লালগ্রহে ৩৭৮ দিন! নাসার কৃত্রিম অভিযানে মঙ্গলের মাটিতে ফলল শাকসবজিও
Mars Simulation Mission: আঙ্কা সেলারিউ, রস ব্রুকওয়েল, নাথান জোন্স ও কেলি হ্যাস্টনকে এই অভিযানের জন্য নির্বাচিত করে নাসা। এই মিশনটির নেতৃত্ব দিয়েছেন হ্যাস্টন।
মঙ্গলে ৩৭৮ দিন! এক বছরেরও বেশি সময় মঙ্গলে কাটিয়ে ফিরলেন চার বিজ্ঞানী। তবে এ মঙ্গল কৃত্রিম। পরীক্ষামূলক ভাবে তৈরি করা হয়েছে এই মঙ্গলের আবহাওয়া। তবে মঙ্গল কৃত্রিম হলে কী হবে, তাঁদের খাটনিতে কিন্তু ঘাটতি নেই একরত্তি।
মঙ্গলে যাওয়ার স্বপ্ন মহাকাশবিজ্ঞানীদের আজকের নয়। একের পর এক অভিযান পরিকল্পনা করা হয়েছে মঙ্গলে, তার কিছু সফল হয়েছে। কিছু মুখ থুবড়ে পড়েছে। ২০০৩ সালের ডিসেম্বরে ব্রিটিশ নভোযান বিগল-২ মঙ্গলের আবহাওয়া মণ্ডলে সফল ভাবে ঢুকতে পেরেছিল। এমনকী মঙ্গলপৃষ্ঠে নামতেও সফল হয় সেটি। তবে মঙ্গলের খবরাখবর বিজ্ঞানীদের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যর্থ হয় নভোযানটি। নাসা থেকে শুরু করে রাশিয়া, এর পর একের পর এক বহু দেশ মঙ্গল অভিযান করেছে। পিছিয়ে নেই ভারতও। সফল ভাবে মঙ্গলে মঙ্গলযান পাঠিয়েছিল ইসরোও। তবে মঙ্গলে প্রাণের সন্ধান আছে বলে যে জল্পনা কল্পনা করা হয় প্রায়শই, তাতে সিলমোহর দেওয়া যায়নি এখনও। আদৌ মঙ্গলে বেঁচে থাকার মতো আবহাওয়া রয়েছে কিনা, তা নিয়েও সংশয় যথেষ্ট।
আরও পড়ুন: মহাকাশে যদি স্পেসস্যুট না পরেন, কী ঘটবে আপনার দেহের সঙ্গে? চমকে উঠবেন এই উত্তরে
তার পরেও মঙ্গলকে দ্বিতীয় ঘরবাড়ি বানানোর পরিকল্পনা থেকে সরে আসেনি মহাকাশ গবেষণা সংস্থাগুলি। বারবার মঙ্গলে অভিযান হচ্ছে, হবে। এরই মধ্যে আবার মঙ্গলের আবহাওয়ায় যাতে মানুষ বেঁচেবর্তে থাকতে পারে, তার পরীক্ষামূলক ট্রায়ালও সেরে ফেলেছে নাসা। তাঁরা বিজ্ঞানীদের জন্য তৈরি করে দিয়েছিল এমন একটি পরিবেশ, যেমনটা ঠিক থাকার কথা লালগ্রহে। এমনকী সেখানকার অভিকর্ষ বল ঠিক যেমন, তেমনই অভিকর্ষ বল তৈরি করা হয়েছিল সেই কৃত্রিম পরিবেশেও।
আঙ্কা সেলারিউ, রস ব্রুকওয়েল, নাথান জোন্স ও কেলি হ্যাস্টনকে এই অভিযানের জন্য নির্বাচিত করে নাসা। এই মিশনটির নেতৃত্ব দিয়েছেন হ্যাস্টন। টেক্সাসের হিউস্টনে 'মার্টিয়ান' আবাসস্থলের ভিতরে তৈরি করা হয়েছিল ওই কৃত্রিম মঙ্গলগ্রহের পরিবেশ। গোটা পৃথিবীর সঙ্গে সম্পূর্ণ যোগাযোগবিচ্ছিন্ন অবস্থায় লালগ্রহে কাটিয়েছে ওই চার বিজ্ঞানী। তা-ও আবার একদিন দু'দিন নয়, টানা ৩৭৮ দিন।
না, মোটেও সহজ ছিল না এই ৩৭৮টি দিন। একে পরিবারের থেকে দূরে, তার উপর বাইরের পৃথিবীর সঙ্গে বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই। তার উপর মঙ্গলগ্রহের পরিবেশে হাঁটাচলা। কৃত্রিম ভাবে ওই হাঁটার পরিবেশ তৈরি করেছিল নাসা। জানা গিয়েছে, থ্রিডি প্রিন্টেড ১,৭০০ বর্গফুটের একটি জায়গায় বানানো হয়েছিল ওই কৃত্রিম পরিবেশ। যার নাম দেওয়া হয়েছিল মার্স ডুন আলফা। সেখানে ছিল শোয়ার ঘর, জিম, একটি কমন স্পেস এবং একটি খামার।
লাল বালি দিয়ে সাজানো সেই কৃত্রিম মঙ্গলে মার্কওয়াক পরিচালনার জন্য বিজ্ঞানীদের দেওয়া হয়েছিল বিশেষ স্যুটও। সেখানে রীতিমতো চাষবাসও করেছেন বিজ্ঞানীরা। ফলিয়েছেন শাকসবজি। নাসার ডেপুটি ডিরেক্টর স্টিভ কোয়ারনার জানান, বিজ্ঞানীরা এই কৃত্রিম মঙ্গলগ্রহে এক বছরেরও বেশি সময় কাটিয়েছেন। মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর প্রস্তুতির বড় একটি পদক্ষেপ হিসেবে এই মিশনকে দেখছে নাসা। ২০১৫-১৬ সালেও হাওয়াইতে এমন একটি মিশন নেওয়া হয়েছিল, যার নেতৃত্বে না থাকলেও তাতে অংশ নেয় নাসা।
আরও পড়ুন: মঙ্গল গ্রহে এখনও লুকিয়ে রয়েছে জলের অস্তিত্ব! যে আবিষ্কার চমকে দিল বিজ্ঞানীদেরও
সব ঠিক থাকলে আর্টেমিস প্রোগ্রামের আওতায় ২০৩০ সালের শেষে মঙ্গলে মানুষ পাঠানোর পরিকল্পনা নিয়েছে আমেরিকা। তার আগে এই কৃত্রিম মঙ্গল অভিযানের সাফল্য নাসার কাছে বড়সড় মাইলস্টোন বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।