যন্ত্রণা দিয়ে যিশুকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়, তবুও কেন 'গুড ফ্রাইডে' বলা হয় এই দিনটিকে?
Good Friday History : যিশু নিজের জীবন ত্যাগ করেছিলেন, অজস্র কষ্ট, যন্ত্রণা, অত্যাচার সহ্য করেছিলেন। তাঁকে স্মরণ করতেই গুড ফ্রাইডে-র এমন বিশেষ দিন।
বছরে মোট ৩৬৫ দিন। আর এই এক বছরে অজস্র শুক্রবার আসে। কিন্তু সমস্ত কিছু বাদ দিয়ে একটি বিশেষ দিনের দিকেই নজর থাকে প্রত্যেক খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের। এপ্রিল মাসের সেই শুক্রবারকে গোটা পৃথিবী এক ডাকে চেনে ‘গুড ফ্রাইডে’ হিসেবে। প্রতিটি গির্জায়, ক্যাথিড্রালে মানুষের ভিড় জমে। মোমবাতি আর বাইবেলের মন্ত্রে স্মরণ করা হয় যিশু খ্রিস্টের আত্মবলিদানকে। মানবজাতির কল্যাণের জন্য যিশু নিজের জীবন ত্যাগ করেছিলেন, অজস্র কষ্ট, যন্ত্রণা, অত্যাচার সহ্য করেছিলেন। তাঁকে স্মরণ করতেই গুড ফ্রাইডে-র এমন বিশেষ দিন।
কিন্তু ইতিহাস ঘাঁটলে নানারকম তথ্য বেরিয়ে আসে এই দিনটি সম্পর্কে। বেশিরভাগ জায়গায় এই দিনটি ‘গুড ফ্রাইডে’ নামে পরিচিত হলেও, কেউ কেউ অবশ্য ব্ল্যাক ফ্রাইডে-ও বলেন। আজ থেকে নয়, বহু জুগ আগে থেকেই গোটা বিশ্বের খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীরা এই দিনটি পালন করে আসছেন। প্রাথমিকভাবে মনে হতে পারে, গুড ফ্রাইডে মানে বেশ শুভ দিন। কিন্তু ইতিহাস অন্য কথা বলে। সেখানে লেখা থাকে রক্ত, অত্যাচারের দাগ, লেখা থাকে পৃথিবীর এক অধ্যায়ের সূত্রপাত। এই গুড ফ্রাইডের হাত ধরেই খ্রিস্ট ধর্ম এক অন্য দিগন্তে পৌঁছে যায়।
আসলে কী এই গুড ফ্রাইডে? বাইবেল অনুযায়ী বলা হয়, শুক্রবারের এই বিশেষ দিনেই ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল যিশু খ্রিস্টকে। অবশ্য তার আগে রয়েছে আরও বড় ইতিহাস। ইজরায়েল, জেরুসালেম তখন রোমীয়দের অধীনে। ইহুদি পুরোহিতরাও জোরজুলুম চালাচ্ছে। রোমানদের সেই আগ্রাসন থেকে মুক্তি দিতেই এম মসিহার অপেক্ষা করছিলেন ইজরায়েলবাসী। প্রথমে যোহন দ্য ব্যাপ্টিস্টের হাত ধরে সেই স্বপ্ন দেখার শুরু। পরে যিশু খ্রিস্টের আবির্ভাব। মানুষকে ভালোবাসার বাণী, মানবতার পৃথিবী গড়ার কথা বলতেন তিনি। শিষ্যের সংখ্যাও বাড়ছিল। আর এটাই যিশুর বিরোধীদের চক্ষুশূলের কারণ হয়।
আরও পড়ুন : এখনও লেগে আছে যিশু খ্রিস্টের রক্তের দাগ! শ্রাউড অফ তুরিন কি সত্যিই ইতিহাস, না স্রেফ মিথ?
বাকি গল্পটা মোটামুটি সবারই জানা। যিশুরই এক শিষ্য যুদাসকে দলে টেনে নেওয়া হয়। তারপর তাঁর গ্রেফতারি, এবং অত্যাচারের পালা শুরু। কাঁটার চাবুক দিয়ে মেরে রক্তাক্ত করে ফেলা হয় যিশুকে। তারপর শোনানো হয় ক্রুশবিদ্ধের শাস্তি। এমনই এক শুক্রবারের দিন গলগথ পাহাড়ের ওপরে দুই অপরাধীর সঙ্গে যিশু খ্রিস্টকেও ক্রুশবিদ্ধ করা হয়। বলা হয়, টানা ছয় ঘণ্টা রক্তাক্ত, পেরেকবিদ্ধ অবস্থায় সেখানে ছিলেন যিশু। তারপর সেই শুক্রবারের দিনই প্রাণত্যাগ করেন তিনি।
মূলত গুড ফ্রাইডে যিশুর সেই ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাকেই স্মরণ করায়। কিন্তু একটা ব্যাপারে নিশ্চয়ই কিছু প্রশ্ন মনে আসতে বাধ্য। যিশুর যন্ত্রণাদায়ক মৃত্যু তো অবশ্যই শোকের, কষ্টের। সেটা তো খ্রিস্টানদের কাছে দুঃখের দিনই হবে। তাহলে কেন ‘গুড’ ফ্রাইডে বলা হয়? এ নিয়ে বেশ কয়েকটি তত্ত্ব রয়েছে। প্রথমত, মানবজাতির কল্যাণের জন্য, সমস্ত পাপের কষ্ট সহ্য করে যিশু মৃত্যুবরণ করবেন – এমনটাই কথা ছিল। যিশুর মৃত্যুর মধ্যে দিয়ে সেই নতুন সূর্যেরই শুরু হয়। খ্রিস্ট ধর্মও একটু একটু করে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। এই যে নিজেকে প্রবল যন্ত্রণায় মৃত্যুর কাছে সমর্পণ করা, এবং শেষ পর্যন্ত মানুষের মঙ্গলের প্রার্থনা করা, এর জন্যই নাকি এটি গুড ফ্রাইডে।
আরও পড়ুন : যুগ যুগ ধরে ভালোবাসার প্রতীক তিনি, সেন্ট ভ্যালেন্টাইনের হৃদয় আজও রাখা আছে এই জায়গায়
এছাড়াও মনে করা হয়, মৃত্যুর আগে যিশু যে কথাগুলি বলে গিয়েছিলেন, সেগুলি স্মরণ করা হয়ে থাকে এই দিনে। গুড মানে স্রেফ ভালো নয়, পবিত্রও বটে। তাই শুক্রবারের এই দিনটিকে পবিত্রতম হিসেবে চিহ্নিত করে প্রার্থনা করেন মানুষ। আরও একটি মত হল, আগেকার দিনে শুক্রবারের এই দিনটিকে গডস ডে বা ভগবানের দিন বলা হতো। তাই এখনও গুড ফ্রাইডে-র রীতি প্রচলিত।
অবশ্য গুড ফ্রাইডের সঙ্গে জুড়ে আছে ইস্টার সানডেও। বাইবেলের কাহিনি অনুযায়ী, ক্রুশবিদ্ধে মৃত্যু হওয়ার পর যিশুর দেহটিকে একটি কাপড়ে মুড়ে একটি গুহায় পাথর চাপা দিয়ে রাখা হয়। তারপর হঠাৎই তাঁর দেহটি সেখান থেকে অদ্রিশ্য হয়ে যায়। ক্রুশবিদ্ধ হওয়ার তিনদিন পর, রবিবার যিশু পুনরায় জীবিত হয়ে ওঠেন। সেই দিনটিই ইস্টার সানডে নামে পরিচিত।