কালীমূর্তি ভাঙার দৃশ্য বাংলাদেশের নয়, পশ্চিমবঙ্গের! জেনে নিন আসল তথ্য
Bangladesh Fake Video: ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুলতানপুরে আয়োজিত একটি কালীপুজোর। আসলে এটি ওই কালী প্রতিমার প্রাক-বিসর্জন দৃশ্য।
সম্প্রতি সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময়কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারি নিয়ে উত্তাল হয়েছে বাংলাদেশ। সেই আঁচ এসে পড়েছে ভারতেও। সংখ্যালঘু এই নেতার গ্রেফতারি নিয়ে কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে ভারত সরকার। অভিযোগ, গত কয়েক দিনে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর যেমন কিছু আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে তেমনই অনেক ক্ষেত্রে গুজবও ছড়ানো হয়েছে। ভারতে সমাজমাধ্যমে বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের উপর হামলা নিয়ে একাধিক ভুয়ো পোস্টও ছড়িয়ে পড়েছে বলে অভিযোগ।
সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়াতে একটি কালী মন্দিরের ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিওটিতে দেখা যাচ্ছে, মন্দিরের ভেতরে কালীমূর্তির মাথা উপড়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন দুই ব্যাক্তি। ওই মূর্তিটির পাশেই আরও একটি মূর্তি দেখা যাচ্ছে, যার মাথা থেকে ধড় আলাদা। এই দুই মূর্তির আশেপাশে মানুষ ভিড় করে রয়েছেন। ভিডিওটিতে দাবি করা হয়েছে, এই কালী মন্দিরটি বাংলাদেশের এবং যারা মূর্তি ভেঙেছেন তারা মুসলিম। সত্যি কি তাই?
ফ্যাক্ট চেক করে দেখা যাচ্ছে, ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুলতানপুরে আয়োজিত একটি কালীপুজোর। আসলে এটি ওই কালী প্রতিমার প্রাক-বিসর্জন দৃশ্য। বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক হিংসার সঙ্গে এই ভিডিওটির কোনও সম্পর্কই নেই।
ভিডিওটির মূল উৎস কী? 'সুলতানপুর কিরণময়ী পাঠাগার' নামের একটি ফেসবুক পেজে এই ভিডিওটি পাওয়া যাচ্ছে। পোস্ট করা পেজটির তথ্য অনুযায়ী, ভিডিওটি পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার সুলতানপুরে আয়োজিত একটি কালীপুজোর। ভিডিওটি করা হয়েছিল মূর্তি বিসর্জনের আগে। সুলতানপুর কিরণময়ী পাঠাগার এবং সুলতানপুর গ্রামের বাসিন্দারা মিলে এই পুজোর আয়োজন করেন। ১২ বছর অন্তর এই পুজোর প্রতিমা বিসর্জনের রীতি রয়েছে। এ বছরের পুজো অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২৬ নভেম্বর। অর্থাৎ ভিডিওটি সেই সময়েই।
সংবাদমাধ্যম বুম-এর একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, সুলতানপুর কিরণময়ী পাঠাগারের সদস্য দেবাশীষ মণ্ডল বলেছেন, ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে তা সুলতানপুর কালী মন্দিরেরই দৃশ্য। মন্দিরটিতে ১৩ ফুট উঁচু কালীমূর্তির পুজো করা হয়। বিসর্জন উপলক্ষ্যে ভক্তরা মন্দিরে উপস্থিত হয়ে ঐতিহ্য মেনে প্রথমে প্রতিমার বিভিন্ন অংশ ভাঙেন এবং তারপরে বিসর্জনের আয়োজন করা হয়। কেন মূর্তি ভাঙা হয়? কারণ, মূর্তিটি খুব উঁচু এবং ভারী, পাশাপাশি মন্দিরের দরজাও অনেক ছোট তাই এই রীতি। দেবাশীষ মণ্ডলের কথায়, প্রতিবার এভাবে কাঠামো ভেঙে ফেলা হলেও প্রতিমা বিসর্জন করা হয় ১২ বছরে একবার।
উল্লেখ্য, গত ৫ অগাস্ট বাংলাদেশে শেখ হাসিনা সরকারের পতন হয়। তারপর থেকে ক্ষমতায় রয়েছে মহম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। অভিযোগ, হাসিনা সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ বেড়েছে। চিন্ময়কৃষ্ণ সংখ্যালঘুদের অধিকারের দাবিতে বিভিন্ন প্রচার ও কর্মসূচি করেন। তাঁর মুক্তির দাবিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে প্রতিবাদ, বিক্ষোভ শুরু করেছেন বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা। বাংলাদেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিয়ে সমাজমাধ্যমে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে সাম্প্রদায়িক হিংসার গুজবও। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের তথ্য যাচাই বিভাগ এই গুজবগুলি যাচাই করে দেখেছে। তবে, অধিকাংশ সংবাদমাধ্যমও কার্যত বারবার দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দিচ্ছে বলেই অভিযোগ। এর ফলে অশান্তি কমার বদলে বাড়ার আশঙ্কাই দেখা দিচ্ছে। এত ভুয়ো তথ্য ছড়িয়ে যাওয়ার পরও কেন কোনও গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করা হচ্ছে না? উঠে আসছে সেই প্রশ্নই।