মৃতকে জ্যান্ত করার দাবি, শ্মশান থেকে লাশ ছিনতাই! হাথরাসের ভোলে বাবার বুজরুকির খতিয়ান

Hathras Stampede: সেটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা। আগ্রার শাহগঞ্জের এক ক্যানসারে মৃত কিশোরীকে যোগবলে বাঁচিয়ে তোলার দাবি করেন নারায়ণ সাকার বিশ্ব হরি ভোলে বাবা।

একই দেহে বিশ্ব হরি ও ভোলে বাবা! ব্রহ্মা-বিষ্ণুর এমন ভয়ঙ্কর মিশেল এই কলি যুগে যে দু-একটাই মেলে, তা-ই প্রমাণ করে দিয়েছেন হাথরাস কাণ্ডের স্বঘোষিত বাবা নারায়ণ সাকার বিশ্ব হরি ভোলে বাবা। তাঁর সৎসঙ্গে গিয়েই পদপিষ্ট হন শতাধিক মানুষ। জখম অসংখ্য। সৎসঙ্গ শেষ হওয়ার মুহূর্তে ভক্তদের মধ্যে যখন তুমুল বিশৃঙ্খলা, হুড়োহুড়ি, মানুষকে চাপা দিচ্ছে মানুষ, তখন কী করছেন এই স্বঘোষিত বাবা? সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে তড়িঘড়ি ছাড়ছেন অনুষ্ঠানস্থল। বলা ভালো, ঝোলা গুটিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন ভোলা থুড়ি ভোলে বাবা। ঠিক যেন সত্যজিৎ রায় পরিচালিত 'মহাপুরুষ' ছবির শেষ দৃশ্য। এই ভোলে বাবার কীর্তিগাথা কিন্তু আজকের নয়। বছর বিশেক আগে নাকি এক মৃত কন্যাকে বাঁচিয়ে তোলার দাবি করেছিলেন এই বাবা। তার জন্য সপরিবারে গ্রেফতারও হয়েছিলেন তিনি।

সেটা ১৯৯৮ সালের ঘটনা। আগ্রার শাহগঞ্জের এক ক্যানসারে মৃত কিশোরীকে যোগবলে বাঁচিয়ে তোলার 'আশ্চর্য' দাবি করে বসেন নারায়ণ সাকার বিশ্ব হরি ভোলে বাবা। পঙ্কজ কুমার নামে এক ব্যক্তি জানান, তাঁর বছর ষোলোর ভাগ্নীর ক্যানসার ধরা পড়ে। একদিন হঠাৎই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায় সে। সে সময় ওই বাবা দাবি করেন, তিনি নাকি 'মৃত' মেয়েটিকে পুনরুজ্জীবিত করে তুলবেন। এরপরে বাবার তুকতাকে জ্ঞান তো ফিরে পায় সে, কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে সে। না, এখানেই শেষ হয় না বাবার খেল।

আরও পড়ুন: তাঁকে দেখতে গিয়েই পদপিষ্ট হয়ে মৃত ১২১! কে এই হাথরাসের ভোলে বাবা?

এরপরে ভোলে বাবা তথা সূরজপাল প্রায় দুশো জন লোক জড়ো করে শ্মশানে পৌঁছয় এবং মৃত মেয়েটির পরিবারকে বোঝানোর চেষ্টা করে, ওই মৃত শরীরকে ফের জীবিত করার ক্ষমতা রয়েছে ভোলে বাবার। এমনকী মেয়েটির মৃতদেহ জোর করে ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ারও অভিযোগ ওঠে। পুলিশ এসে মৃতদেহ উদ্ধারের চেষ্টা করলে ভোলে বাবার সমর্থকদের ইট-বৃষ্টির মুখে পড়তে হয় তাদের। পরে সূরজপাল, তাঁর স্ত্রী এবং ওই ঘটনায় জড়িত চার জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আইপিসি ধারা ১০৯ এবং ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিস আইনের অধীনে তাদের বিরুদ্ধে মামলাও দায়ের করা হয়।

দু'দিন আগে হাথরসের ওই ঘটনায় অন্তত ১২৩ জনের পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যুর খবর মিলেছে। জখম অগণিত। ঘটনার তদন্তে নেমে ওই ধর্মীয় অনুষ্ঠান নিয়ে একাধিক অনিয়মের ছবি চোখে পড়েছে। যে সংখ্যক লোকসমাগমের অনুমতি নেওয়া হয়েছিল, বাস্তবে তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষ এসে জড়ো হন অনুষ্ঠানে। তার জন্যই এত বড় দুর্ঘটনা বলে মনে করছে পুলিশ। সাম্প্রতিক এই ঘটনায় খোঁজ নেই সেই স্বঘোষিত বাবার। তাঁর বিরুদ্ধে ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস), ২০২৩-এর ১০৫, ১১০, ১২৬ (২), ২২৩ এবং ২৩৮ ধারার অধীনে এফআইআর দায়ের হলেও এখনও পর্যন্ত কেউ-ই গ্রেফতার হয়নি।

আরও পড়ুন:যোগীরাজ্যে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে বিশৃঙ্খলা! হাথরসে পদপিষ্ট হয়ে মৃত্যু শতাধিকের

নারায়ন সাকার বিশ্ব হরি ভোলে বাবার এই স্বঘোষিত ধর্মগুরু হয়ে ওঠার আগে নাম ছিল সূরজপাল। উত্তরপ্রদেশেক কাসগঞ্জ জেলার বাহাদুর নগরের বাসিন্দা সূরজকুমার নাকি একসময় ছিলেন পুলিশ। কৃষক পরিবারে জন্ম, বাবার সঙ্গে চাষবাস থেকে অল্প বয়সে পুলিশবাহিনীতে যোগ দেওয়া। নব্বইয়ের দশকে হঠাৎ করেই পুলিশের চাকরি ছেড়ে হয়ে যায় স্বঘোষিত বাবা। শুরু হয় সৎসঙ্গ পরিচালনা। সেই কাজে তাঁর সঙ্গী ছিলেন স্ত্রী। সেখান থেকে হাঁটতে হাঁটতে জনপ্রিয়তা, বাহাদুরনগরে আশ্রম প্রতিষ্ঠা এবং ক্রমে লক্ষ লক্ষ অনুসারীর 'ভোলে বাবা' হয়ে ওঠা। এই হয়ে ওঠার নেপথ্যে যে মৃতকে পুনরুজ্জীবিত করার ভুয়ো দাবির মতো আরও কত 'অপরাধ, বুজরুকি', তার হিসেব নেই। যে স্বঘোষিত বাবা নাকি দরিদ্র, বঞ্চিতদের তারণ, তিনি কেন ভক্তদের বেঘোরে মরতে দেখে পালিয়ে গেলেন গুটি গুটি, সেই প্রশ্ন তো ওঠেই। অবশ্য তাঁর খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ। মইনপুরীতে সূরজপাল ওরফে ভোলে বাবার মোবাইল ফোনের লোকশন মিলেছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। মইনপুরিতে সূরজকুমারের বাড়ির ক্যাম্পাসে তল্লাশিও চালানো হয় বলে খবর। 

More Articles