ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কার করেন তিনিই! 'কালো ভারতীয়' এই চিকিৎসককে ফিরিয়েছিল হাভার্ড!
Yellapragada Subbarow and Cancer Medicine: এক সহকর্মী সুব্বারাওয়ের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে সেই সমস্ত আবিষ্কার এবং সেই সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র নষ্ট করে দেন।
২ ডিসেম্বর, ১৯৪৩। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধর আঁধার চারদিকে। জার্মানির বায়ুসেনা ইতালির এক বন্দরে আক্রমণ করে দেয়। ইতালির এই বন্দরটি তখন মিত্রশক্তির দখলে ছিল। জার্মানির আক্রমণে প্রায় সহস্রাধিক সৈন্য প্রাণ হারায়। এই আক্রমণের সময় বন্দরটিতে দাঁড়িয়েছিল জন হার্ভি নামের একটি জাহাজ। জাহাজটিতে ছিল একটি অতি গোপনীয় কন্টেনার। সেই কন্টেনারটিতে ছিল মাস্টার্ড গ্যাসের ২০০০টি সিলিন্ডার। মিত্রশক্তির ধারণা ছিল হিটলার বিশ্বযুদ্ধে জেতার জন্য বায়োকেমিক্যাল অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে। সেই জন্যই তারা এই মাস্টার্ড গ্যাস আনিয়ে রেখেছিল। কিন্তু এই অতর্কিত আক্রমণের ফলে জাহাজটি ডুবে যায় এবং গ্যাস সিলিন্ডারগুলি জলেই ডুবে যায়। এর ফলে সেই বন্দরের আশেপাশের এলাকায় জলের মধ্যে ছড়িয়ে যায় মাস্টার্ড গ্যাস। অনেক সৈন্যই আক্রমণ থেকে বাঁচতে জলে ঝাঁপ দিয়েছিলেন। জলে মাস্টার্ড গ্যাস মিশে যাওয়ায় তাদের অনেকেরই মৃত্যু হয় তৎক্ষণাৎ। অনেকে পালিয়ে প্রাণে বাঁচলেও ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই মাস্টার্ড গ্যাসের ঘটনাটি কোনওভাবেই যেন জনসমক্ষে না আসে তা নিশ্চিত করতে তৎপর ছিলেন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল এবং আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাঙ্কলিন রুজভেল্ট। তারা জানতেন এই ঘটনা হিটলারের কানে পৌঁছলে বায়োকেমিক্যাল যুদ্ধ অবধারিত।
এই মাস্টার্ড গ্যাসের কারণে ৮৩ জন সৈন্য নিজের প্রাণ হারান এবং ৬০০-র বেশি সৈন্য গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। অসুস্থ সৈন্যদের সম্পূর্ণ গোপনে চিকিৎসা করানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মিত্রশক্তির তরফে। অসুস্থ সৈন্যদের পরীক্ষা করে ডাক্তাররা দেখতে পান মাস্টার্ড গ্যাসের প্রভাবে তাদের দেহে 'সেল ডিভিশন' শুরু হয়ে গিয়েছে। এই সেল ডিভিশনের কারণেই ক্যান্সার রোগ হয়। ফলত অসুস্থ সৈন্যদের কেমোথেরাপি দেওয়া শুরু হয়। সেই ভারতীয় বিজ্ঞানী তথা ডাক্তারের কথা অনেকেই জানেন না, যার আবিষ্কার করা ওষুধ তাঁর মৃত্যুর ৭০ বছর পরে আজও কেমোথেরাপিতে ব্যবহার করা হয়। চিকিৎসক ইয়াল্লাপ্রগদ সুব্বারাওয়ের কথা দেশ তো ভুলেইছে, বিশ্বও মনে রাখেনি। তাঁর অত্যন্ত প্রিয় বন্ধু এবং সহকর্মী জর্জ হিচিংস ১৯৮৮ সালে নোবেল জেতার পর সুব্বারাও সম্বন্ধে বলেছিলেন,
"অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে সুব্বারাওয়ের অনেক আবিষ্কারই জনসমক্ষে আসেনি। বলা ভালো, আসতে দেওয়া হয়নি। আমাদের এক সহকর্মী তাঁর প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে সেই সমস্ত আবিষ্কার এবং সেই সংক্রান্ত যাবতীয় নথিপত্র নষ্ট করে দেয়। আজকের দিনে দাঁড়িয়ে মানব সভ্যতার জন্য এ অনেক বড় ক্ষতি।"
আরও পড়ুন- কোনও দিনও আবিষ্কার হবে না ক্যান্সারের চিকিৎসা! ভয়াবহ যে তথ্য কাঁপিয়ে দিল বিশ্বকে
মজার বিষয়, জন হিচিংস নোবেল প্রাইজ পেয়েছিলেন কেমোথেরাপি নিয়ে তাঁর গবেষণার জন্যই কিন্তু সেই কেমোথেরাপিতে ব্যবহৃত ওষুধের আবিষ্কর্তা সুব্বারাওয়ের নাম আজও লোকচক্ষুর আড়ালেই রয়ে গেছে।
অন্ধ্রপ্রদেশের গোদাবরী নদীর পশ্চিম দিকে একটি ছোট্ট গ্রাম ভীমাবরম। ১৮৯৫ সালের ১২ জানুয়ারি এই গ্রামেই জন্মগ্রহণ করেন ইয়াল্লাপ্রগদ সুব্বারাও। তাঁর বাবা ছিলেন জগন্নাথম সুব্বারাও। তিনি রেভেনিউ সার্ভিসে চাকরি করতেন। কিন্তু অসুস্থতার কারণে তাঁকে সময়ের অনেক আগেই অবসর নিতে হয়। সরকারি পেনশন দিয়ে কোনওরকমে টেনেটুনে সংসার চলছিল। ইতিমধ্যেই জগন্নাথম আক্রান্ত হন বেরিবেরি রোগে। তখন সংসারের অবস্থা আরও খারাপ হয়ে যায়। সাত ভাই বোনের মধ্যে চতুর্থ ইয়াল্লাপ্রগদ সুব্বারাওয়ের পড়াশোনার প্রতি বিশেষ আগ্রহ ছিল না। ম্যাট্রিক পরীক্ষা তিনি দু'বার পাস করতে পারেননি। বাধ্য হয়ে নিজের গয়না বেচে তাঁর মা তাঁকে মাদ্রাজ পাঠান পড়াশোনা করতে। এই সময় সুব্বারাও সংস্পর্শে আসেন রামকৃষ্ণ মিশনের। এই রামকৃষ্ণ মিশনের প্রতিষ্ঠাতা স্বামী বিবেকানন্দ এবং ইয়াল্লাপ্রগদ সুব্বারাওয়ের জন্মদিন কাকতালীয়ভাবে একই তারিখে। রামকৃষ্ণ মিশনের সংস্পর্শে আসতেই সুব্বারাওয়ের জীবন পুরো পাল্টে যায়। পড়াশোনার প্রতি তিনি অত্যন্ত মনোযোগী হয়ে পড়েন এবং মাদ্রাজে থেকেই ম্যাট্রিক ও ইন্টারমিডিয়েট পাস করেন। ইন্টারমিডিয়েট পাস করে তিনি মাদ্রাজ মেডিকেল কলেজে ভর্তি হন ডাক্তারি পড়তে।
ডাক্তারি পড়ার সময়ই তিনি গান্ধীজির স্বদেশী আন্দোলনের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। সব বিদেশি জিনিসের বয়কট করেন তিনি। সেই কলেজেই অস্ত্রোপচারের একজন অধ্যাপক ছিলেন এম সি ব্র্যাডফিল্ড। একদিন অস্ত্রোপচারের প্রশিক্ষণের সময় ব্র্যাডফিল্ড দেখতে পান সুব্বারাও ক্লাসে খাদি পরে এসেছেন। সেই দেখে তিনি এতটাই বিরক্ত হন যে সুব্বারাওকে ক্লাস থেকে বের করে দেন। কিন্তু জেদি সুব্বারাও কিছুতেই অধ্যাপকের সামনে মাথা নত করবেন না। ফলত তাঁর আর এমবিবিএস ডিগ্রি পাওয়া হল না। পরিবর্তে এলএমএস ডিগ্রি নিয়েই তাঁকে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছিল। পরবর্তীতে পড়াশোনার জন্য আমেরিকা যেতে উদ্যোগী হন সুব্বারাও। ১৯২১ সালে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও অর্থাভাবে আমেরিকা যাওয়া হয়নি তাঁর। এর মধ্যেই সুব্বারাওয়ের দুই ভাই পেটের এক জটিল রোগে মারা যান। এই রোগকে সেই সময় বলা হতো Tropical Sprue। পরবর্তীকালে এই রোগের ওষুধও আবিষ্কার করেছিলেন সুব্বারাও।
আরও পড়ুন- মহিলাদের গর্ভনিরোধকে সহজ করেছিলেন এই বিজ্ঞানী, আড়ালেই রইলেন ‘সহেলি’র আবিষ্কর্তা
আমেরিকা যেতে না পারায় মাদ্রাজ আয়ুর্বেদিক কলেজে লেকচারার পদে যোগ দেন সুব্বারাও। কয়েক বছর লেকচারার পদে চাকরি করার পর আমেরিকায় যাওয়ার জন্য ফের উদ্যোগী হন তিনি। হার্ভার্ডে গিয়ে ট্রপিকাল মেডিসিনের উপর গবেষণা করতে চেয়েছিলেন সুব্বারাও। নিজের যাবতীয় গবেষণা এবং পড়াশোনার ব্যাপারে বিস্তারিত জানিয়ে হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষকে একটি চিঠি লেখেন সুব্বারাও। কিন্তু হার্ভার্ডের ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ডিন সরাসরি সুব্বারাওয়ের আবেদন খারিজ করে দেন। ভারতের এক আয়ুর্বেদ কলেজের কোনও লেকচারারকে তিনি হার্ভার্ডে এসে গবেষণা করতে দেওয়ার পক্ষপাতী ছিলেন না। কিন্তু সুব্বারাও নিজেও হাল ছাড়ার পাত্র নন। তিনি হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষকে ফের একটি চিঠি লেখেন এবং জানতে চান কেন তাঁর আবেদন খারিজ করে দেওয়া হলো। কয়েক মাস এই পত্রযুদ্ধ চলার পর বাধ্য হয়ে সুব্বারাওকে হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা করার অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
এরপর নিজের আত্মীয় এবং বন্ধুবান্ধবদের থেকে সব মিলিয়ে প্রায় ২৫০০ টাকা ধার নিয়ে আমেরিকা যান সুব্বারাও। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটিতে গবেষণার পাশাপাশি সেখানকার এক স্থানীয় হাসপাতালেও চাকরি করেন সুব্বারাও। স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকার খরচা চালানোর জন্য চাকরির প্রয়োজন ছিল। এক বছর সেখানে গবেষণা করার পর ১৯২৪ সালে ট্রপিক্যাল মেডিসিনে ডিপ্লোমা অর্জন করেন সুব্বারাও। এরপর হাভার্ডের বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগে অধ্যাপক সাইরাস ফিস্কের অধীনে কাজ করা শুরু করেন। এই সময় সুব্বারাও মানবদেহে ফসফরাসের পরিমাণ নির্ধারণ করার একটি প্রক্রিয়া আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের কয়েকদিনের মধ্যেই এই প্রক্রিয়াটি কেমিস্ট্রি এবং জিওকেমিস্ট্রির পাঠ্যক্রমে যোগ করার সিদ্ধান্ত নেয় হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। এরপর আগামী দেড় দশক হার্ভার্ডে থেকেই নিজের গবেষণা চালিয়ে যান ইয়াল্লাপ্রগদ সুব্বারাও। কিন্তু এতদিন ধরে গবেষণা করা সত্ত্বেও তাঁকে সিনিয়র ফ্যাকাল্টির পদ দেয়নি হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীকালে এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে জর্জ হিচিংস বলেছিলেন,
"হার্ভার্ড একটি উৎকৃষ্ট শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান হলেও সুব্বারাওয়ের প্রতি তারা যে আচরণ করেছিল তা মোটেই কাঙ্খিত নয়। এর পিছনে অনেকাংশে দায়ী অধ্যাপক ফিস্ক। তাঁর অঙ্গুলিহেলনেই হার্ভার্ড কর্তৃপক্ষ সুব্বারাওকে সিনিয়র ফ্যাকাল্টির পোস্ট দেয়নি।"
সরাসরি না বললেও হিচিংস জানিয়েছিলেন, সুব্বারাওয়ের অধিকাংশ গবেষণাপত্রই নষ্ট করে দিয়েছিলেন এই সাইরাস ফিস্ক।
১৯৪০ সালে হার্ভার্ড ছেড়ে লেন্ডারলে ল্যাবে একজন গবেষণা তত্ত্ববধায়ক হিসেবে যোগ দেন সুব্বারাও। আমৃত্যু তিনি এই পদে কর্মরত ছিলেন। এই ল্যাবে থাকাকালীন তিনি মার্কিন সেনার জন্য ফাইলেরিয়ার মতো প্রাণঘাতী রোগের ওষুধ হেট্রোজেন আবিষ্কার করেন। এছাড়াও তিনি ম্যালেরিয়ার একটি আরও প্রভাবশালী ওষুধ আবিষ্কার করেছিলেন। এরপর তিনি ওরিয়াম মাইসিন নামক একটি অ্যান্টি-বায়োটিক আবিষ্কার করেন যা প্লেগ রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হতো। ১৯৯৫ সালে মহারাষ্ট্র এবং গুজরাতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে প্লেগ ছড়ালে এই ওষুধই ব্যবহার করা হয়েছিল রোগীদের চিকিৎসা করতে। প্রতিবেদনের শুরুতেই যে সৈন্যদের কথা বলেছিলাম, তাদের অধিকাংশই সুস্থ হয়ে যান সুব্বারাওয়ের চিকিৎসার ফলে।
আরও পড়ুন- পদ্মশ্রী পেলেন জারোয়াদের ডাক্তারবাবু, চেনেন এই বাঙালি চিকিৎসককে?
সেই সময় পাশ্চাত্যে এক জনপ্রিয় ভারতীয় লেখক ছিলেন গোবিন্দবিহারী লাল। তিনি মূলত বিজ্ঞান বিষয়ক লেখালেখিই করতেন। ঘটনাচক্রে, প্রথম ভারতীয় হিসেবে তিনিই পুলিৎজার পুরস্কার পেয়েছিলেন। ১৯৪৪ সালে গোবিন্দবিহারী এক তরুণ মার্কিন লিউকেমিয়া রোগীকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখেছিলেন। লিউকেমিয়া এক ধরনের ক্যান্সার। গোবিন্দবিহারী লিখেছিলেন, নিউইয়র্কের হাসপাতালে ওই রোগীর উপর টেরোপটেরিন নামক এক ওষুধ ব্যবহার করা হয়েছিল। এতে রোগীর ব্যথা আগের চেয়ে অনেক কমে যায়, এবং কয়েক মাসের মধ্যেই সে সুস্থ হয়ে ওঠে। এরপর নিজের প্রতিবেদনে তিনি লেখেন যে এই ওষুধের আবিষ্কর্তাও এক ভারতীয়, তার নাম ইয়াল্লাপ্রগদ সুব্বারাও।
পরবর্তীকালে এই লিউকেমিয়ার চিকিৎসার জন্যে সুব্বারাও আরেকটি ওষুধ আবিষ্কার করেন যার নাম এমিনোপটেরিন, যা আগের থেকেও বেশি কার্যকরী। নিউইয়র্ক এবং তার আশেপাশের এলাকায় অনেক লিউকেমিয়া রোগীকে এই ওষুধ দিয়ে সুস্থ করে তোলা হয়েছিল বলে দাবি করেন গোবিন্দবিহারী। অসংখ্য ওষুধের পাশাপাশি ডাঃ ইয়াল্লাপ্রগদ সুব্বারাও একটি যুগান্তকারী ওষুধ 'মেথোট্রেক্সেট' আবিষ্কার করেছিলেন যা বর্তমানে কেমোথেরাপিতে ব্যবহার করা হয়। আজ পর্যন্ত প্রায় ৩০০০০ মেডিকেল রিসার্চ পেপার তাঁর গবেষণার উপর ভিত্তি করেই তৈরি করা হয়েছে। তবে, অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের বিষয় যে এমন অসাধারণ একজন বিজ্ঞানী, চিকিৎসককে তাঁর নিজের দেশেরই অধিকাংশ মানুষ চেনেন না। ১৯৪৮ সালের ৮ অগাস্ট হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে প্রয়াত হন তিনি। তাঁর প্রয়াণের পর নোবেলজয়ী সিভি রমন লিখেছিলেন,
"আপনি হয়তো ডাঃ ইয়াল্লাপ্রগদ সুব্বারাওয়ের নাম কখনও শোনেননি। কিন্তু আজ এবং ভবিষ্যতেও, যদি আপনি সম্পূর্ণ সুস্থ থাকেন তাহলে জানবেন এই মানুষটির জন্যই আছেন।"