প্যালেস্টাইনে ইজরায়েলি জবরদখলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে ৫২ দেশ! ফিরবে সুদিন?

Gaza-Israel War: ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনের ভূখণ্ডে জবরদখলের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে কাঠগড়ায় ইজরায়েল। এই প্রথম এমন একটি মামলায় ৫২টি দেশের বক্তব্য শুনবে আন্তর্জাতিক আদালত।

ইজরায়েল-গাজা যুদ্ধ পেরিয়ে গিয়েছে প্রায় ১৩৫ দিন। তবে যুদ্ধ থামার নাম-গন্ধ নেই। রাফাহ সীমান্তে এখনও একের পর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইজরায়েলি সেনা। ডেয়ার এল বালাহর কাছে চাষের ক্ষেতে ইজরায়েলি হামলায় ১০ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে রবিবার রাতেও। গত ২৪ ঘণ্টায় অন্তত ৮৩ জনের মৃত্যু হয়েছে গাজায়। এখনও পর্যন্ত সব মিলিয়ে অন্তত ২৯ হাজার ফিলিস্তিনির মৃত্যুর খবর মিলেছে এই যুদ্ধে। সেটা অবশ্য সরকারি হিসেব। বেসরকারি হিসেবে অঙ্কটা কোথায় পৌঁছেছে বলা কঠিন।

এর আগে ইজরায়েলের বিরুদ্ধে ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিসের কাছে গণহত্যার অভিযোগ এনেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এবার ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্যালেস্টাইনের ভূখণ্ডে জবরদখলের অভিযোগে আন্তর্জাতিক আদালতে কাঠগড়ায় ইজরায়েল। এই প্রথম এমন একটি মামলায় ৫২টি দেশের বক্তব্য শুনবে আন্তর্জাতিক আদালত। গাজা উপত্যকা, ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও পূর্ব জেরুজালেমে জারি করা ইজরায়েলি নীতির বিষয়ে নিজেদের যুক্তি আদালতের সামনে রাখবে ওই দেশগুলি। ১৯৪৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জাস্টিস। তার পর থেকে এই প্রথম বার মামলায় অংশ নিতে চলেছে এতগুলি পক্ষ। ১৯ ফেব্রুয়ারি, সোমবার ও ২৬ ফেব্রুয়ারি, সোমবার, এই দু'টি দিন শুনানির দিন ধার্য হয়েছে।

আরও পড়ুন: সাত দিন ধরে টানা যোগাযোগহীন গাজা, ব্ল্যাকআউটই কি গণহত্যার নয়া ‘অস্ত্র’ ইজরায়েলের?

আজ থেকে নয়, সেই ১৯৬৭ সাল থেকে বেআইনি ভাবে ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক ও পূর্ব জেরুজালেম দখল করে রেখেছে ইজরায়েল। সেই ১৯৪৮ সাল থেকে এমন সব বিধিনিষেধ প্যালেস্টাইনের উপরে চাপিয়ে রেখেছে, যাতে প্য়ালেস্টাইনের অধিকার অনেকটাই খর্ব হয়। নিজভূমেই একরকমভাবে পরাধীন প্যালেস্টাইনবাসী। একই রকম ভাবে গাজা ভূখণ্ডের উপরেও অন্যায় ভাবে জবরদখল বজায় রেখেছে ইজরায়েল। গাজায় কোন খাবার, কোনও ওষুধ, কতখানি জল বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছবে, তার রাশ ইজরায়েলের হাতে। চাইলেই যে কোনও সময় সে সব মৌলিক অধিকার বন্ধ করে দিতে পারে নেতানিয়াহু সরকার। তাদের এক ইঙ্গিতে অভুক্ত, জনহীন, নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়তে পারে গাজা। এমনই ব্যবস্থা। এমনকী তাদের নিজস্ব সেনাবাহিনী রাখার পর্যন্ত অধিকার নেই।

আর এই বজ্রআঁটুনির তলে তলে যে বিরুদ্ধস্বর গড়ে উঠবেই, তাতে আর আশ্চর্য কী! প্যালেস্টাইনকে স্বাধীন করার স্বপ্ন থেকেই একদিন দল বেঁধেছিল হামাসের মতো এমন অজস্র ছোট বড় সশস্ত্র সংগঠন। হামাস ক্রমে তার মধ্যে হয়ে উঠেছিল অন্যতম জঙ্গি সংগঠন, যারা গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে ঢুকে ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছিল। অসংখ্য নিরপরাধ ইজরায়েলি নাগরিককে হত্যা করা হয়। বন্দি বানিয়ে নিয়ে আসা হয় একগুচ্ছ ইজরায়েলিকে। তার পরেই হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে দেয় বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু সরকার।

তবে নামেই যুদ্ধ ছিল হামাসের বিরুদ্ধে। তার পর থেকে হামাসের নামে হাজার হাজার নিরপরাধ গাজার মানুষকে হত্যা করে গিয়েছে ইজরায়েল। যার বড় অংশ জুড়ে রয়েছে শিশুরা। হাসপাতাল, স্কুল, ধর্মস্থান, শরণার্থী শিবির বাদ যায়নি কিছুই। একের পর এক রকেট, বোমা, বিস্ফোরণ চালিয়ে গিয়েছে নেতানিয়াহুর সেনা। সেই থেকে পাঁচ মাস কেটে গেলেও গাজা ও ওয়েস্ট ব্যাঙ্ক এলাকায় ইজরায়েলি হামলা শুধু বেড়েইছে। অসংখ্য নিরীহ মানুষের মৃত্যু, পৃথিবীর একাধিক দেশের যুদ্ধ শান্তির প্রস্তাব, কোনও কিছুতেই কান দেয়নি ইজরায়েল।

Gaza Israel War International Court Of Justice Set To Hear Case Against Israels Alleged Occupation Of Palestinian Territories

গত সপ্তাহে ইন্টারন্যাশাল জাস্টিস কোর্টর তরফে জানানো হয়েছিল, প্রায় এক সপ্তাহ ধরে এই মামলার শুনানি চলবে। যেখানে ওই সমস্ত দেশ এবং তিনটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মতামত শুনবে আদালত। তারা কীভাবে ইসরায়েলের পদক্ষেপগুলিকে সমর্থন করছে বা বিরোধিতা করছে, তা বিস্তারিত ভাবে আদালতকে জানাবে তারা। এর মধ্য তেল আবিব এ ব্যাপারে মৌখিক ভাবে আদালতকে কিছু জানাতে আপত্তি জানিয়েছে। তার পরিবর্তে লিখিত ভাবে নিজেদের মতামত আদালতের কাছে দাখিল করবে বলে জানিয়েছে তারা।

২০২২ সালের ডিসেম্বর মাসেই ইজরায়েলের এই জবরদখল নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দায়ের হয়েছিল। যার নেপথ্যে ছিল জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ (UNGA)। আরব, রাশিয়া, চিন মামলার পক্ষে ভোট দিলেও বিপক্ষে কথা বলেছিল আমেরিকা, জার্মানি ও খোদ ইজরায়েল-সহ মোট ২৪টি দেশ। গত বছরের অক্টোবরের হামলার পরে যে যুদ্ধ শুরু হল দু-দেশের মধ্য, তা কিন্তু প্রথম নয়। এর আগেও বারবার সংঘাতে জড়িয়েছে ইজরায়েল ও প্যালেস্টাইন। নিজেদের অধিকারের দাবিতে মাথা তুলে দাঁড়াতে চেয়েছেন প্যালেস্টাইন। আর বারবার ব্যাপক ক্ষমতাবলে তাকে গুঁড়িয়ে দিয়েছে ইজরায়েল। যুদ্ধের আগেও বারবার ইজরায়েলি দখলদারদের নানাবিধ অত্যাচারের শিকার হয়েছে গাজা, ওয়েস্ট ব্যাঙ্কের মানুষ।

সম্প্রতি গাজায় ইজরায়েলি যুদ্ধকে হলোকাস্টের সঙ্গে তুলনা করেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জার্মানি স্বৈরাচারী হিটলার অসংখ্য নিরপরাধ ইহুদিকে নিধন করেছিল। যা গোটা সভ্যতার কাছে এক কালো অধ্যায় কার্যত। প্যালেস্টাইনের উপরে গত পাঁচ মাস ধরে যে ভয়াবহ হামলা চালিয়ে চলেছে ইজরায়েল তাঁকে সেই ঘটনার সমকক্ষ বলেই তোপ দেগেছেন ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট লুলা দ্য সিলভা। যদিও ব্রাজিলের সেই বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছে ইজরায়েল। তাদের দাবি, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টের দাবি হলোকাস্টের বীভৎসতা কমিয়ে দেয়। ব্রাজিলের ইহুদি সংগঠনগুলোও প্রেসিডেন্টের মন্তব্যের তীব্র নিন্দা করেন।


আরও পড়ুন: ইজরায়েলের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক আদালতে ‘গণহত্যা’র নালিশ! কবে ফিরবে গাজায় শান্তি?

যদিও গাজার পরিস্থিতি দেখলে সত্যিই আতঙ্ক হয়। এক এক করে বিকল হয়ে পড়ছে সেখানকার হাসপাতালগুলি। ত্রাণ পৌঁছেচ্ছে না। শরণার্থী শিবিরগুলিতেও বারবার নামছে ইজরায়েলি হামলা। এই পরিস্থিতিতে হামলার তীব্রতা কমানো তো দূরের, ক্রমাগত তা বাড়িয়েই চলেছে ইজরায়েল। এই পরিস্থিতিতে আন্তর্জাতিক আদালতের শুনানি, এত এত দেশের মতামতে কি সত্যিই চিড়ে ভিঁজবে। আর ঠিক কত মৃত্যু দেখার পর যুদ্ধের রাস্তা থেকে সরে আসবে ইজরায়েল। তার বোধহয় উত্তর আজও নেই পৃথিবীর কোনও শুভবুদ্ধিসম্পন্ন দেশের কাছেই।

 

More Articles