৭ অক্টোবরের স্মৃতি উস্কে ফের প্রত্যাঘাত, ইজরায়েলে আঘাত ফেরাল হামাস হিজবুল্লাহ

Israel-Hamas War: এক বছর পরেও সেই যুদ্ধের স্মৃতিতে প্রলেপ পড়া তো দূর, বরং লাগাতার যা ঘটছে আশেপাশে, তাতে সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিই যেন ফের তাজা হয়ে উঠছে ইজরায়েলের বাসিন্দাদের জন্য।

ঠিক এক বছর আগের কথা। ইজরায়েলকে নিশানা করে রকেট হামলা করে বসেছিল ফিলিস্তিনি সশস্ত্র সংগঠন হামাস। তার পর এক বছর ধরে গাজায় যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। দেখতে দেখতে সেই যুদ্ধের এক বছর পার। সেদিন ইজরায়েলে ঢুকে হামলার পর হামলা চালিয়েছিল হামাস জঙ্গিরা। অসংখ্য মানুষকে হত্যা করা হয়। অপহরণ করা হয় বহু নিরীহ ইজরায়েলিকে। এখন ইজরায়েলের প্রতিপক্ষ আর শুধু হামাস নয়। একই সঙ্গে লেবাননের জঙ্গিগোষ্ঠী হিজবুল্লাহ, ইয়েমেনের জঙ্গিগোষ্ঠী হাউথি এবং তাদের মদতদাতা ইরানের সঙ্গে যুদ্ধ চলছে ইজরায়েলের। সেই হামলার বছরপূর্তিতেও ইজরায়েলে চলল লাগাতার হামলা। হিজবুল্লাহ তো বটেই, ফের পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে ইজরায়েলে হামলা চালাল হামাসরা।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস জঙ্গিরা একসঙ্গে প্রায় পাঁচ-ছ'হাজার রকেট হামলা চালিয়েছিল ইজরায়েল জুড়ে। তবে সেসব ক্ষেপণাস্ত্রের হাত থেকে ইজরায়েলকে বাঁচিয়েছিল সেদিন তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আয়রন ডোম। সোমবার গত বছরের স্মৃতি উস্কে রাজধানী তেল আভিভকে নিশানা করে একগুচ্ছ রকেট হামলা চালিয়েছে হামাস। হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহরাও। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছে হিজবুল্লাহের ছোড়া রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলাকে প্রতিহত করতে এ বার ব্যাহত হয়েছে আয়রন ডোম। হাইফাতে ইজরায়েলি সেনার দুটি ঘাঁটি লক্ষ্য করে মোট আঠেরোটি হামলা চালিয়েছে হিজবুল্লাহরা। শুধু কি তাই, রবিবার ভোটে টাইবেরিয়াসের নিমরা ঘাঁটিতে সালভো নামে একটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। যার একটিও ঠেকাতে পারেনি ইজরায়েলের আয়রন ডোম। এখনও পর্যন্ত এই হামলাগুলিতে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি।

আরও পড়ুন: এক কক্ষপথ পার, নতুন সূর্যের অপেক্ষায় আজও যুদ্ধক্লান্ত গাজা

এদিকে, সোমবার থেকে উত্তর গাজার জাবালিয়া শরণার্থী শিবির এলাকায় ভারী বোমাবর্ষণ শুরু করেছে ইজরায়েল। সেই হামলায় অন্তত ৯টি ফিলিস্তিনি শিশু-সহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত ৭ অক্টোবরের পর থেকেই গাজায় হামলার পর হামলা চালিয়ে গিয়েছে ইজরায়েল। যে হামলায় এতদিনে গাজা মৃত্যুপুরীতে পরিণত হয়েছে। অন্তত ৪১,৯০৯ জনের মৃত্যু হয়েছে এখনও পর্যন্ত। জখম পেরিয়ে গিয়েছে এক লক্ষের হিসেব।

রবিবারই লেবাননের রাজধানী বেইরুটের দক্ষিণ শহরতলিগুলোকে নিশানা করে বিমান হামলা চালায় ইজরায়েল। মূলত ওই এলাকাতেই রয়েছে হিজবুল্লাহের ঘাঁটিগুলি। ইরান সমর্থিত ওই জঙ্গিগোষ্ঠীর একাধিক অস্ত্রভাণ্ডারের পাশাপাশি তাদের গোয়েন্দা সদর দফতরকেও নিশানা করে ইজরায়েলি সেনা। তারই পাল্টা হিসেবে ইজরায়েলকে নিশানা করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা করতে থাকে হিজবুল্লাহ। ঠিক সেই দিনেই, যে দিন হামাসের আক্রমণকে কেন্দ্র করে যুদ্ধের পথে এগিয়ে গিয়েছিল দেশটি। হিজবুল্লাহের তরফে জানানো হয়েছে, ফাদি ১ নামক ক্ষেপণাস্ত্র নিয়ে এদিন নিশানা করা হয়েছিল ইজরায়েলের তৃতীয় বৃহত্তম শহর হাইফার দক্ষিণের একটি সামরিক ঘাঁটিকে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ফের হুঙ্কার দিয়েছেন, জয় অধিকার করেই ছাড়বে তাঁর দেশ। তবে সেই লড়াই এখন আর শুধু হামাস বা হিজবুল্লাহতে সীমিত নেই। কার্যত মধ্যপ্রাচ্যের স্থিতবস্থাকে ঘেঁটে বিরাট আকার নিয়েছে সেই লড়াই বর্তমানে। আর ইজরায়েল এই মুহূর্তে গাজার পাশাপাশি লেবানন, ইরান এবং ইয়েমেনের সঙ্গেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

এদিকে গত ৭ অক্টোবরের স্মৃতিকে উস্কেই এই বছরেও ইজরায়েলে গুনে গুনে চারটি ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস। গত বছর ভোর সকাল সাড়ে ৬ টা তখন, নোভা সঙ্গীত উৎসবের রেশ নষ্ট করে ইজরায়েলে ভয়ঙ্কর হামলা চালিয়েছিল হামাস। সঙ্গীতের ওই উৎসবে খোলামখুচি গুলি চালায় তারা। হত্যা করা হয় চারশো ইজরায়েলি। সব মিলিয়ে সেই আক্রমণে অন্তত ১৪০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল সেদিন।

আরও পড়ুন:মৃত্যু উপত্যকা গাজা | এত লাশ রাখব কোথায়?

এক বছর পরেও সেই যুদ্ধের স্মৃতিতে প্রলেপ পড়া তো দূর, বরং লাগাতার যা ঘটছে আশেপাশে, তাতে সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিই যেন ফের তাজা হয়ে উঠছে ইজরায়েলের বাসিন্দাদের জন্য। কবে থামবে এই প্রাণঘাতী যুদ্ধ, কীভাবেই বা থামবে, তার উত্তর নেই কারওর কাছেই। যদিও এই পরিস্থিতিতে ইজরায়েলের পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর শোলজ। গত বছর হারিয়ে ফেলা মানুষগুলোর স্মৃতির উদ্দেশ্যে দেশের চারপাশে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন স্থানীয়রা। কবরস্থান, স্মৃতিশৌধে জড়ো হয়ে শত শত নিহতদের স্মরণ করেন তাঁরাই। পালন করেন নীরবতা। আর যুদ্ধশান্তির প্রার্থনা করেন সম্ভবত। আর যেন এমন দিন দেখতে না হয় কোনও দেশকে, সেই প্রার্থনায় একজোট হন। কিন্তু যেভাবে গোটা মধ্যপ্রাচ্যের স্থিরতা ঘেঁটে ক্রমাগত যুদ্ধের দিকেই এগিয়ে চলেছে ইজরায়েল, তাতে শান্তি কতদূর, তা নিয়ে যথেষ্ট সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

More Articles