উঠে এসেছে গুজরাত দাঙ্গার ভয়াবহতা, মোদিকে নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্র ফের তৈরি করল বিতর্ক
BBC Documentary on Narendra Modi protest : এটি নিয়েই আপাতত জলঘোলা চরমে। কারণ, বিবিসির এই বিশেষ তথ্যচিত্র নিয়েই প্রতিবাদে মুখর হয়েছে বিজেপি এবং কেন্দ্র সরকার।
‘নেশন ওয়ান্টস টু নো’ – ভারতের সংবাদমাধ্যম তো বটেই, জনজীবনেও ছড়িয়ে পড়েছে এই একটি বাক্য। কী করে, কার মুখ থেকে এই কথাটি সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে সেটা বলার নিশ্চয়ই দরকার নেই। বরং অন্য একটি প্রসঙ্গে আসা যাক। এখানেও প্রসঙ্গটি সেই ‘প্রশ্ন’ নামক শব্দে গিয়ে ঠেকেছে। তবে এটি ‘নেশন ওয়ান্টস’-এর বিষয় নয়। এখানে শিরোনামটি হল ‘ইন্ডিয়া : দ্য মোদি কোয়েশ্চেন’ (India : The Modi Question)। এই মুহূর্তে ভারতের সংবাদমাধ্যম ও রাজনীতিতে এই প্রসঙ্গটি অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক। যার অবতারণা করেছে বিবিসি।
জনপ্রিয় আন্তর্জাতিক মিডিয়া বিবিসি সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি বানিয়েছে। যার নাম India : The Modi Question। মূলত মুখ্যমন্ত্রী থেকে প্রধানমন্ত্রী হওয়া, এবং দুই রাজত্বেরই বিভিন্ন ঘটনা সেখানে উঠে এসেছে। রিচার্ড কুকসন এবং মাইক র্যা ডফোর্ডের প্রযোজনায় এই তথ্যচিত্রটি তৈরি হয়েছে। এটি নিয়েই আপাতত জলঘোলা চরমে। কারণ, বিবিসির এই বিশেষ তথ্যচিত্র নিয়েই প্রতিবাদে মুখর হয়েছে বিজেপি এবং কেন্দ্র সরকার।
আরও পড়ুন : গুজরাত দাঙ্গার লজ্জার অতীত ভুলিয়ে দিতেই ছাড়া পেল ধর্ষকরা? প্রশ্নে দু’ভাগ দেশ
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রকের পক্ষ থেকে এই ডকুমেন্টারিকে ‘প্ররোচনামূলক’ বলে অভিহিত করা হয়েছে। মন্ত্রকের পক্ষ থেকে অরিন্দম বাগচি জানিয়েছেন, এই তথ্যচিত্রটি একটি বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বানানো হয়েছে। বিশেষ কোনও এজেন্ডা রয়েছে এর পিছনে। এই তথ্যচিত্রের মধ্যে দিয়ে ঔপনিবেশিক মনোভাবই বারবার ব্যক্ত হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রক এই ব্যাপারটি নিয়ে বেশি কিছু বলতে চান না। খোদ ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনকও বিবিসির এই তথ্যচিত্রের বিরোধিতা করেছেন। যদিও এটি ভারতে এখনও মুক্তি পায়নি। অন্যদিকে বিবিসিরও পাল্টা দাবি, অত্যন্ত পড়াশোনা করে, গবেষণা করে এই তথ্যচিত্রটি নির্মাণ করা হয়েছে। সম্পাদনার কাজও খুব নিষ্ঠার সঙ্গে করা হয়েছে। ভারত সরকারকে আগেই বলা হয়েছিল, এই তথ্যচিত্র দেখে মন্তব্য করার জন্য। তখন তো তারা কিছু বলেনি!
যেটা নিয়ে এত বিতর্ক, সেই India : The Modi Question-এ আদতে কী দেখানো হয়েছে? সেখানে উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সময়ের কথা। উঠে এসেছে ২০০২ সালের ভয়াবহ গুজরাত দাঙ্গার কথা। যেখানে অজস্র সংখ্যালঘু মুসলিম মারা গিয়েছিলেন। পাশাপাশি সেই সময় থেকে আজ অবধি যে ধর্মীয় দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে ভারতে, সেটাও পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে দেখানো হয়েছে। সংখ্যাগুরু হিন্দুদের সঙ্গে সংখ্যালঘু মুসলিমদের সংঘর্ষ, তাদের মধ্যের অসহিষ্ণুতা, ক্লেশ, দ্বন্দ্ব – সেটাও দেখানো হয়েছে। পাশাপাশি ২০১৪ থেকে বর্তমান সময় অবধি প্রধানমন্ত্রী মোদির বিভিন্ন নীতির কথাও উঠে এসেছে। সামনে এসেছে কাশ্মীরের ৩৭০ ধারা রদ, এনআরসি, সিএএ প্রসঙ্গও। বিবিসির বক্তব্য, সবটাই করা হয়েছে অজস্র নথি, তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। সেইসঙ্গে অজস্র মানুষের বক্তব্যও নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুন : “তুমি আমার সঙ্গে গিয়ে করবে টা কী,” কেন যশোদাবেনকে বিয়ের কথা স্বীকার করতে চাননি মোদি?
এই সমস্ত ঘটনা তো সত্য। চোখের সামনে দেশজুড়ে ধর্মীয় দ্বন্দ্ব দেখা যাচ্ছে। গুজরাত দাঙ্গা তো গল্পকথা নয়! এনআরসি নিয়ে আজও সংঘাত চরমে। তাহলে আপত্তি কীসের সরকারের? ভয়? কীসের ভয়? ঔপনিবেশিকই বা বলা হচ্ছে কেন? কারণ, বিবিসির তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, ব্রিটিশ প্রশাসন গুজরাত দাঙ্গা নিয়ে অত্যন্ত উদ্বিগ্ন ছিল। তারা রিপোর্টও পেশ করেছিল। সেখানে নরেন্দ্র মোদিকে সরাসরি গুজরাত দাঙ্গার জন্য দায়ী করা হয়েছে। তাহলে কি আপত্তির জায়গা এখানে? যাই হয়ে যাক, নরেন্দ্র মোদিকে খারাপ দেখানো যাবে না?
অনেকে আবার এও বলছেন, বিবিসির আরও একটা তথ্যচিত্র করা উচিত উইনস্টন চার্চিলকে নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তখনও ভারত স্বাধীন হয়নি। ১৯৪৩ সালে এই দেশ দেখেছিল মন্বন্তর। দেখেছিল অজস্র মানুষের মৃত্যু, শকুনে ছিঁড়ে খাচ্ছে সেসব দেহ, দরজায় দরজায় ‘ফ্যান দাও’ আবেদন। এই নৃশংস, ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ যে মনুষ্যসৃষ্ট, সেটা একবাক্যে স্বীকার করে ইতিহাস। আর তার জন্য চার্চিলের দায় যে অনেকখানি সেটাও স্বীকার করেন ঐতিহাসিকরা। নেটিজেনদের একাংশের বক্তব্য, চার্চিল আর ‘৪৩-র দুর্ভিক্ষ নিয়ে একটা তথ্যচিত্র বানাক বিবিসি!
আরও পড়ুন : স্কুলে যাননি কোনওদিন, তবু চিকিৎসা করতেন! মোদির প্রয়াত মা হীরাবেনের যে জীবন অজানাই
প্রশ্নটি সঙ্গত, তাতে সন্দেহ নেই। কিন্তু তাই বলে মোদির প্রসঙ্গ এড়িয়ে গেলে তো চলবে না! আসছে বছর ২০২৪-এ লোকসভা নির্বাচন। নরেন্দ্র মোদির ইমেজে যাতে কোনও ‘কালি’ না পড়ে, তারই কি প্রচেষ্টা গেরুয়া শিবিরের? কেন্দ্র সরকারও কি সেই পথেই হাঁটছে? গুজরাত দাঙ্গাকে ‘আড়াল’ করা, উন্নয়ন ছেড়ে হিন্দু-মুসলিম দ্বন্দ্বকে সামনে আনা – এসব কি সত্যিই আজকাল অস্বীকার করা যায়? করা উচিত?