হাথরাসের ছায়া ওড়িশাতেও! ভক্তদের নিরাপত্তা নিয়ে যে প্রশ্ন তুলে দিল পুরীর রথযাত্রা

Rath Yatra Puri: সেই রথযাত্রার অনুষ্ঠানেই প্রবল ভিড়ে রবিবার মৃত্যু হয়েছে দু'জনের। প্রায় পদপিষ্ট হওয়ার মতোই পরিস্থিতি তৈরি হয় সেদিন ওড়িশাতেও। ঘটনায় অন্তত ১৩০ জন জখম হয়েছেন বলে খবর।

দু'দিন আগেই ধর্মীয় একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে শতাধিক লোকের মৃত্যু হয়েছিল পদপিষ্ট হয়ে। উত্তরপ্রদেশের হাথরাসের সেই ঘটনার ভয়াবহতা এখনও টাটকা। এর মধ্যেই ফের একই রকম বিপত্তি পুরীর রথযাত্রায়। বিশ্ববিখ্যাত পুরীর রথযাত্রা। যেদিন পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রা রথে চেপে গুন্ডিচায় যান মাসীর বাড়িতে। অগনিত ভক্ত জড়ো হন এই রথযাত্রা প্রত্যক্ষ করতে। একবার রথের দড়ি ছোঁয়ার জন্য উন্মুখ হয়ে ওঠেন মানুষ।

সেই রথযাত্রার অনুষ্ঠানেই প্রবল ভিড়ে রবিবার মৃত্যু হয়েছে দু'জনের। প্রায় পদপিষ্ট হওয়ার মতোই পরিস্থিতি তৈরি হয় সেদিন ওড়িশাতেও। ঘটনায় অন্তত ১৩০ জন জখম হয়েছেন বলে খবর। রবিবার রথযাত্রা চলাকালীন ভগবান বলভদ্রের রথ টানার সময় শ্বাসরুদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয় এক ভক্তের। অন্য একটি ঘটনায় রথের চাকার নিচে পড়ে যান এক ভক্ত। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয় বলে খবর। স্বাভাবিক ভাবেই তীব্র আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে ঘটনায়।

আরও পড়ুন: ৮০ হাজারের অনুমতি নিয়ে ২.৫ লক্ষ সমাগম! হাথরাসে কেন মহিলারাই পদপিষ্ট হলেন বেশি?

প্রতিবছর রথযাত্রার দিন পুরীর জগন্নাথ মন্দির থেকে গুন্ডিচায় মাসির বাড়ির উদ্দেশ্য়ে রওনা হন জগন্নাথ, বলরাম ও শুভদ্রার রথ। আটদিন পরে উল্টোরথের দিন তাঁরা আবার ফিরে আসেন পুরীর মন্দিরে। গোটা রথযাত্রার অনুষ্ঠানের জন্য বিপুল জনসমাগম হয় পুরীতে। সকলেই চান, একটি বার রথের রশিতে হাত ছোঁয়াতে। বিশ্বাস, এর মতো পুণ্যের কাজ হয় না। আর সেই পুণ্য সংগ্রহ করতে এসেই বিপদে পড়লেন অসংখ্য ভক্ত।

জানা গিয়েছে, যে বৃদ্ধ বলরামের রথ টানতে গিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন তিনি বোলাঙ্গির জেলার বাসিন্দা। সঙ্গে সঙ্গেই তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্য়ে শ্বাসপ্রশ্বাস চলছিল তাঁর। হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সিপিআরও দেওয়া হয়। কিন্তু শেষপর্যন্ত বাঁচানো যায়নি। অন্যদিকে বছর পঁয়তাল্লিশের শ্যাম সুন্দর কিসান রথের রশিতে টান দিতে পৌঁছন জগন্নাথ মন্দির থেকে ঝাড়সংগুড়া জেলার কুকুসঙ্গ গ্রামে। হঠাৎই ভিড়ের চাপে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। সে সময় রথের চাকার নীচে পিষে যান তিনি। হাসপাতালে নিয়ে গেলেও বাঁচানো যায়নি শ্যাম সুন্দরকে। মৃতদের পরিবারকে চার লক্ষ করে আর্থিক সাহায্যের কথা ঘোষণা করেছেন ওড়িষার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। রাজস্ব দফতরের মন্ত্রী সুরেশ পুজারি হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান। তাঁর কথায়, 'ভিড়ের চাপে পদপিষ্ট হয়ে, ডিহাইড্রেশন, ডিসেন্ট্রি সহ একাধিক কারণে অনেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। তবে কারও অবস্থাই আশঙ্কাজনক নয়। সকলেই বিপন্মুক্ত।'

আরও পড়ুন:তাঁকে দেখতে গিয়েই পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১২১! কে এই হাথরাসের ভোলে বাবা?

বিভিন্ন হাসপাতাল এবং মেডিক্যাল ক্যাম্পে প্রায় ৬০০ জনের বেশি ভক্ত অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার প্রয়োজন ছুটে যান পুরীর রথযাত্রা চলাকালীন। তাঁদের মধ্যে অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে খবর। যদিও রাজ্যের স্বাস্থ্য আধিকারিক বিজয় মহাপাত্র জানান, সংখ্যাটি ১৩০। যেভাবে ধর্মের মোহে বারংবার দুর্ঘটনা ঘটছে দেশ জুড়ে, তা সত্যিই দুশ্চিন্তা করার মতোই। এবার হজ করতে গিয়ে অত্যাধিক গরমে মৃত্যু হয়েছে অজস্র পুণ্যার্থীর। তার মধ্যে রয়েছে অসংখ্য ভারতীয়ও। দিন কয়েক আগেই উত্তরপ্রদেশের হাথরাসে এক স্বঘোষিত ধর্মগুরুর সৎসঙ্গে গিয়ে মৃত্যু হয় শতাধিক মানুষের। তার পরে এই রথযাত্রায় দুর্ঘটনা। পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি। সব মিলিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে ভক্তদের নিরাপত্তা ও প্রশাসনিক তৎপরতা নিয়েই।

More Articles