সূর্যের গায়ে পৃথিবীর সমান বড় দাগ! ধ্বংস হতে পারে পৃথিবী?
Sunspot: এই দাগটি তাক করে রয়েছে সরাসরি পৃথিবীর দিকেই। যে সাম্ভাব্য ঘটনাগুলি ঘটতে পারে-
অশনিসংকেত পাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা। বিপদের অ্যালার্ট দিচ্ছে সূর্যের গায়ে জন্ম নেওয়া সৌরকলঙ্ক। যে দাগে আকারে প্রায় পৃথিবীর সমান বড়। তথ্য বলছে জেটগতিতে বাড়ছে এই দাগ। এই প্রতিবেদন লেখার দিন তিনেক আগেও যা ছিলো ক্ষুদ্র একটি দাগ, তা
আটচল্লিশ ঘন্ট দশগুণ বড় একটি সৌরকলঙ্ক বা সানস্পটে পরিণত হয়েছে। এখানেই শেষ নয়, এই দাগটি তাক করে রয়েছে সরাসরি পৃথিবীর দিকেই। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এর ফলে যে সাম্ভাব্য ঘটনাগুলি ঘটতে পারে, তার মধ্যে একটি হল সৌরঝড় ধেয়ে আসতে পারে পৃথিবীর দিকে।
"স্পেসওয়েদার ডট কমের" (SpaceWeather.com) তরফে জানা যাচ্ছে, এই সানস্পট বা সূর্যকলঙ্কটির নাম দেওয়া হয়েছে “AR3085”, যেটি কিছুদিন আগেও ক্ষুদ্র ছিলো আকারে। এখন সেটি আকারে কেবল বড়োই হয়নি, তার আকার পরিবর্তিত হয়ে
এখন সে দুটি সৌরকলঙ্কে পরিণত হয়েছে।
বিস্তারিত আলোচনার আগে জানা যাক সানস্পট বা সৌরকলঙ্ক কী। সৌরকলঙ্ক সূর্যের গায়ে তৈরি হওয়া বৃহৎ, কালো অঞ্চল; যে অঞ্চলে তৈরি হয় একটি শক্তিশালী চৌম্বকীয় ক্ষেত্র। নির্দিষ্ট এই অঞ্চলে সৌরপৃষ্ঠের বাকি অংশের তুলনায় তাপমাত্রা তুলনামূলক ভাবে কম থাকে বলে এই অঞ্চলকে দেখতে কালো লাগে। সৌরকলঙ্কের তাপমাত্রা এই কারণেই কম থাকে। সৌরকলঙ্ক কিন্তু সূর্যের গায়ে যে কোনো অঞ্চলে অংশে তৈরি হতে পারে না। সূর্যের যে অংশে উচ্চ এবং ঘন চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি হয়, সেই অংশে সূর্যের গর্ভ থেকে বাইরের দিকে (পৃষ্ঠ) উষ্ণ গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যায়। উষ্ণ গ্যাসের প্রবাহ বন্ধ হয়ে গেলে, স্বাভাবিক নিয়মে সেই অঞ্চল ঠান্ডা হয়ে যায়।
সৌরকলঙ্ককে এই বিশাল পরিমাণ চৌম্বক ক্ষেত্র একত্রিত হওয়ার ফলে অধিকাংশ সময়েই তৈরি হয় "সোলার ফ্লেয়ার", যা পৃথিবীর বুকে ধেয়ে আসে সৌরঝড় রূপে। সোলার ফ্লেয়ার এবং সৌরঝড় আদতে ভীষণ শক্তিশালী চৌম্বকীয় তরঙ্গ।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা ঠিক সেইরকমই কিছু হতে পারে এবার। যত বেশি সংখ্যায় এই এরকম সৌরকলঙ্ক দেখা যাবে, ততই বাড়বে "সোলার ফ্লেয়ার" এবং সৌরঝড় বা "সোলার স্টর্ম" তৈরি হওয়ার আশঙ্কা।
"স্পেসওয়েদার ডট কম" সূত্রে আরও জানা যাচ্ছে, সূর্যে তৈরি হওয়া এই বিশাল অঞ্চল থেকে ইতিমধ্যেই "সোলার ফ্লেয়ার" তৈরি হয়ে, মহাকাশের বিভিন্ন অংশে ধেয়ে যাচ্ছে। সাধারণত সোলার ফ্লেয়ার আলট্রা-ভায়োলেট রে এবং এক্স- রে হিসেবে ধেয়ে আসে। তবে আশার বিষয় হল, এখনও পর্যন্ত নতুন তৈরি হওয়া এই সৌরকলঙ্ক থেকে যত সোলার ফ্লেয়ার তৈরি হয়েছে সেগুলো
বেশিরভাগই দূর্বল প্রকৃতির; এবং সেই জন্যেই তাদের “C-class” সোলার ফ্লেয়ারের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। “A”, “B” এবং “C-class” সোলার ফ্লেয়ারের তেজ অপেক্ষাকৃত কম; এবং সাধারণত পৃথিবীর উপর এদের প্রভাব ক্ষীণ।
সোলার স্টর্ম
ধেয়ে আসলে প্রথমেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পৃথিবীর চারপাশে ঘুরে বেড়ানো স্যাটেলাইট, যার ফলে ইন্টারনেট এবং মোবাইল পরিষেবা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পাশাপাশি ব্যহত হতে পারে বিদ্যুত পরিষেবা। কারণ সোলার স্টর্মের সাথে ধেয়ে আসা তীব্র শক্তিসম্পন্ন ম্যাগনেটিক ওয়েভ বিদ্যুত গ্রিডকে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
“M-class” সোলার
ফ্লেয়ার তুলনামূলক ভাবে বেশি শক্তিশালী। পৃথিবীকে ক্ষতিগ্রস্ত করার সম্ভাবনাও তাদের বেশি।“M-class” সোলার ফ্লেয়ারের জন্যে পৃথিবীর উচ্চ অক্ষাংশের অঞ্চলগুলিতে রেডিও ব্ল্যাকআউট হওয়া এবং স্যাটেলাইট ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সম্ভাবনা প্রায়শই থেকে থাকে।
“X-class”
সবথেকে বেশি শক্তিশালী হল সোলার ফ্লেয়ার। যার ফলে অনায়াসেই পৃথিবীর কক্ষপথচ্যুত হতে পারে স্যাটেলাইট এবং পৃথিবীর উচ্চ অক্ষাংশ ছাড়াও অন্যান্য অংশেও রেডিও ব্ল্যাকআউট হতে পারে। পাশাপাশি বিদ্যুতগ্রিডও সম্পূর্ণ বিকল হয়ে যেতে পারে “X-class” মতো শক্তিশালী সোলার ফ্লেয়ারের প্রভাবে, জানা যাচ্ছে নাসার তরফে।
যদি আরও বাড়তে থাকে সৌরকলঙ্কের আকৃতি, সেই অঞ্চল থেকে ছিটকে বেরোনো ম্যাগনেটিক ক্ষেত্রের শক্তিও বাড়বে
পাল্লা দিয়ে। সে ক্ষেত্রে সোলার ফ্লেয়ারের তীব্রতা এবং শক্তি বাড়বে। এবং তা যদি পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসে তাহলে স্যাটেলাইট ও ইন্টারনেট পরিষেবা থেকে শুরু করে, বিদ্যুত এবং রেডিও পরিষেবা বিপর্যস্ত হবে। ২০২২ সালেই বেশ কয়েকবার পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এসেছে একাধিক “X-class” সোলার ফ্লেয়ার।
সোলার স্টর্ম
বা সৌরঝড় ঘটার ঘটনা ২০২১ সাল থেকে চলতি বছর অবধি ক্রমেই বাড়ছে। সৌরঝড় এবং সৌরকলঙ্ক তৈরি হওয়ার প্রবণতা, এই দুইয়ের সাথেই যুক্ত আছে সৌরবছরের সম্পূর্ণ করার ঘটনা।
সূর্যের গায়ে সবচেয়ে বেশি সোলার স্পট বা সৌরকলঙ্ক তৈরি হয় যখন "সোলার ম্যাক্সিমাম" দশা (Phase) চলে সূর্যের। এই সময়ে সূর্যের সক্রিয়তা সবথেকে বেশি হয়। পরবর্তী "সোলার ম্যাক্সিমাম" ঘটতে চলেছে ২০২৫ সালে। আশঙ্কা করা হচ্ছে সূর্যের সক্রিয়তা চরমে পৌঁছলে একশো পনেরোটির কাছাকাছি সৌরকলঙ্ক তৈরি হবে সূর্যের গায়ে।
কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়, এই বৃহৎ সৌরকলঙ্ক পৃথিবীকে ধ্বংস করতে পারে কি-না। আসা যাক সেই প্রসঙ্গে।
"ন্যাশানাল ওশানিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফেরিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশনস স্পেস ওয়েদার প্রেডিকশন"-এ গবেষণারত ডগ বিসেকারের মতে, "আর যাই হোক সোলার ফ্লেয়ার আজ অবধি পৃথিবীকে উল্লেখযোগ্য ভাবে ক্ষতি করেনি। আমি জানি না সোলার ফ্লেয়ার কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হলে পৃথিবী ধ্বংস হতে পারে । এখনও অবধি এত ভয়ংকর সোলার ফ্লেয়ার এবং সৌরঝড় আমরা দেখিনি, যার জন্যে আমাদের গ্রহ বা আমাদের ক্ষতি হতে পারে" (সূত্র: লাইভ সায়েন্স)।
২০১১ সালে যখন সারা পৃথিবী আতঙ্কে ভুগছে ২০১২ সালে ধেয়ে আসা সোলার ফ্লেয়ারে ধ্বংস হবে পৃথিবী তখন একটি ভিডিওতে নাসার গোদার স্পেস ফ্লাইট সেন্টারের হেলিওফিজি়ক্স সায়েন্স বিভাগের অ্যাসোসিয়েট ডিরেক্টর অ্যালেক্স ইয়াং জানিয়েছিলেন, "বিগত দশ হাজার বছরে প্রবল শক্তিশালী যত সোলার ফ্লেয়ার পৃথিবীর দিকে ধেয়ে এসেছে, তাদের কারোর প্রভাবেই পৃথিবীর চরম কোনো ক্ষতি হয়নি। এমনকি পৃথিবীকে আবৃত করে রাখা চৌম্বক-বলয় বা ম্যাগনেটো-স্ফিয়ারকেও তারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারেনি"।