কোনও অলৌকিক ঘটনা নয়, বিজ্ঞানের যে দুরন্ত কৌশলে তৈরি হলো রামলালার সূর্য তিলক
Ramlala Surya Tilak Science: অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ব্যবহার করে ৫.৮ সেন্টিমিটার লম্বা এক আলোর রশ্মি রামলালার কপালে ফেলা হয়েছে।
রামলালার কপালে জ্বলজ্বল করছে সূর্যতিলক। ঠিক যেমন ছোটবেলার পৌরাণিক সিরিয়ালে দেখা যেত, দেব-দেবীদের তৃতীয় নেত্র থেকে ঠিকরে বেরচ্ছে আলো! বাস্তবে তা ঘটল অযোধ্যার রাম মন্দিরে! তবে কোনও অলৌকিক শক্তিতে নয়, সম্পূর্ণ বিজ্ঞানের বলে। রাম নবমী উপলক্ষ্যে রামলালার কপালে যে 'সূর্য তিলক' নিয়ে হইহই পড়েছে তা আসলে বিজ্ঞানের দুর্দান্ত এক নজির।
অত্যাধুনিক বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ব্যবহার করে ৫.৮ সেন্টিমিটার লম্বা এক আলোর রশ্মি রামলালার কপালে ফেলা হয়েছে। অসাধারণ এই ঘটনাটি বস্তুত এক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাই বলা যায়, একটি বিশেষ যন্ত্রও তৈরি করা হয়েছিল এর জন্য। রাম মন্দিরে দশজন ভারতীয় বিজ্ঞানীর একটি দল রাম নবমীতে এই ঘটনাটি ঘটান। দুপুর ঠিক ১২টায় শুরু করে প্রায় ৩ থেকে সাড়ে ৩ মিনিট এই সূর্য তিলকের ঘটনা ঘটেছে। আয়না এবং লেন্সের ব্যবহার করে মূর্তির কপালে সূর্যালোক সুনির্দিষ্টভাবে ফেলা হয়েছিল।
মন্দির ট্রাস্ট পরিচালিত, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা আয়না এবং লেন্স দিয়ে একটি অত্যাধুনিক যন্ত্র তৈরি করেছেন। 'সূর্য তিলক মেকানিজম' বিজ্ঞানের এক সহজ অথচ অনন্য উদাহরণ। ডাঃ প্রদীপ কুমার রামাচারলা একজন বিজ্ঞানী এবং সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (সিবিআরআই), রুরকির পরিচালক। এই 'অপ্টোমেকানিকাল সিস্টেম' কীভাবে কাজ করেছে তার ব্যাখ্যা করেছেন তিনি৷
আরও পড়ুন- ভক্তদের ‘রামসেতু’ আদৌ কি ছিল? কী রহস্য লুকিয়ে এই ‘ভাসমান পাথরে’!
তিনি বলছেন, অপ্টো-মেকানিকাল সিস্টেমে চারটি আয়না এবং চারটি লেন্স থাকে যা বিভিন্ন কোণে পাইপের মধ্যে বসানো হয়। একটি অ্যাপারচার সহ সম্পূর্ণ পাইপটি ছাদে বসানো হয় যাতে আয়না এবং লেন্সের মাধ্যমে সূর্যের রশ্মিকে ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া যায়। শেষ লেন্স এবং আয়না সূর্যের রশ্মিগুলিকে রামের কপালের ঠিক মাঝে এনে ফেলে৷ রামের মূর্তিটি পূর্বদিকে মুখ করে বসানো। এই পদ্ধতিতে প্রথম আয়নাকে ঠিক এমনভাবেই কাত করে রাখা থাকে যাতে তাতে সূর্যরশ্মি এসে পড়ে। সূর্যের রশ্মিগুলিকে উত্তর দিকের দিকে দ্বিতীয় আয়নায় পাঠানোর হয় আবারও নির্দিষ্ট কোণে আয়না রেখে৷ প্রতিবছর যাতে রাম নবমীর দিনই সরাসরি ওই সূর্যরশ্মি কপালে পড়ে সেরকম বন্দোবস্তই করা আছে। এতে ব্যবহৃত সমস্ত পাইপ এবং অন্যান্য অংশগুলি যাতে দীর্ঘকাল ভালো থাকে তাই এগুলি পিতলের তৈরি। আয়না এবং লেন্সগুলিও উচ্চমানের। পাইপের মধ্যে কালো পাউডারের প্রলেপ দেওয়া আছে যাতে সূর্যের আলো বিক্ষিপ্তভাবে প্রতিফলিত না হতে পারে। অ্যাপারচারে একটি ইনফ্রারেড ফিল্টার গ্লাস ব্যবহার করা হয় যাতে সূর্যের তাপ তরঙ্গগুলি রামের মূর্তির কপালে না পড়ে।
'সূর্য তিলক' তৈরি করেছেন CBRI, রুরকি এবং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (IIAP), বেঙ্গালুরুর বিজ্ঞানীরা। একটি বিশেষ গিয়ারবক্স ব্যবহার করে এবং প্রতিফলিত আয়না ও লেন্স ব্যবহার করে সূর্যরশ্মির প্রতিফলনের সহজ নীতি মেনেই মন্দিরের তৃতীয় তলা থেকে অভ্যন্তরীণ গর্ভগৃহে সূর্যালোক নির্দিষ্টভাবে ফেলার প্রক্রিয়া তৈরি হয়েছে। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স এবং বেঙ্গালুরুর অপটিকা সংস্থা প্রযুক্তিগত সহায়তা করেছে এই সূর্য তিলক নির্মাণে।
আরও পড়ুন- কেন দক্ষিণ ভারতীয় প্রতিমার ছাঁচে গড়া রামলালার মূর্তি?
সেন্ট্রাল বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট, রুরকির বিজ্ঞানী ডাঃ প্রদীপ চৌহান বলেছেন, রাম নবমীর নির্দিষ্ট তারিখে বিদ্যুৎ, ব্যাটারি বা লোহা জাতীয় কোনও উপাদানগুলির উপর নির্ভর না করেই এই ঘটনা সময়মতো ঘটানোর জন্য ১৯টি গিয়ার যুক্ত জটিল ব্যবস্থা প্রয়োগ করা হয়েছিল।
জ্যোতির্বিদ্যার ক্ষেত্রে ভারতের প্রধান প্রতিষ্ঠান, বেঙ্গালুরুতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ অ্যাস্ট্রোফিজিক্স (IIA), চন্দ্র এবং সৌর (গ্রেগরিয়ান) ক্যালেন্ডারের মধ্যে আপাত বৈষম্যের পুনর্মিলনের জন্য একটি সমাধান তৈরি করেছে। "আমাদের অবস্থানগত জ্যোতির্বিদ্যায় প্রয়োজনীয় দক্ষতা রয়েছে," আইআইএ-র পরিচালক ডঃ অন্নপূর্ণি সুব্রামানিয়াম বিশদভাবে বলেছেন, "এই দক্ষতাটি নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োগ করা হয়েছিল যে সূর্যের রশ্মিগুলি 'সূর্য তিলক' দ্বারা প্রতীকীভাবে রাম লালার মূর্তিকে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিষেক করতে পারে। প্রতি রাম নবমীতে।"
খানিক এমনই 'সূর্য তিলক' প্রক্রিয়া ইতিমধ্যেই দেশে বেশ কিছু জৈন মন্দিরে এবং কোণারকের সূর্য মন্দিরে আছে কিন্তু সেগুলি ভিন্নভাবে তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং গোটা বিষয়টাই বিজ্ঞান। কেবল দেশের বিজ্ঞানীদের এখন রামের সেবায় বিজ্ঞানকে ব্যবহার করতে হচ্ছে, এই বিষয়টিই নতুন, বাকিটা সহজ।