চেহারায় ১০০ হাতির সমান! দৈত‍্যাকার ডাইনোসরের কঙ্কাল উদ্ধার তোলপাড় বিশ্বজুড়ে

ডাইনোসরের প্রতিটি কঙ্কালেই লুকিয়ে থাকে নতুন অজানা রহস্য। সম্প্রতি সেই রহস্যের নতুন অধ্যায় খুলে গেল পর্তুগালের এক শহরে।

পৃথিবীর সৃষ্টিলগ্নে কোনও প্রাণের চিহ্ন ছিল না। বহু কোটি বছর পর, ধীরে ধীরে গাছপালা, জীবজন্তু ও মানুষের উদ্ভব ঘটেছে। আবার বিবর্তনের নিয়মে পৃথিবী থেকে হারিয়েও গেছে বহু প্রাণ। আজ কোটি কোটি বছর আগের সেই বিলুপ্ত প্রাণের খোঁজ মেলে মাটির তলায়, যা ফের একবার এই সভ্য সমাজকে আদিম যুগের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়। তেমনই এক বিলুপ্ত প্রাণী ডাইনোসর। অদ্ভুত দৈত্যাকার সেই প্রাণীকে ঘিরে আমাদের কৌতূহলের অন্ত নেই। ডাইনোসরের প্রতিটি কঙ্কালেই লুকিয়ে থাকে নতুন অজানা রহস্য। সম্প্রতি সেই রহস্যের নতুন অধ্যায় খুলে গেল পর্তুগালের এক শহরে। চলতি বছরে এই সংক্রান্ত গবেষণায় একাধিক নতুন তথ্য পাওয়া গেছে।

ডাইনোসরের জীবাশ্ম উদ্ধার
বাড়ির পিছনের বাগান পরিষ্কার করে এক ব্যক্তি তোড়জোড় শুরু হয়েছিল নতুন ঘর তৈরির। সেইমতো খোঁড়াখুঁড়ির কাজ শুরু করান গৃহকর্তা। কিন্তু মাটি খুঁড়তেই অবাক হয়ে যান পর্তুগিজ ওই ব্যক্তি। নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তিনি। বিশ্বের সর্বকালের বৃহৎ প্রাণী ডাইনোসরের কঙ্কাল দেহটি তাঁর বাড়ির বাগানে রয়েছে, একথা গোটা দুনিয়ার মতো গৃহকর্তার কাছেও ছিল অজানা। যতদূর জানা যায়, সদ্য উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি এখনও পর্যন্ত ইউরোপে আবিষ্কৃত সবচেয়ে বড় আকারের ডাইনোসরের দেহের ধ্বংসাবশেষ।

শহরের মাঝামাঝি একটি জায়গার নাম পোমবল। ২০১৭ সাল নাগাদ পোমবলের অধিবাসী এক পর্তুগিজ ব্যক্তি নতুন ঘর তৈরির জন্য তাঁর বাড়ির পিছনের জমিতে কাজ শুরু করেন। খোঁড়াখুঁড়ি শুরু হতেই সেই জমি থেকে আবিষ্কার করেন সরোপদ প্রজাতির একটি ডাইনোসরের কঙ্কাল। পরে তিনি লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। বিজ্ঞানীদের মতে, এই সরোপদ ডাইনোসর পৃথিবীতে বসবাসকারী সবচেয়ে বড় স্থলজ প্রাণী। লম্বা গলা এবং লেজবিশিষ্ট চারপেয়ে এই ডাইনোসররা ছিল মূলত তৃণভোজী প্রাণী। চলতি মাসের শুরুর দিকে স্পেন ও পর্তুগালের জীবাশ্ম বিশেষজ্ঞরা মাটি খুঁড়ে বিজ্ঞানীরা ডাইনোসরেরে মেরুদণ্ড ও পাঁজরের হাড় কেটে পৃথক করেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, দৈত্যাকার এই প্রাণীটি উচ্চতায় প্রায় ৩৯ ফুট (১২ মিটার) এবং লম্বায় প্রায় ৮২ ফুট (২৫ মিটার)। প্রায় ১৫ কোটি বছরের পুরনো জুরাসিক সেডিমেন্টারি পাথরে এই জীবাশ্মটি পাওয়া গেছে। জীবাশ্মটির অবস্থান দেখে বিজ্ঞানীদের অনুমান, এটি এভাবেই মারা গিয়েছিল। তুলনামূলক অক্ষত কঙ্কালটি দেখে জীবাশ্মবিদরা মনে করছেন, আরও মাটি খুঁড়লে এই কঙ্কালের অদেখা অংশও বেরিয়ে আসতে পারে। লিসবন বিশ্ববিদ্যালয়য়ের ফ্যাকাল্টি অফ সায়েন্সের পোস্ট ডক্টরাল গবেষক এলিজাবেথ মালাফাইয়া জানান, "ডাইনোসরের শারীরবৃত্তীয় কাঠামো মেনে এই প্রাণীর সব পাঁজর খুঁজে পাওয়া একটি বিরল ঘটনা।"

আরও পড়ুন: কীভাবে বিলুপ্ত হয়েছিল ডাইনোসর? এতদিনে জানতে পারলেন বিজ্ঞানীরা

তবে চলতি মাসের শুরুতে আমেরিকার টেক্সাস শহরের কাছেও ১১৩ মিলিয়ন বছরের পুরনো ডাইনোসরের পায়ের ছাপ খুঁজে পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। প্রচণ্ড খরায় ডাইনোসর উপত্যকার স্টেট পার্কের নদী শুকিয়ে যেতেই দেখা মেলে এই পায়ের ছাপগুলির। এমনকী, আর্জেন্টিনাতেও এই মাসে বিশেষ প্রজতির ডাইনোসরের সন্ধান মিলেছে, যাদের লম্বা লেজ এবং পিঠে ধারালো বর্ম রয়েছে। উদ্ধার করা ডাইনোসরের কঙ্কালগুলি স্টেগোসরাস পরিবারের। পরবর্তীতে এই প্রজাতির নাম দেওয়া হয় জাকাপিল কানিউকুরা। জাকাপিল ছিল থাইরোফোরার অন্তর্গত প্রথম ডাইনোসর, যারা দু'পায়ে হাঁটত।এর আগে উত্তর গোলার্ধে এই প্রজাতির ডাইনোসর পাওয়া গেলেও দক্ষিণ গোলার্ধে এই প্রথম।

শুধু বিদেশে নয়, ভারতের মাটিতেও যে একসময় ডাইনোসর ঘুরে বেড়াত, তার প্রমাণ মিলেছে বারে বারে। এই বছরের জুন মাসেই মধ্যপ্রদেশ থেকে ডাইনোসরের ডিম উদ্ধার করা হয়। ওই একই সময়ে জাপানেও ধারালো ছুরির মতো থাবাযুক্ত ছোট হাতের ডাইনোসরেরও খোঁজ পাওয়া যায়। মধ্যপ্রদেশের বাঘ টাউনের কাছে বিশেষ প্রজাতির ১১টি ডাইনোসরের ডিম উদ্ধার করা হয়েছিল। যার মধ্যে একটি ডিম বেশ অস্বাভাবিক। বিশেষ এই ডিমে দেখা যায়, একটি ডিমের ভেতর আরেকটি ডিম- যা এই প্রাণীর বিবর্তনের ইতিহাস বদলে দিতে পারে বলে মনে করেন গবেষকরা।এই ধরনের ডিম এর আগে কখনও পাওয়া যায়নি।

প্রথমদিকে মনে করা হতো ডাইনোসরের ডিমের সঙ্গে কুমির বা কচ্ছপের ডিম ও প্রজননের মিল রয়েছে। কিন্তু এই ডিম উদ্ধারের পর মনে করা হচ্ছে, বিবর্তনের পথে নিজেকে বদলে ফেলেছিল ডাইনোসর। তবে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে এখনও বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে বলেই মনে করছেন গবেষক দল।

সদ্য পাওয়া জীবাশ্মগুলি থেকে কোন নতুন তথ্য উঠে আসে, এখন তাই জানার অপেক্ষায় গোটা দুনিয়া।

More Articles