ভারতের থেকে বেশি সুখে আছে যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনও! সামনে এল যে চাঞ্চল্যকর তথ্য

World's happiest countries 2024: গত কয়েক বছর দুয়েক ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জেরবার ইউক্রেন। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও দেশের মানুষ সুখে থাকতে পারে না, সেটাই স্বাভাবিক। তবে আশ্চর্যের কথা যেটা, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের চেয়েও অস...

অর্থনৈতিক পরিকাঠামো তলানিতে। বাড়ছে গ্রামীণ এলাকায় দারিদ্রও। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দেশে বেড়েছে অপরাধ। মান কমছে শিক্ষার। এদিকে চড়চড়িয়ে বাড়ছে জনসংখ্যা। আর্থিক, সামাজিক অবক্ষয়ের দিক থেকেও ভারত কোণঠাসাই, এবার সুখী দেশের তালিকা থেকেও প্রায় বেরিয়ে যেতে বসেছে ১৪৩ কোটির এই দেশ। সম্প্রতি সামনে এসেছে ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স ২০২৪। সেই সূচকে ভারত একশোর মধ্যেও আসতে পারেনি।

২০ মার্চ আন্তর্জাতিক সুখ দিবস। ২০১২ সালে রাষ্ট্রসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদে এই দিনটিকে সুখ দিবস হিসেবে পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়া। প্রতিবছরই এই সময়টায় প্রকাশ করা হয় বিশ্বের সুখী দেশগুলির তালিকা। ইতিমধ্যেই হাতে এসে গিয়েছে ২০২৪ সালের সেই রিপোর্ট। আর প্রতিবছরের মধ্যেই সেই তালিকায় উপরের দিকের স্থান দখলে রেখেছে নর্ডিক দেশগুলিই। এ বছরও শীর্ষস্থানে রয়েছে ফিনল্যান্ড। তালিকায় উপর দিকে রয়েছে ডেনমার্ক, আইসল্যান্ড এবং সুইডেনের মতো দেশগুলি।

খেয়াল করলে দেখবেন, শীর্ষ তালিকায় থাকা বেশিরভাগ দেশেরই জনসংখ্যা বেশ কম। ফিনল্যান্ডে বসবাস করেন ৫৫ লক্ষ মানুষ। ডেনমার্কের জনসংখ্যা ৫৯ হাজারের আশেপাশে। আইসল্যান্ডে বসবাস করেন মাত্র ৩ লক্ষ মানুষ। সুইডেনে বাস ১ কোটি মানুষের। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন জাগে, আসলে কি তবে জনসংখ্যাই একটি দেশের সুখের পক্ষে বাধা।

আরও পড়ুন: ফের ভয়াবহ মিসাইল-ড্রোন হামলা ইউক্রেনে! বর্ষশেষে কেন ফের যুদ্ধের পথে রাশিয়া?

এই তালিকায় পাঁচ নম্বরে রয়েছে ইজরায়েল। ঠিকই শুনেছেন। প্যালেস্টাইনে প্রায় ৩২ লক্ষ মানুষের প্রাণ কেড়েছে যে দেশের সরকার, সেই দেশ কিন্তু সুখীর তালিকায় রয়েছে শীর্ষেই। ইজরায়েলের জনসংখ্যা ৯২ লক্ষের কাছাকাছি। তবে প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দেশের শত্রুদমনে যতই নির্দয়, নিষ্ঠুর হোক না কেন, তাঁর জমানায় দেশের মানুষ যে দিব্যি যে সুখে আছেন, তার প্রমাণ মিলেছে ওই রিপোর্টেই।

এদিকে সুখতালিকার একেবারে শেষে রয়েছে আফগানিস্তান। তালিবান শাসনে নাজেহাল আফগানিস্থানে জনসংখ্যা পাঁচ কোটির আশেপাশে। তালিকায় ১৪৩ নম্বর স্থানে কোনও রকমে টিকে রয়েছে দেশটি। পাকিস্তানের অবস্থাও তথৈবচ। তারা ওই সুখতালিকায় রয়েছে ১০৮ নম্বরে। গত বছর দুয়েক ধরে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি ইউক্রেনের। এই পরিস্থিতিতে যে কোনও দেশের মানুষ সুখে থাকতে পারে না, সেটাই স্বাভাবিক। তবে আশ্চর্যের কথা যেটা, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের চেয়েও অসুখী দেশ ভারতবর্ষ। ওয়ার্ল্ড হ্যাপিনেস ইনডেক্স তো তেমনটাই বলছে। চলতি বছরের রিপোর্টে ভারত রয়েছে ১২৬ নম্বর স্থানে। ভারতের পরে রয়েছে শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশ।

এদিকে আমেরিকার ফলাফল গত বছরের তুলনায় খারাপ হলেও মোটামুটি সুখেই আছে বাইডেনের দেশের মানুষ। গত বছর তারা ছিল ওই তালিকায় ১৬তম স্থানে। এ বছর তারা নেমে এসেছে ২৩-এ। এদিকে প্রেসিডেন্ট জাস্টিন ট্রুডোকে নিয়ে কানাডায় দ্বিমত থাকলেও সে দেশের মানুষও কিন্তু বেশ সুখী। তারা তালিকায় রয়েছে ১৫ নম্বরে। ব্রিটেন ২০-তে, জার্মানি ২৪-এ এবং ফ্রান্স এ বছর তালিকায় সাতাশে নেমে এসেছে। মধ্য প্রাচ্যের দেশগুলোও কিন্তু মন্দ রেজাল্ট করেনি। সংযুক্ত আরব আমিরশাহী রয়ে বাইশে এবং সৌদি আরব জায়গা করে নিয়েছে ২৮-এ। এশিয়ার দেশগুলির মধ্যে সিঙ্গাপুর তিরিশ নম্বরে রয়েছে। ৫০-এ রয়েছে জাপান এবং তার পরেই রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া।

ভারত তো বটেই, আমেরিকার সঙ্গে নিত্য সংঘাতে জড়িয়ে থাকা চিনও কিন্তু রয়েছে তালিকার মাঝামাঝি জায়গায়। তারা জায়গা পেয়েছে ৬০তম স্থানে। ৯৩-তে রয়েছে নেপাল। সবচেয়ে অসুখী দেশগুলির তালিকায় আফগানিস্তানের ধারেকাছেই রয়েছে কঙ্গো, সিয়েরা লিওন, লেসোথো এবং লেবানন।

 

ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, যেখানে বয়স্কের হার বেশি, সেখানেই সুখের নিরিখে কম নম্বর পেয়েছে সেই দেশ। যুব সম্প্রদায় কতটা সুখী, তার বিচার করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, সেখানে শীর্ষে রয়েছে লিথুয়ানিয়া, ইজরায়েল, সার্বিয়া, আইসল্যান্ড ও ডেনমার্ক। শিক্ষা, চাকুরির হার এ সবের উপরেও বেশ খানিকটা নির্ভরশীল এই সুখের মাপকাঠি। মাথাপিছু জিডিপি, স্বাস্থ্যকর জীবন, নিজস্ব জীবন পছন্দ করার স্বাধীনতা, দুর্নীতি-র মতো অনেক কিছুই মাপকাঠি হিসেবে কাজ করে এই পরীক্ষায়। আর সেখানেই ধাক্কা খেয়েছে ভারত। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, প্রায় সব জায়গাতেই কিন্তু পুরুষদের তুলনায় বেশি অসুখী মেয়েরা। পাশাপাশি দেশের জনসংখ্যাও সম্ভবত বড় একটা বিষয় সুখের হিসেবে। অন্তত তালিকায় শীর্ষে থাকা দেশগুলির জনসংখ্যা দেখলে তাই মনে হয়।

আরও পড়ুন: মন ভালো নেই দীর্ঘকাল? রোজের জীবনে ছোট ৮ টি বদলেই পাবেন সুখের হদিশ

একের পর এক সরকারি ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ, শিক্ষায় দুর্নীতি, চাকরিবাকরির ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা, জাতপাত নিয়ে গন্ডোগোল, এই এত এত সমস্যা নিয়ে যে ভারত সুখী দেশের তালিকায় উঠে আসতে পারবে না, তা তো জানা কথাই। তবে এই রিপোর্টে কি আদৌ নড়েচড়ে বসবে সরকার। দেশের মানুষের অ-সুখ নিয়ে কি আদৌ মাথা ঘামাবে তারা। লোকসভা ভোটের যখন আর দেরিমাত্র নেই, সেই সময় সেই সম্ভাবনা নিয়ে সংশয় জাগে বৈকি।

More Articles