দেশ জুড়ে আবার নোট বাতিলের জল্পনা, কীভাবে হারাল ২০০০ টাকার নোট?
Demonetization : ২০০০ টাকার নোট কি বাতিল হয়ে যাচ্ছে? রাজ্যসভায় বড় দাবি বিজেপি সাংসদের
দেখতে দেখে ৬ টা বছর পেরল নোটবন্দি। রাতারাতি সেদিন বাজার থেকে বিদায় নিয়েছিল পুরনো ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট। পুরনোকে সরিয়ে জায়গা দখল করেছিল নতুন ধূসর বর্ণের ৫০০ টাকা ও গোলাপী রঙের চকচকে ২০০০ হাজার টাকার নোট। এটা অবশ্য একা আসেনি, সঙ্গে করে নিয়ে এল ১০, ২০, ৫০, ১০০ টাকার নতুন নোট, নিয়ে এলো নিয়া ২০০ টাকার নোটও। যদিও পুরনো ৫০০ আর ১০০০ টাকা ছাড়া বাকি নোটগুলি এখনও বাজারে সচল, কিন্তু অচিরেই কমে গিয়েছে সংখ্যাটা। ক্রমেই টাকার থলিতে তলানিতে ঠেকেছে তারা। হাতে হাতে ঘুরেছে নতুন জমানা। কিন্তু এসবের মধ্যেও মূল কৌতুহল প্রথম থেকেই ঘিরে রেখেছিল ২০০০ টাকার নোটকেই। কেউ বলছিল এতে চিপ আছে, আবার কারোর দাবি ছিল এই ২০০০ টাকার নোট চাইলেও জাল করা সম্ভব নয়। এমন নানা মত আর তথ্যেকে সঙ্গে করেই বাজারে জাঁকিয়ে বসেছিল গোলাপি অর্থ। এমনকী একটা সময় এমন হয় যে, বাজারের এটিএমের বাইরে প্রায়শই কাগজ মেরে লেখা থাকতো “Only 2000/- available”।
সময় বোধ হয় কারোই একরকম থাকে না। বদল অনিবার্য। সেটা নোটের ক্ষেত্রেও যে ব্যতিক্রম নয় তার প্রমাণ এই নয়া ২০০০ এর নোটটিই। মাত্র ৬ বছরের মধ্যেই বাজার থেকে প্রায় উধাও হতে বসেছে ২০০০ টাকার নোট। হাটে-বাজারে সহজে আর তাকে দেখা যায় না। এর সাক্ষী আপনি নিজেও। হঠাৎ কারোর পকেটে একটা নোট মিললে যেন লটারি সম! কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি হল? কী কারণে অচিরেই ভিতরে ভিতরে হারিয়ে যেতে বসলো ২০০০ টাকার নোট? আসুন, জেনে নেওয়া যাক এর আসল কারণটা।
আরও পড়ুন - দ্বিতীয় দফার নোটবন্দি হয়ে গেছে চুপিসারেই! বিভীষিকার দিন ফিরবে আবারও?
প্রথমেই বলি ২০০০ টাকার নোট কিন্তু মোটেই বাতিল নয়। আগের মতো এখনও বৈধ সে। কিন্তু তা সত্ত্বেও গোলাপী নোট আর দেখতে পাচ্ছে না আমজনতা। এর কারণ জানতে তথ্য জানার আইনে আরটিআই করা হয়েছিল। তাতেই উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। বিগত তিন বছরে নাকি ছাপাই হয়নি কোনও নতুন ২০০০ টাকার নোট। ২০১৬-১৭ অর্থবর্ষে ৩,৫৪২৯.৯১ কোটি ২০০০ টাকার নোট ছাপার হয়েছিল। তারপর যত দিন গিয়েছে এই নোট ছাপার পরিমাণ ক্রমশ কমেছে। কেন্দ্রের তরফে এমনটাই জানানো হয়েছে।
নোট বাতিল অর্থাৎ Demonetisation-এর সময় ঢাকঢোল পিটিয়ে ২০০০ টাকার নোট বাজারে আনা হয়েছিল। তাকে ঘিরে বহু স্বপ্ন দেখানোও হয়েছিল সরকারের তরফে। বলা হয়েছিল এ এমনই অভিনব নোট যা বাতিল করা সম্ভব নয়। চিপ তত্ত্ব সামনে রাখা হয়েছিল। কিন্তু বিজ্ঞানের যাচ্ছে বারবারই হেরেছে খোদ বিজ্ঞানই। তাই বাজারে দুর্জন জুটতেও বিশেষ সময় লাগেনি। যাবতীয় আশা মিথ্যে প্রমাণ করে ব্যাপক জাল হয়েছে ২০০০ টাকার নোট। ফলে তা ঘিরে জল্পনা উঠেছে তুঙ্গে।
নোট বাতিল নিয়ে বিরোধীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছিল সরকারকে। তবে তার জবাবও দিয়েছে সরকার। সরকারের তরফে সেই সময় দাবি করা হয়েছিল ভুয়ো নোট, সন্ত্রাসবাদী আর্থিক সহায়তা, কালো টাকা ও কর ফাঁকি আটকাতেই নোট বাতিল করা হয়েছিল। কিন্তু এই পদ্ধতির ফল স্বরূপ যে নয়া নোট বাজারে আনা হল তা ঘিরেও যখন আবারও একই সমস্যা, তখন সেটাও বাতিল করা ছাড়া উপায় কি! তাই সরাসরি বাতিল না করে অন্য পথে হেঁটেছে এবার কেন্দ্র। উৎপাদন বন্ধ করে আস্তে আস্তে বাজার থেকে তুলে নিতে চাইছে নোটটি। এতে আদপে ক্রেতা বিক্রেতা দুপক্ষই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাবে,এমনটাই মনে করছে সরকার। সম্প্রতি লোকসভায় শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানান, ২০০০ টাকার নোটের বেআইনিভাবে ব্যবহার হচ্ছে। ২০০০ টাকার নোট নিয়ে পুনরায় চিন্তা ভাবনা করার প্রয়োজন রয়েছে। তাঁর এই কথা যে ২০০০ টাকার নোট বাতিলের জল্পনাকে আরও উস্কে দিল সে কথা বলতেই হয়। এখন অপেক্ষা কেবল সরকারি ঘোষণার।