১০০ দিনে পূরণ কোন কোন প্রতিশ্রুতি? জনতার প্রত্যাশা মেটাতে পারল বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার?

Bangladesh Interim Government: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিনের পূর্তিতেও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছেন, 'কখন নির্বাচন হবে, সেটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়।'

বাংলাদেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকে অতিক্রান্ত একশো দিন। বিগত ১৫ বছর ক্ষমতায় ছিলেন হাসিনা। এখন ক্ষমতায় রয়েছেন নতুন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহম্মদ ইউনূস। ক্ষমতায় এসে অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্য, অর্থনীতি, নির্বাচনসহ বিভিন্ন বিষয়ে পরিবর্তন আনবে। অন্তর্বর্তী সরকারের ১০০ দিন পূর্তিতে দেশবাসীর উদ্দেশে ৪০ মিনিট ভাষণ দেন প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস। ভাষণে তিনি বলেছেন, শুধু জুলাই-অগস্টের হত্যাকাণ্ডেরই নয়, গত দেড় দশক ধরে যে অপকর্ম করেছে হাসিনা সরকার, সে সব কিছুর বিচার হবে। ভাষণে রাষ্ট্র-সংস্কারের ক্ষেত্রে সংস্কার কমিশনগুলি যে পদক্ষেপ নিয়েছে তার কথাও উল্লেখ করেছেন। দেখা যাক, এই ১০০ দিনে কী কী প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়েছে বাংলাদেশে? পাশাপাশি কোন কোন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে?


তিন মাসের পূর্তি উপলক্ষে অন্তর্বর্তী সরকার তাদের কাজের অগ্রগতি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে মূলত ৫টি ক্ষেত্রে অগ্রগতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ১০০ দিনে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনা সম্ভব হয়েছে। একই ভাবে, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিরও নাকি উন্নতি করা গেছে। বলা হয়েছে, সংস্কার কাজে দেশ অনেকটাই বিদেশি আর্থিক সহায়তা পেয়েছে, সংস্কারের রূপরেখা তৈরি করে কাজ শুরু হয়েছে এবং সরকার বন্যা মোকাবিলা করেছে। তবে আইনশৃঙ্খলা, দ্রব্যমূল্যর ক্ষেত্রে যে এখনও খামতি রয়েছে, তা- স্বীকার করেছেন উপদেষ্টারা।

আরও পড়ুন: মহম্মদ ইউনূসই অন্তত আরও চার বছর দায়িত্বে? নির্বাচন কবে হবে বাংলাদেশে?

ক্ষমতা পাওয়ার এক মাসের মধ্যেই সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, পুলিশ, বিচার বিভাগ, দুর্নীতি দমন ও জনপ্রশাসন সংস্কার— সব মিলিয়ে ৬টি আলাদা কমিশন গঠন করে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। পরবর্তী সময়ে আরও চারটি সংস্কার কমিশন (স্বাস্থ্যবিষয়ক, গণমাধ্যম, শ্রমিক অধিকারিক, নারী বিষয়ক) যুক্ত করা হয়েছিল। এই দশটি কমিশনের কোথায় কী কী সংস্কার হওয়া প্রয়োজন সেই নিয়ে ইতিমধ্যে কাজ শুরু হয়েছে। ডিসেম্বরেই এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা পড়ার কথা। এরপর রাজনৈতিক দলগুলির মতামত নিয়ে চূড়ান্ত সংস্কার কাজের সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে সরকারের তরফে। তবে কবে এই সংস্কার কাজ শেষ হবে তা এখনও জানানো হয়নি। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মুখে এই সংস্কার কাজ নিয়ে সুনাম শোনা গেলেও, তাঁরা বলছেন আরও দ্রুত এবং সক্রিয় ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল।

হাসিনা সরকারের প্রতি বাংলাদেশবাসীর ক্ষোভের অন্যতম কারণ ছিল দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, হাসিনা সরকারের ক্ষমতা হারানোর আগে বাংলাদেশে মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১১.৬৬%। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসার পর মুদ্রাস্ফীতি কমলেও খুচরো বাজারে এর তেমন প্রভাব পড়েনি। বর্তমান সরকার সুদের হার বাড়ানোর পাশাপশি নতুন করে টাকা না ছড়িয়ে মুদ্রাস্ফীতির পরিস্থিতি সামাল দিতে চেয়েছিল। কিন্তু তেল, চিনির মতো নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের শুল্কহার কমিয়েও দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না সরকার। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, অক্টোবরে দেশের সার্বিক মুদ্রাস্ফীতি ছিল ১০.৮৭%। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর থেকে এটাই সর্বোচ্চ মুদ্রাস্ফীতি। অক্টোবরে বাংলাদেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ১২.৬৬%। সরকার বলছে, সম্প্রতি বাংলাদেশে বন্যায় কৃষিক্ষেত্রে যে ক্ষয়ক্ষতি হল, এতেই পণ্যের দাম বেড়েছে।\

হাসিনা আমলের শেষ দিকে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে ১৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর সেটি বৃদ্ধি পেয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের তথ্য অনুযায়ী, দেশটি এখন ২০ বিলিয়ন ডলার ছুঁয়েছে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের ঢাকা কার্যালয়ের প্রাক্তন প্রধান অর্থনীতি বিদ জাহিদ হোসেন বিবিসি-কে বলেছেন, 'যে উদ্যোগ থেকে আমাদের সবচেয়ে বেশি ফলাফল দেখা যাচ্ছে, তা বৈদেশিক মুদ্রা বাজার ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্র। বাংলাদেশে ব্যাঙ্কের রিজার্ভ স্থিতিশীল অবস্থায় আছে। খুব একটা বেড়েছে তা নয়, তবে কমেনি।' সাংবাদিক সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে প্রত্যাশিত অর্জন সম্ভব হয়নি। একইভাবে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অগ্রগতিতেও ঘাটতি দৃশ্যমান। বিদ্যমান সিন্ডিকেটের শিকড় অনেক গভীরে এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যক্তির পরিবর্তন হলেও চর্চার পরিবর্তন সময়সাপেক্ষ।'

দেশটিতে টাকা ওঠানোর ক্ষেত্রে সীমা নির্ধারণ করা-সহ নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ব্যাঙ্কখাতের যে সংকট ছিল তা এখনও কাটিয়ে ওঠা যায়নি বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সরকার পক্ষ জানিয়েছিল, ব্যাঙ্কখাত সংস্কার ও অনিয়ম-দুর্নীতিরোধে একটি ব্যাঙ্কিং কমিশন গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কিছু ব্যাঙ্কের বোর্ড নতুন করে গঠন করা হয়েছে। খেলাপি ঋণ ও বিদেশে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক দুর্বল ব্যাঙ্কগুলিকে আর টাকা ধার দিচ্ছে না। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক পরামর্শ দিয়েছে, যাতে বাণিজ্যিক ভাবে ভাল পরিস্থিতিতে থাকা ব্যাঙ্কগুলি দুর্বল ব্যাঙ্কগুলিকে উঠে আসতে সাহায্য করে। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাঙ্কের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, 'গত ১৫ বছর ধরে দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে ব্যাঙ্কিং খাত থেকে কোটি কোটি টাকা লুটপাট য়েছে। তবে এখন কোনও আর্থিক প্রতিষ্ঠান যাতে বন্ধ হয়ে না যায়, সেজন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।' যদিও এখনও দুর্বল ব্যাঙ্কগুলি গ্রাহকের টাকা দিতে নাজেহাল পরিস্থিতিতে পড়ছে।

 

কার্যত দেশটির আইনশৃঙ্খলা নিয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ৫ অগস্টের পর হামলার শিকার হওয়া সব পুলিশ ফাঁড়ি এবং থানাগুলিকে এখনও পুরোপুরি কাজ করার মতো পরিস্থিতিতে আনা যায়নি। এতে বিভিন্ন এলাকায় অপরাধের ঘটনা অনেকটাই বেড়ে ছিল। ঢাকার মধ্যে মহম্মদপুর এলাকায় সবচেয়ে বেশি আইনশৃঙ্খলার অবনতি হয়েছে। ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা এখনও বন্ধ করা যায়নি। একটি বেসরকারি মানবধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র জানিয়েছে, গত তিন মাসে গণপিটুনিতে বাংলাদেশে প্রায় ৬৮ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সংস্থাটির তথ্য অনুযায়ী, ৭৮টি ধর্ষনের ঘটনা ঘটেছে। দেশটির বর্তমান সরকার পক্ষ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেপ্টেম্বরে সেনাবাহিনীকে বিশেষ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দিয়ে দিলেও পরিস্থিতি পুরোপুরি স্বাভাবিক করা যায়নি। তবে, সম্প্রতি সেনাবাহিনীরা এক ব্রিফিং-এ জানিয়েছেন, সাতশোটিরও বেশি বিশৃঙ্খলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা গিয়েছে। গণঅভ্যুত্থানে পর থানা থেকে লুঠ হওয়া সাত হাজার অস্ত্র, দু'লক্ষের বেশি গুলি উদ্ধার করা গিয়েছে। এর পাশাপশি লুঠপাটে জড়িত ২,৫০০ ব্যাক্তিকে গ্রেফতার করা সম্ভব হয়েছে।

সাংবাদিক সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'পার্বত্য চট্টগ্রামে একচ্ছত্র কর্তৃত্ব সত্ত্বেও শান্তি-শৃঙ্খলা নিশ্চিতে প্রত্যাশিত পর্যায়ে সেনাবাহিনীর ভূমিকার ঘাটতি এবং কোনও কোনও গণমাধ্যমের উপর উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ ও হুমকির হামলা-সহ বন্ধ করার তৎপরতা উদ্বেগের কারণ বলে মনে করছে টিআইবি।' বলে রাখা দরকার, নানান সময়ে নানান কারণে পার্বত্য জেলার সংঘাত সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নতুন সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পরও এই ঘটনাগুলি আটকানো যায়নি। পাহাড়ি সংগঠনগুলির দাবি, পার্বত্য অঞ্চল নিয়ে যে শান্তিচুক্তি রয়েছে, তা যথাযথ বাস্তবায়ন না হলে পার্বত্য জেলাগুলিতে সহিংসতার ঘটনা বন্ধ করা যাবে না।

অন্তর্বর্তী সরকার হিসেব দিয়েছিল, জুলাই-অগস্টের গণহত্যায় সাড়ে আটশোরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছিলেন। বেশিরভাগই নিহত হন গুলিবিদ্ধ হয়ে। এই নিয়ে কয়েকশো মামলা দায়ের হয়েছে। পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি অভিযুক্ত করা হয়েছে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী হাসিনা-সহ আওয়ামী লীগের একাধিক নেতাকর্মীদের। এদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। মামালাগুলির বিচার শুরু হয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে গ্রেফতারের জন্য রেড অ্যালার্ট জারির আবেদন করে আন্তজার্তিক পুলিশ সংস্থা ও ইন্টারপোলের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রধান কৌঁসুলির কার্যালয় । বর্তমান সরকার বলেছিল, গণঅভ্যুত্থানে ২০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। আহতরা কেউ চোখ, কেউ হাত, কেউ আবার পা হারিয়েছেন। অসংখ্য মানুষ পঙ্গু হয়েছেন। নতুন সরকার আহতদের চিকিৎসার জন্য এবং নিহত পরিবারগুলিকে আর্থিক সাহায্যের জন্য 'জুলাই শহিদ স্মৃতি' গঠন করেছিল। কিন্তু দেশটিতে এখনও আহতরা সুচিকিৎসার জন্য বিক্ষোভ দেখিয়ে চলেছেন।

১৯ নভেম্বর 'প্রথম আলো'র প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, এক সাংবাদিক আসিফ নজরুলকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, 'আপনার কোনa অতৃপ্তির জায়গা আছে কি না?' উপদেষ্টা উত্তর দেন, তাঁর অতৃপ্তির অনেক জায়গা আছে। প্রশাসনের জটিলতা বোঝাতে তিনি উদাহরণ টেনে বলেন, তাঁর দফতরে একবার দুই উপদেষ্টা আসেন। তিনি তাদের নির্দিষ্ট একটি দোকানের নাম করে বলেন সেখানে সিঙাড়া খুব ভাল। সেগুলি খাবেন কি না? তারা বলেন খাবেন। সেগুলো আনতে ১৫ মিনিট লাগার কথা কিন্তু এক ঘন্টা পাঁচ মিনিট সময় লেগেছিল। তখন তিনি ভেবে দেখলেন কেন এত সময় লাগল? উপদেষ্টা বলেন, 'দেখা গেল, আমি ওনাকে বলেছি, উনি ওনাকে বলেছেন। পঞ্চম ব্যক্তি যখন আনতে গেছেন, তখন উনি জানেনও না যে এটি জরুরী বা আইন উপদেষ্টা এটা চাইছেন। ফলে উনি ওঁর ইচ্ছেমতো সময়ে সেগুলি এনেছেন। এই ভাবেই আমাদের প্রশাসন চলছে।'

আরও পড়ুন: এবার বাংলাদেশকে ‘কালো তালিকায়’ ফেলবেন ট্রাম্প? কীভাবে সামলাবেন ইউনূস?

সাংবাদিক সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, 'কর্তৃত্ববাদের সৃষ্ট বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে ১০০ দিনে অন্তবর্তী সরকার অসংখ্য সময়োচিত এবং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে, পাশাপাশি কয়েকটি ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ থাকলেও নতুন বাংলাদেশ বিনির্মাণের পথে অগ্রগতি দৃশ্যমান। বিশেষ করে, কর্তৃত্ববাদী সরকার কর্তৃক সংঘঠিত নির্বিচার হত্যাকাণ্ড ও বহুমাত্রিক মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিচারপ্রক্রিয়া শুরু, আন্দোলনে আহতদের ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসা সেবাপ্রদানের উদ্যোগে, যদিও এক্ষেত্রে অপ্রাপ্তি ও অসন্তোষ রয়েছে; সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্টের মতো নিপীড়নমূলক আইন বাতিল, গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে সই, গুম বিষয়ক তদন্ত কমিশন গঠন, রাষ্ট্র সংস্কারের মূল খাতগুলোকে চিহ্নিত করে সংস্কার কমিশনগুলো গঠন, আর্থিক খাতে দৃশ্যমান পরিবর্তনের সূচনা, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আন্দোলনের চিরস্থায়ী স্বীকৃতি ও সম্মানের দৃষ্টান্ত হিসেবে গণভবনকে জাদুঘরে রূপান্তরের পদক্ষেপ, পূর্ব সরকারের মন্ত্রী-এমপি সহ কর্তৃত্ববাদের দোসরদের দুর্নীতির জবাবদিহি প্রক্রিয়া ও পাচারকৃত অর্থ ফিরিয়ে আনতে কৌশলগত পদক্ষেপ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।'

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ১০০ দিনের পূর্তিতেও প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছেন, 'কখন নির্বাচন হবে, সেটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত, এটা আমার সিদ্ধান্ত নয়।' সংবাদ সংস্থা এএফপিকে একটি সাক্ষাৎকারে নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস বলেছেন, 'এটি একটি প্রতিশ্রুতি, যা আমরা দিয়েছি। আমরা প্রস্তুত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই নির্বাচন হবে।' এই সংস্কারপর্ব কতদিনে শেষ হবে সে নিয়ে কোনও স্পষ্ট বার্তা এখনও দেয়নি সরকার পক্ষ। তবে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের অনেকেই মনে করছেন, সংস্কার প্রক্রিয়াতে দেশবাসীর অংশগ্রহণ থাকাটা জরুরি। তাই দ্রুত জাতীয় নির্বাচন হওয়া দরকার। কবে দেশটির নির্বাচন-সহ বাকি প্রতিশ্রুতি পূরণ হবে, সেই উত্তর অবশ্য বাংলাদেশবাসীর কাছে এখনও অধরা।

More Articles