যৌথযাপনের শেষ ইউথেনেশিয়ায়! স্ত্রীর হাত ধরেই চিরঘুমে নেদারল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী

Duo Euthanasia: সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে একে অপরের সঙ্গে ছিলেন ড্রিস ভ্যান ও ইউজিনি। সেই বন্ধন ছেঁড়া গেল না মৃত্যুতেও।

ইউথেনেশিয়া বা নিষ্কৃতিমৃত্যু। তা কতটা ঠিক, কতটা ভুল, তা নিয়ে বিস্তর বিতর্ক রয়েছে বিশ্ব জুড়ে। কোনও কোনও দেশ এই ধরনের মৃত্যুকে স্বীকৃতি না দিলেও বেশ কয়েকটি দেশে তা বৈধ। বিশ্ববিখ্যাত চলচ্চিত্রকার গোদার ইউথেনেশিয়ার মাধ্যমেই স্বেচ্ছামৃত্যুবরণ করেছেন। যাকে বলা যেতে পারে অ্যাসিস্টেড সুইসাইড। ঠিক তেমন ভাবেই নেদারল্যান্ডের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ড্রিস ভ্যান অ্যাগটও সম্প্রতি মারা গিয়েছেন। ইউথেনেশিয়া মাধ্যমে মৃত্যু হয় ৯৩ বছরের ড্রিসের। এমন ঘটনা তো বিভিন্ন দেশে আখছার ঘটে। কিন্তু ড্রিসের সঙ্গে যা হয়েছে, তা বিরলতম। ড্রিস একা নন, তাঁর হাতে হাত রেখে একই সঙ্গে মৃত্যুবরণ করেছেন ড্রিসের স্ত্রী ইউজিনিও।

সত্তর বছরেরও বেশি সময় ধরে একে অপরের সঙ্গে ছিলেন ড্রিস ভ্যান ও ইউজিনি। সেই বন্ধন ছেঁড়া গেল না মৃত্যুতেও। বয়সজনীত নানা সমস্যা শরীরে এসে বাসা বেঁধেছিল। সেখান থেকেই ইউথেনেশিয়ার ভাবনা। তবে শর্ত ছিল একটাই। স্বামী-স্ত্রী একই সঙ্গে হাতে হাত রেখে মুখোমুখি হবেন জীবনের সেই চরম সত্যেরও। গত ৫ ফেব্রুয়ারি, নেদারল্যান্ডসের নিজমেগেন শহরে মৃত্যু হয় তাঁদের।

আরও পড়ুন: অ্যাসিস্টেড সুইসাইড করেছেন গোদার! ঠিক কেমন এই স্বেচ্ছামৃত‍্যুর ধরন?

বহু বছরের বৈবাহিক সঙ্গী। তার উপর এক অপরিসীম বন্ধুত্ব। কেউ কাউকে ছেড়ে থাকার কথা দুঃস্বপ্নেও কল্পনা করতে পারতেন না। ২০১৯ সাল নাগাদ মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণজনীত সমস্যার শিকার হন ড্রিস ভ্যান। ইউজিনিও অসুস্থ ছিলেন। মৃত্যুর সময় ড্রিস ভ্যানের হাত ছিল ইউজিনির হাতে। যেভাবে একদিন যৌথজীবনে প্রবেশ করেছিলেন তাঁরা, সেভাবেই জীবনসায়াহ্নে এসে হাতে হাত রেখেই সেই সফর শেষ করলেন এই দম্পতি।

Former Dutch PM And Wife Die "Together Hand In Hand" Via Duo Euthanasia

১৯৭৭ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত নেদারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ড্রিস ভ্যান। নেদারল্যান্ডেক খ্রিস্টান ডেমোক্রেটিক অ্যাপিল পার্টির প্রথম নেতাও ছিলেন তিনি। বরাবর হাসিখুশি এই নেতা বেশ জনপ্রিয় ছিলেন রাজনীতির ময়দানে। ভালোবাসতেন সাইকেল চালাতে। দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা ইজরায়েল-ফিলিস্তিনি সংঘাত নিয়ে বরাবর কঠোর অবস্থান ছিল ড্রিসের। ২০১৬ সালেই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে 'যুদ্ধপরাধী' হিসেবে চিহ্নিত করেন ড্রিস।

Former Dutch PM And Wife Die "Together Hand In Hand" Via Duo Euthanasia

 

নেদারল্যান্ডে ইউথেনেসিয়া ও অ্যাসিস্টেড সুইসাইড ২০০২ সাল থেকেই আইনসিদ্ধ। তবে তার বেশ কড়া নিয়মও রয়েছে। তবে ইদানীং সেখানে জনপ্রিয় হয়েছে ডুয়ো ইউথেনেশিয়ার ধারণা। বহু দম্পতিই বেছে নিচ্ছেন এই যৌথ নিষ্কৃতিমৃত্যু। অনেকেই সঙ্গীকে একা রেখে যেতে চাইছেন না। ২০২০ সালে নেদারল্যান্ডে মোট ২৬টি ডুয়ো ইউথেনেশিয়ার ঘটনা নথিভুক্ত হয়েছিল। ২০২২ সালে সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮-য়।

আরও পড়ুন: স্পাই নাকি প্রেমিক? পারমাণবিক বোমার সূত্র ‘পাচারের অভিযোগে’ মরতে হয়েছিল যাঁদের

ফেব্রুয়ারি প্রেমের মাস। একে ঋতুটা বসন্ত, তায় ভ্যালেন্টাইন্স ডে। যার নামে এই প্রেমের দিন, সেই সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের মৃত্যুদিন এটি। তাঁরই স্মৃতিতে বিশ্বজুড়ে পালিত হয় ভ্যালেন্টাইন্স ডে। ঠিক এমনই এক ফেব্রুয়ারির দিনে শেষ হল ড্রিস আর ইউজিনির পথচলা। তবে শেষ না বলে শুরু বললেও খুব ভুল হয় কি! যেভাবে হাত ধরে জীবন শুরু করেছিলেন একদিন, সেভাবেই সেই জীবনকে শেষও করলেন তাঁরা একসঙ্গে। এখন পাশাপাশি তাঁরা চিরঘুমে শায়িত। শুরু হল তাঁদের এক অন্যতর নিভৃত জীবন যেন। আর দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রীর এই ধরনের মৃত্যুকে বিরলের চেয়েও বিরলতম প্রেমের ঘটনা বলেই মনে করছেন সেখানকার বাসিন্দারা।

 

More Articles