এবার এক ট্রেনে মক্কা! হজযাত্রীদের জন্য যে অসাধ্য সাধনের পথে ভারত...
Train to Mecca from India for Haj: তীর্থযাত্রীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য, আসনে হেলান দিয়ে বসার জন্য এবং ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করার জন্য বিশাল জায়গা থাকবে ট্রেনের মধ্যেই।
প্রতি বছর, বিশ্বজুড়ে লক্ষ লক্ষ মুসলিম ধর্মাবলম্বী সৌদি আরবের মক্কায় হজ তীর্থযাত্রা করতে যান। ভারতের মুসলিমদের হজ করতে যেতে হলে স্বাভাবিকভাবেই বিমান ছাড়া তো গতি নেই। মক্কার যাত্রা ঐতিহ্যগতভাবেই বিমানযাত্রার সঙ্গে জড়িত। অথচ বিমান এমন এক পরিবহন মাধ্যম যা সবচেয়ে ব্যয়বহুল এবং সকলের পক্ষে বিমানে যাতায়াত করা সম্ভবও না। তাবলে, জীবনে একবার হজ করতে যাবেন না মানুষ? এবার হজযাত্রা হতে চলেছে আরও সহজ, সাশ্রয়ী। প্রথমে শুনে অবাক মনে হলেও, বিশ্বাস করতে না চাইলেও এটাই সত্যি যে এবার একটিই ট্রেনে সোজা হজযাত্রা করতে পারবেন ভারতের মানুষ! শুরু হতে চলেছে ভারত থেকে সৌদি আরব সরাসরি ট্রেন পরিষেবা।
কীভাবে সম্ভব এই সরাসরি ট্রেন পরিষেবা?
ভারত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং সৌদি আরবের মধ্যে রেল পরিকাঠামো প্রকল্প নিয়ে বিস্তর আলোচনার পর সরাসরি ট্রেনের মাধ্যমে হজ ভ্রমণের ধারণাটি সামনে আসে। এই আলোচনার লক্ষ্যই ছিল পরিবহন ব্যবস্থা উন্নত করা এবং জড়িত দেশগুলির মধ্যে সংযোগ বাড়ানো। ভারতীয় মুসলিমদের জন্য হজযাত্রা সহজ করার সম্ভাবনার কারণেই এই প্রস্তাবটি ব্যাপক সাড়া পায়।
কী কী সুবিধা পাবেন ট্রেনযাত্রীরা?
ভারত থেকে সৌদি আরব সরাসরি ট্রেন পরিষেবার বিভিন্ন দিক রয়েছে। বিভিন্ন দেশে উচ্চগতির ট্রেন প্রকল্পের সাফল্য, রেলওয়ে প্রযুক্তির অগ্রগতির কারণে ভারত থেকে সৌদি এক ট্রেনেই যাতায়াত বিষয়টি আর অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে না। হজযাত্রীদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি করা হাইস্পিড ট্রেন হজযাত্রার অর্থই বদলে দিতে চলেছে।
খরচ কেমন?
সরাসরি ট্রেন পরিষেবা চালু হলে হজযাত্রার জন্য ভারতীয় তীর্থযাত্রীদের জন্য খরচা একধাক্কায় হ্রাস পাবে। বিমানে ভ্রমণের ক্ষেত্রে প্রায়ই তীর্থযাত্রার মরসুমে টিকিটের দাম প্রচুর বেশি থাকে। ফলে সাধারণ মানুষের কাছে তীর্থে যাওয়ার জন্য এতটা টাকা জোগাড় করা বিপুল সমস্যা হয়ে ওঠে। ট্রেন সবসময়ই সাশ্রয়ী, ট্রেনের ভাড়া বিমানের থেকে কমই। যে কারণে ট্রেন চিরকালই মানুষের বিশ্বস্ত ও জনপ্রিয় পরিবহন মাধ্যম।
এই দূরপাল্লার ট্রেনে কী কী সুবিধা মিলবে?
ট্রেনগুলি বিমানের তুলনায় আরও প্রশস্ত এবং আরামদায়ক হতে চলেছে। তীর্থযাত্রীদের ঘুরে বেড়ানোর জন্য, আসনে হেলান দিয়ে বসার জন্য এবং যাত্রার সময় ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান করার জন্য বিশাল জায়গা থাকবে ট্রেনের মধ্যেই। দীর্ঘ যাত্রার যাতে কষ্টের না হয় তাই বিশ্রাম করার যথেষ্ট বন্দোবস্ত থাকবে।
ট্রেন যাত্রা সামাজিক যোগাযোগ বাড়ায়, ট্রেনযাত্রীদের মধ্যে আলাপ আলোচনার সূত্র তৈরি করে। ট্রেনে একসঙ্গে একই জায়গায় ভ্রমণ করার অভিজ্ঞতা তীর্থযাত্রীদের মধ্যে এক ভরসার সেতুও গড়ে তোলে। একে অন্যের অবস্থা, একে অন্যের গল্প, একে অন্যের সমস্যা স্বল্পকালের জন্যও ভাগাভাগি করতে করতে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে, অথবা সেই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতের অর্জন হয়ে থাকে।
ভ্রমণের সময় কতখানি কমবে?
ভারত থেকে সৌদি আরবে সরাসরি ট্রেন যাত্রার সঠিক ভ্রমণকাল, রেললাইনের পরিকাঠামো এবং ট্রেনের গতির মতো বিষয়গুলির উপর নির্ভর করে। তবে উচ্চগতির ট্রেন বিমান ভ্রমণের তুলনায় ট্রেন সফরের সময় উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করতে পারে।
সমস্যা কী কী?
ভারত থেকে সৌদি আরবে হজ ভ্রমণের জন্য সরাসরি ট্রেন পরিষেবার ধারণাটি জনপ্রিয় হলেও, সমস্যাও আছে ছায়াসঙ্গী হয়ে। ভারত ও সৌদি আরবকে সংযুক্ত করার জন্য রেল পরিকাঠামো নির্মাণের জন্য যথেষ্ট বিনিয়োগ এবং ব্যাপক পরিকল্পনার প্রয়োজন। ভূমি অধিগ্রহণ, লাইনের নকশা তৈরি এবং দেশগুলির মধ্যে সহযোগিতার মতো বিষয়গুলি প্রকল্পের সাফল্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
রেললাইনটি বিশ্বের সবচেয়ে কঠিন ভূখণ্ডের মধ্য দিয়ে পাতা হবে। গনগনে মরুভূমি, মালভূমি এবং পর্বতশ্রেণি- সবের মধ্যে দিয়েই পেরোতে হবে ট্রেনযাত্রীদের। ইরানের বেলুচিস্তান এবং জাগ্রোস পর্বতমালার রুক্ষ ভূখণ্ড অতিক্রম করা বড় চ্যালেঞ্জ হতে চলেছে। আরবের মরুভূমিতে প্রচণ্ড গরম রেললাইনের পক্ষে কতখানি সমস্যা তৈরি করবে তা এখনও ভাবাই যাচ্ছে না।
আন্তর্জাতিক সীমানা পেরিয়ে যাত্রীদের চলাচলের বিষয়টি জটিল। সরাসরি ট্রেন পরিষেবা নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হতে গেলে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতিগুলি সহজ এবং মসৃণ করতেই হবে৷
এই হজযাত্রা জুড়ে যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তীর্থযাত্রীদের সুরক্ষার জন্য ট্রেনে এবং স্টেশনে শক্তিশালী নিরাপত্তা ব্যবস্থা প্রয়োগ করতে হবে।