে। মাসখানেকের মধ্যে নতুন করে পাঁচ বছরের জন্য দেশ সামলানোর ক্ষমতা পাবে নির্বাচিত রাজনৈতিক দল। শাসক বিজেপি বলেছে, ‘আব কি বার ৪০০ পার'। কী কী ভাবে চারশো আসন দখল করা যায় তার সমস্ত কৌশল-ছল বিজেপি প্রয়োগ করে ফেলেছে। খোদ নরেন্দ্র মোদি মসনদ ধরে রাখতে এত মরিয়া যে দেশের সহনাগরিক মুসলিম সম্প্রদায়কে নিয়ে অকথ্য নোংরা মন্তব্য করে চলেছেন তিনি। দেশকে ঘৃণা দিয়ে ভরিয়ে ভোটবাক্সে লাভের গুড় তুলতে চাইছেন মোদি-শাহরা। তাই ভোটের মাঝেও হিন্দুদের ভোট যাতে কোনওভাবেই হাতছাড়া না হয় সেই কারণে, ফের নাম বদলকে হাতিয়ার করে মাঠে নেমেছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। এর আগে উত্তরপ্রদেশের একাধিক 'মুসলিম' এলাকার নাম তিনি পাল্টে দিয়েছেন। মুঘলসরাই স্টেশন হয়ে গিয়েছে পণ্ডিত দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন। এবার আকবরপুরের নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়েছেন যোগী।

"শহরের নাম উচ্চারণ করলে মুখের স্বাদটাই খারাপ হয়ে যায়। নিশ্চিন্ত থাকুন, এই সমস্ত জিনিস বদলে যাবে। আমাদের অবশ্যই আমাদের দেশ থেকে ঔপনিবেশিকতার সমস্ত অবশিষ্টাংশ নির্মূল করতে হবে এবং আমাদের ঐতিহ্যকে সম্মান করতে হবে,” বলছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী। আকবরপুর ছাড়া রাজ্যের আলিগড়, আজমগড়, শাহজাহানপুর, গাজিয়াবাদ, ফিরোজাবাদ, ফারুখাবাদ এবং মোরাদাবাদ সহ অসংখ্য জেলার নাম পরিবর্তনের কথা বিবেচনা করা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ২০১৭ সালে দায়িত্ব নেওয়ার পর ঐতিহাসিক 'পরাধীনতার প্রতীক'-গুলিকে নির্মূল করার অভিযানে নামেন। পরাধীনতা চিহ্ন মোছা বলতে, বলতে দেশের মুসলিম শাসকদের হাতে থাকা এলাকার নাম, স্টেশনের নাম, রাস্তার নাম বদল। বুঝিয়ে দেওয়া, এসব মুসলিমগন্ধী নামের এদেশে ঠাঁই নেই। নাম বদল করতে গিয়ে রাজ্যের অসংখ্য রাস্তা, পার্ক, চৌরাস্তা এবং ভবনের নাম রাখা হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর নামে।

শুধু লখনউতেই রয়েছে অটল বিহারী বাজপেয়ী রোড, অটল চৌরাহা, অটল বিহারী বাজপেয়ী সম্মেলন কেন্দ্রে, অটল সেতু এবং অটল বিহারী কল্যাণ মণ্ডপ। দেশের চতুর্থ ব্যস্ততম রেল জংশন ঐতিহাসিক মুঘলসরাই রেল স্টেশনের নাম পরিবর্তন করে দীনদয়াল উপাধ্যায় জংশন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন- ঐতিহাসিক আলিগড়ের নাম বদলে দিচ্ছে বিজেপি? ‘আলি’ বাদ দিয়ে বসছে…

২০১৯ সালের কুম্ভ মেলার ঠিক আগে, রাজ্য সরকার এলাহাবাদের নাম বদলে করে প্রয়াগরাজ। অনেক সাধুরা দাবি করেন, এই ঐতিহাসিক স্থানটির আসল নাম ছিল প্রয়াগরাজই। মুঘলরা তা পরিবর্তন করে এলাহাবাদ করে। ফৈজাবাদের নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় অযোধ্যা এবং ঝাঁসি রেল স্টেশনের নামও রাখা হয় রানি লক্ষ্মী বাইয়ের নামে।

সম্প্রতি, আলিগড়ের মিউনিসিপ্যাল সংস্থাগুলি শহরের নাম পরিবর্তন করে হরিগড় করার দাবিতে একটি প্রস্তাব পাস করেছে। ফিরোজাবাদের নাম পরিবর্তন করে চন্দ্রনগর করার প্রস্তাবও দেওয়া হয়েছে। মইনপুরীর নাম পরিবর্তন করে মায়াপুরী করার দাবি জানানো হয়েছে।

রাজ্যের মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী গুলাব দেবী দাবি করেছেন, তাঁর নিজের জেলা সম্বলের নাম পরিবর্তন করে পৃথ্বীরাজ নগর বা কল্কি নগর করা হোক। প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক দেবমণি দ্বিবেদী দাবি করেছিলেন, সুলতানপুর জেলার নাম পরিবর্তন করে কুশভবানপুর করা হোক। রামের পুত্র কুশ নাকি এই শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। সাহারানপুরের দেওবন্দ বিধানসভা আসনের বিজেপি বিধায়ক ব্রজেশ সিংও দেওবন্দকে দেববৃন্দে পরিবর্তন করার দাবি জানিয়েছেন। গাজিপুরের মহম্মাবাদ আসনের প্রাক্তন বিজেপি বিধায়ক অলকা রাই দাবি করেছেন, গাজিপুরের নাম বদলে গাধিপুরী করার।

নাম বদল করা আপাততদৃষ্টিতে কম গুরুত্বপূর্ণ মনে হতে পারে ঠিকই। তবে নামে এখানে আসে যায়। বিশেষ ধর্মের নাম নিলে 'স্বাদ খারাপ' হয়ে যাওয়ার কথা যখন একটি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, যখন বেছে বেছে মুসলিম নাম বাদ দিয়ে 'সনাতনী' নামের জিগির তোলা হয় তখন সেই দেশ যে কোনওভাবেই আর ধর্ম নিরপেক্ষ থাকে না তা খুব স্বাভাবিকভাবেই স্পষ্ট করে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। সংবিধান বদলের আগেই মাথায় বদল হয়ে যায়।

More Articles