করোনার পর নতুন মহামারীর আশঙ্কা বিশ্ব জুড়ে! কেন এত ভয়ঙ্কর 'জম্বি ডিয়ার' রোগ?

Zombie Deer Disease: মল, লালা, প্রস্রাব বা রক্ত- যে কোনও কিছুর মাধ্যমেই এক শরীর থেকে অন্য শরীর থেকে সংক্রমিত হয় অসুখটি। এখনও পর্যন্ত এর কোনও চিকিৎসা বা প্রতিষেধক খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা।

ফের নতুন রূপ ধরে ফিরে এসেছে করোনা। ভয়ে কাঁপছে গোটা বিশ্ব। এরই মধ্যে নাকি নতুন করে আতঙ্ক বাড়াচ্ছে আরও একটি মহামারির চোখরাঙানি। পশুপাখি থেকে রোগ সংক্রমণের ঘটনা কোনও নতুন ব্যাপার নয়। এর আগেও বাদুড়ের শরীর থেকে আসা নিপা ভাইরাসের কবলে পড়েছে কেরল-সহ একাধিক রাজ্যের বাসিন্দা। এমনকী হাঁস-মুরগির মতো পাখিদের থেকে বার্ড ফ্লু-র মতো রোগ সংক্রমণের ঘটনাও নতুন কথা নয়। তবে এবার বাদুড় কিংবা মুরগি নয়, হরিণদের থেকে ভয়ঙ্কর এক ব্যধিতে  মানুষ সংক্রমিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ক্রমশ ছড়াচ্ছে ভয়াল 'জম্বি ডিয়ার ডিজিজ'। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

আমেরিকায় হঠাৎ করেই ক্রনিক ওয়েস্টিং ডিজিজ (CWD) নামক এই রোগের প্রাদুর্ভাব ঘটেছে। যা নাকি জম্বি ডিয়ার ডিজিজ নামেও পরিচিত। গত কয়েক বছর ধরেই একটি দুটি করে এই জম্বি ডিজিজ সংক্রমণের খোঁজ মিলছিল। আমেরিকার একাধিক হরিণ, এলক, রেইনডিয়ার, সিকা হরিণ ও মুস এই অসুখে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। গত কয়েক মাসে মারাত্মক রকমের বেড়েছে এই ক্রনিং ওয়েস্টিং ডিজিজ। ইতিমধ্যেই আমেরিকার ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে একাধিক এই জম্বি ডিয়ার ডিজিজের সংক্রমণের খবর মিলেছে। প্রথম CWD কেসটি মিলেছিল ইয়েলোস্টোন ন্যাশনাল পার্কে চলতি বছরের নভেম্বরে। তার পর দ্রুত হারে বেড়েছে এই রোগের সংক্রমণ। সেখানে ইতিমধ্যেই একটি হরিণের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। এটা স্পষ্ট যে এই হরিণটি প্রিয়ন রোগে আক্রান্ত। এই ভাইরাসে হরিণের মস্তিষ্ক সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ইয়লোস্টোন ন্য়াশনাল পার্কের দক্ষিণ-পূর্ব অংশ থেকে কোডি, ওয়াইমিং এলাকায় স্থানান্তরিত প্রায় ১০-১৫ শতাংশ হরিণের মধ্যেই এই ধরনের রোগে আক্রান্ত বলে জানিয়েছেন ন্যাশনাল পার্ক কর্তৃপক্ষ।

আরও পড়ুন: ক্রিসমাস আর নববর্ষের মাঝেই হার্ট অ্যাটাক? কেন হচ্ছে বিশ্বজুড়ে?

শুধু আমেরিকা নয়, এই রোগ ক্রমশ ছড়িয়েছে কানাডাতেও। এমনকী উত্তর আমেরিকার বাইরে নরওয়ে, ফিনল্যান্ড ও সুইডেনেও রেইনডিয়ার ও মুসগুলি এই CWD-রোগে আক্রান্ত হয়েছে। এমনকী দক্ষিণ কোরিয়াতেও মিলেছে এই রোগের হদিস। ১৯৬৭ সালে কলোরাডোতে প্রথম এই রোগের হদিস মেলে। এতদিন যাবৎ হরিণ ও ওই জাতীয় প্রাণীর মধ্যে এই রোগের সংক্রমণ হলেও ক্রমশ তাদের থেকে মানুষের শরীরেও সেই রোগ সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। কী এই ক্রনিক ওয়েস্টিং ডিজিজ? কী-ই বা এর উপসর্গ?

Humans may get infected by ‘Zombie Deer Disease’, warn scientists amid case surge in US

বিশেষজ্ঞেরা জানাচ্ছেন, এই জম্বি ডিয়ার ডিজিজ নাকি যে কোনও রকম শারীরিক তরলের মাধ্যমের সংক্রমিত হতে পারে। মল, লালা, প্রস্রাব বা রক্ত- যে কোনও কিছুর মাধ্যমেই এক শরীর থেকে অন্য শরীর থেকে সংক্রমিত হয় অসুখটি। এখনও পর্যন্ত এর কোনও চিকিৎসা বা প্রতিষেধক খুঁজে পাননি বিজ্ঞানীরা। বিশেষজ্ঞেরা জানান, ধীরগতিতে হলেও ক্রমশ আক্রান্তকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে থাকে অসুখটি। সব চেয়ে বিপজ্জনক দিকটি হল, এক বছরেরও বেশি সময় ধরে শরীরের ভিতরে ইনকিউবেশনে থাকতে পারে এই রোগের জীবাণুটি। ফলে দীর্ঘদিন পর্যন্ত সংক্রমিতকে চিহ্নিত করাই কঠিন হয়ে পড়ে। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ধীরে ধীরে শরীরে প্রকাশ পেতে থাকে এই সংক্রমণের লক্ষণ।

Humans may get infected by ‘Zombie Deer Disease’, warn scientists amid case surge in US

এই জীবাণুর সংক্রমণ হলে ক্রমশ ওজন কমতে থাকে আক্রান্ত প্রাণীটির। আচরণগত পরিবর্তন, অতিরিক্ত লালা ঝরা, নিউমোনিয়া, দুর্বলতা এবং ক্রমশ যা নিয়ে যায় মৃত্যুর দিকে। এখনও পর্যন্ত মানুষকে ছুঁয়ে ফেলেনি ভয়ঙ্কর এই অসুখটি। তবে বিশেষজ্ঞেরা আশঙ্কা করছেন, শেষপর্যন্ত মানুষের শরীরেও সংক্রমিত হতে পারে এই রোগ। CWD আক্রান্ত প্রাণীর মাংস ভক্ষণ করলেও কিন্তু এই রোগ সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। বহু জায়গাতেই হরিণের মাংস খাওয়ার চল রয়েছে। তাঁদের ক্ষেত্রে এই রোগ সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। এমনকী সংক্রমিত এলাকা থেকে বয়ে আসা তরলের মাধ্যমেও কিন্তু মানুষের শরীরে ঢুকে পড়তে পারে এই রোগের জীবাণু।

আরও পড়ুন:কোথা থেকে এল ভয়াবহ নিপা ভাইরাস? জেনে নিন

ইতিমধ্যেই ইউনাইটেড স্টেটস জিওলজিক্যাল সার্ভে (USGS) ৩৩টি রাজ্য ও কানাডার চারটি প্রদেশকে চিহ্নিত করেছে, যেখানে এই ভাইরাসের উপস্থিতি রয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বিশেষত হরিণ, এলক এবং মুজের মস্তিষ্কেই প্রভাব বিস্তার করে এই অসুখটি, এবং স্নায়ুর ক্ষতি করতে শুরু করে। ক্যালিগরি বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের একটি সাম্প্রতিক গবেষণায় জানা গিয়েছে, ক্রমাগত জেনেটিক বৈশিষ্ট্য বদল করে করে একদিন মানুষের শরীরে ঢুকে পড়তে পারে ভাইরাসটি। ইতিমধ্যেই CWD ভাইরাসটি নিয়ে সতর্ক করেছে মার্কিন প্রশাসন। কোনও ভাবে যাতে সেটি মানবশরীরে ছড়িয়ে পড়তে না পারে, তা নিশ্চিত করতে গোড়া থেকেই সচেতন হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

More Articles