মোদীর 'সুরক্ষিত' লোকসভায় ঢুকে পড়ল হানাদার! কী তাদের পরিচয়?
Parliament Security Breach: প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, দুপুর একটা নাগাদ অধিবেশন চলাকালীন হঠাৎ করেই পাবলিক গ্যালারির দিক দিয়ে লাফ দেয় দুই অনুপ্রবেশকারী।
লোকসভা অধিবেশনের দ্বিতীয় সপ্তাহ শুরু হতে না হতে ফের বিপত্তি। এবার লোকসভার নিরাপত্তাবলয় ভেঙে একেবারে সাংসদের ভিতরে ঢুকে পড়ল দুই আততায়ী। গ্যালারি থেকে সোজা ঝাঁপ দেয় সাংসদদের দিকে। তাদের হাতে ভারী কোনও জিনিস ছিল বলে অভিযোগ। যেখান থেকে রঙিন ধোঁয়া বেরোচ্ছিল। স্বাভাবিক ভাবেই এই ঘটনা ঘিরে হইচই পড়ে যায় সংসদ চত্বরে। এ বছরের শীতকালীন অধিবেশন যেন গোড়া থেকেই ঘটন-অঘটনে ভরা। মহুয়া মৈত্রকে বহিষ্কারের ঘটনাকে কেন্দ্র করে অধিবেশনের প্রথম সপ্তাহে কম বিতর্ক হয়নি। তার পরে এই নিরাপত্তা ভেঙে লোকসভায় হামলা।
সঙ্গে সঙ্গেই অবশ্য ওই দুই ব্যক্তিকে ধরে ফেলেন সাংসদেরা। ওই দুই যুবককে ধরে মার্গ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ওই দুই যুবকের হাতে ধরা বস্তু থেকে বেরোতে থাকা গ্যাস ছড়ানোর ঘটনায় হইচই পড়ে যায়। অনেকেই ভেবেছিলেন, কোনও রকম বিষাক্ত গ্যাস হতে পারে সেটি। অবশ্য পরে জানা যায়, তেমন কিছুই। ক্যানেস্টার থেকে সাদামাটা ধোঁয়াই বেরোচ্ছেল খালি। বিষাক্ত গ্যাসের কোনও সম্পর্ক নেই তার সঙ্গে। ২০০১ সালে এই দিনেই ঘটেছিল সংসদ হামলার ঘটনা। সেই দিনেই ফের লোকসভায় এমন হামলার ঘটনা ঘিরে বেশ উত্তেজনা ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুন: লোকসভা থেকে বহিষ্কৃত মহুয়া মৈত্র! কেন একটি কথাও বলতে দেওয়া হলো না সাংসদকে?
ইতিমধ্যেই সামনে এসেছে হামলাকারীদের কয়েক জনের পরিচয়। ওই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত চার জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সূত্রের খবর, তাদের মধ্যে সাগর শর্মা বলে একজনকে শনাক্ত করা গিয়েছে। যতদূর জানা গিয়েছে মাইসুরুর বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার নামে লোকসভার ভিজিটর পাস নিয়ে এসেছিলেন দুই আততায়ী। আরও একজন অনুপ্রবেশকারীও মাইসুরুর বাসিন্দা বলে জানা গিয়েছে। মনোরঞ্জন ডি নামে ওই ব্যক্তি পেশায় ইঞ্জিনিয়ার। তাঁর কাছেও প্রতাপ সিমাহার ভিজিটর পাস ছিল বলে খবর।
সাধারণ ভাবে কেউ সংসদে ঢুকতে চাইলে তাঁকে প্রথমে তাঁর নির্বাচনী এলাকার সাংসদের নামে একটি ভিজিটর কার্ড ইস্যু করতে হয়। সাংসদের নামে পাস ইস্যু হওয়ার পরে লোকসভার মধ্যে ঢোকার জন্য় বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা বেষ্টনী পেরোতে হয় তাঁদের। সেখানে নিরাপত্তা পরীক্ষার পর দর্শনার্থীদের পরিচয়পত্র প্রমাণ খতিয়ে দেখা হয়। এখানেই শেষ নয়। সংসদের ঢোকার মুখেও নিরাপত্তা রক্ষী ও ইলেকট্রনিক মেশিনেও কয়েক দফা নিরাপত্তা পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে যেতে হয় তাঁকে। এত রকম নিরাপত্তা সত্ত্বেও কীভাবে ওই দুজন অনুপ্রবেশকারী গ্যাসের ক্যানেস্টার নিয়ে লোকসভার মধ্যে ঢুকল, স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়ে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, দুপুর একটা নাগাদ অধিবেশন চলাকালীন হঠাৎ করেই পাবলিক গ্যালারির দিক দিয়ে দুই অনুপ্রবেশকারী লাফ দেয়। 'তানাশাহি নহি চলেগি' (স্বৈরাচার চলবে না) বলে স্লোগানও দিতে শোনা গিয়েছে তাঁকে। শুধু সংসদের ভিতরে নয়, রঙিন ধোয়া ছেড়ে সংসদের বাইরেও প্রতিবাদ-বিক্ষোভ দেখায় আরও এক মহিলা-সহ ২ অনুপ্রবেশকারী। তাদেরওকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
২০০১ সালের এই দিনেই সংসদে ভয়ঙ্কর হামলার সাক্ষী ছিল গোটা দেশ। যে ঘটনায় মৃত্যু হয়েছিল অন্তত ৯ জনের। সেই ঘটনার ২২তম বার্ষিকীতে ফের সংসদের নিরাপত্তার এ হেন লঙ্ঘনের ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই উদ্বেগে পড়েছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা। উত্তেজনা ছড়িয়েছে সাংসদদের মধ্যেও। পরে অবশ্য তিনি বিবৃতি দিয়ে জানান যে অনুপ্রবেশকারীদের আটক করা হয়েছে। তাছাড়া যে রঙিন ধোঁয়া দেখে আতঙ্কিত হয়েছিলেন সাংসদেরা, তা বিষাক্ত নয় বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন: ২০২৪ এর লোকসভা ভোটে মোটেও ৩৩% সংরক্ষণ পাবেন না মহিলারা! কেন?
এদিকে এই ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছে মাইসুরুর বিজেপি বিধায়ক প্রতাপ সিমহার নাম। অভিযুক্তদের ভিজিটর পাসটি যে প্রতাপ সিমারের অফিস থেকেই ছাড়া হয়েছিল, সে ব্যাপারটি নিশ্চিত করেছেন বিএসপি সাংসদ দানিশ আলি। বিজেপির খাস নেতা বলে বরাবরই সুনাম রয়েছে প্রতাপের। ২০১৪ ও ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটে মাইসুরুর কেন্দ্র থেকে বিপুল ভোটে জয়ী হন প্রতাপ। মাইসুরু লোকসভায় যা আজও রেকর্ড। দুটি ভোটেই ৫ লক্ষেরও বেশি ভোটে জিতে গিয়েছিলেন তিনি। ২০১৫ সালে প্রেস কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ার সদস্য নিযুক্ত করা হয় প্রতাপকে। হিন্দুত্বের কঠোর প্রচারক হিসেবে পরিচিত প্রতাপ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়েছেন। এবার সেই বিতর্কের তালিকায় জড়াল লোকসভায় অশান্তি তৈরির ঘটনাও। তবে এই ঘটনার সঙ্গে তার যোগ কতটা, এ বিষয়ে এখনও মুখ খুলতে দেখা যায়নি বিজেপি সাংসদকে। বুধবারের এই ঘটনার পর স্বাভাবিক ভাবেই মুলতুবি হয়ে যায় এদিনের অধিবেশন। ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করে পুলিশ। কী কারণে এই হামলা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে এবং এর সঙ্গে বিজেপি সাংসদ প্রতাপ সিমহার যোগ কতখানি, তা-ও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।