'ইন্ডিয়া' বদলে 'ভারত'! কেন দেশের নাম বদলাতে মরিয়া বিজেপি?
India Renamed Bharat: বিজেপির মূল বক্তব্য হচ্ছে, ব্রিটিশরা ভারতের নাম পরিবর্তন করে ইন্ডিয়া করে।
একের পর এক সিদ্ধান্ত-পরিকল্পনার ধাক্কা সামলাচ্ছে দেশ। অভিন্ন দেওয়ানি বিধি, এক দেশ এক নির্বাচনের রেশ কাটতে না কাটতেই দেশের নাম পাল্টানোর প্রস্তাব! দেশের নাম বিষয়টি নিয়ে বিজেপি এবং বিজেপি বিরোধী দুই গোষ্ঠীরই নিজস্ব এজেন্ডা রয়েছে। বিজেপির বিরোধিতায় আস্ত জোটই গড়ে উঠেছে 'ইন্ডিয়া' নামে। এই 'ইন্ডিয়া'-কে, শুধু জোট না, সামগ্রিক ইন্ডিয়া ধারণাটির পাল্টা নরেন্দ্র মোদি সরকার নিয়ে আসতে চলেছে 'ভারত' ধারণাটি। নিছক ইংরেজি আর হিন্দি শব্দ তো নয়। ইন্ডিয়া ততটা ভারত নয়, যতটা 'ভারত' আমাদের ভারত! এই ধারণাটিকেই কাজে লাগাতে চাইছে বিজেপি সরকার। আগামী ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে নির্ধারিত সংসদের বিশেষ অধিবেশন চলাকালীন দেশের সরকারি নাম পরিবর্তন করে ইন্ডিয়ার বদলে 'ভারত' করার প্রস্তাব আসতে পারে। ২০ তম ASEAN-ভারত শীর্ষ সম্মেলন এবং ১৮ তম পূর্ব এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনের জন্য বুধবার এবং বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রীর ইন্দোনেশিয়া সফরের একটি পত্রে 'প্রাইম মিনিস্টার অব ভারত' শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।
এর আগে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ জানিয়েছেন, ভারতের রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে G20 আনুষ্ঠানিক নৈশভোজের যে আমন্ত্রণগুলি পাঠানো হয়েছে তাতে প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়ার বদলে 'প্রেসিডেন্ট অব ভারত' লেখা আছে। তিনি সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছদের উল্লেখও করেছেন যেখানে লেখা আছে, "Bharat, that was India, shall be a Union of States।" এই ইউনিয়ন অব স্টেটস ধারণাটির দেশে কী অবস্থা তার উল্লেখই করছেন জয়রাম রমেশ। বিজেপি 'ভারত' নাম বদল নিয়ে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে চাইছে না। খবরটি সামনে আসার পর থেকেই বিজেপি নেতা, মন্ত্রী সমর্থক, এবং দেশের নানা ক্ষেত্রের তারকারাও 'ভারত'-এর জয়ধ্বনি দিচ্ছেন। খবর প্রকাশ্যে আসতেই অমিতাভ বচ্চনও সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখে ফেলেছেন 'ভারত মাতা কি জয়', যা আবার পক্ষান্তরে আরএসএস-বিজেপির ধ্বনি!
T 4759 - 🇮🇳 भारत माता की जय 🚩
— Amitabh Bachchan (@SrBachchan) September 5, 2023
কিছুকাল আগেই আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত গুয়াহাটিতে গিয়ে বলেছিলেন, ভারত নামটি প্রাচীনকাল থেকেই ব্যবহৃত, এই নামটিকেই এগিয়ে নিয়ে যাওয়া উচিত। জৈন সমাজ আয়োজিত ওই অনুষ্ঠানে তিনি বলেছিলেন, দেশের একাধিক ভাষা হোক না কেন, সবার কাছেই দেশ 'ভারত'। এখানে উল্লেখ্য, সংস্কৃত শব্দ সিন্ধু। সিন্ধু নদ ভারত ও পাকিস্তানের অন্যতম প্রধান নদী। এই সিন্ধু নদের তীরেই সিন্ধু সভ্যতার পত্তন। ইংরিজিতে সিন্ধুকে বলা হয় Indus। Indus শব্দটির আবার উৎস হচ্ছে গ্রিক শব্দ Indos। সেখান থেকেই নাম বদলে হয় ইন্ডিয়া।
আরও পড়ুন- জাতীয় পতাকাতেই অনীহা সংঘের! প্রমাণ ইতিহাসে-বর্তমানে, ‘অ্যান্টি ন্যাশনাল’ কে!
বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ নরেশ বনসালও সম্প্রতি বলেছিলেন 'ভারত' নামটিতে 'ঔপনিবেশিক দাসত্ব'-র গন্ধ রয়েছে। তাই নামটি "সংবিধান থেকে মুছে ফেলা উচিত"। বিজেপির মূল বক্তব্য হচ্ছে, ব্রিটিশরা ভারতের নাম পরিবর্তন করে ইন্ডিয়া করে। সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা আছে 'ইন্ডিয়া, দ্যাট ইজ ভারত'। দেশের নামটি হাজার বছর ধরেই 'ভারত'। যেহেতু 'ইন্ডিয়া' নামটি ঔপনিবেশিক শাসকরা দিয়েছিল তাই এটি দাসত্বের প্রতীক।
বিজেপির নতুন যে বিরোধী জোট, ইন্ডিয়া (ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স) তারা এই 'ইন্ডিয়া' নাম দিয়েই বড় চমক এনেছিল। স্বাভাবিকভাবেই, এই ভারত-ইন্ডিয়া বিতর্কে একটু হলেও ব্যাকফুটে জোট। কংগ্রেস সহ এই বিরোধী জোটের বক্তব্য, বিজেপি ইতিহাসকে বদলাতে চাইছে। অরবিন্দ কেজরিওয়াল প্রশ্ন তুলছেন, যদি ইন্ডিয়া জোট নাম পরিবর্তন করে ভারত রাখে তাহলে বিজেপির কী করণীয়? দেশ ১৪০ কোটি মানুষের। কোনও জোটের নয়, দলেরও নয়। তাহলে ইন্ডিয়া জোট সামনে আসার পরে কেন মোদি সরকার তড়িঘড়ি আস্ত দেশের নামই বদলে দিতে চাইছে?
#WATCH | On Congress leader Jairam Ramesh's claim that invitations to a G20 Summit dinner at Rashtrapati Bhawan sent in the name of ‘President of Bharat’, RJD MP Manoj Jha says, "...It has just been a few weeks since we named our alliance as INDIA and BJP has started sending… pic.twitter.com/wCs5WCwRAB
— ANI (@ANI) September 5, 2023
কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত ভারত জোড়ো যাত্রার ডাক দিয়েছিল কংগ্রেস। কংগ্রেসের মূল লক্ষ্য ছিল, যে ঘৃণার চাষ সারা দেশে বিজেপি সরকার করে চলেছে, যে সাম্প্রদায়িক ভেদকে মাত্রাতিরিক্ত তোল্লাই দেওয়া হচ্ছে বিজেপির নিজস্ব স্বার্থে তার ঠিক উলটোপথে মানুষকে জুড়ে রাখার, ভালোবাসার কথা বলবে কংগ্রেস। রাহুল গান্ধিকে সামনে রেখে কংগ্রেসের সেই ভারত জোড়ো যাত্রা যে দেশে প্রভাব ফেলেনি বিন্দুমাত্র এমনটা চরম নিন্দুকও বলবেন না। কংগ্রেস 'ভারত'-জুড়তে চেয়ছে। বিজেপি ও আরএসএস যে ভারতের কথা বলে, যে ভারতে সকলের সমান ঠাঁই নেই, সকলের সমান মর্যাদা নেই, সংখ্যালঘু আর সংখ্যাগুরুর দাপটে ভেঙে যাওয়া সেই ভারতের উল্টোপিঠে এক অন্য ভারতের গল্প সামনে আনতে চেয়েছিল কংগ্রেস। মোক্ষম ক্লাইম্যাক্সে বিজেপি গল্পটির মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে।
আরও পড়ুন- এক দেশ এক নির্বাচনের পক্ষেই সওয়াল প্রশান্ত কিশোরের! মোদি ঘনিষ্ঠ হতে চাইছেন পিকে?
কংগ্রেস কেন এতে অসন্তুষ্ট সেই বিষয়ে কটাক্ষ করে বিজেপি নেতা জেপি নাড্ডা প্রশ্ন তুলছেন, “কেন ভারত জোড়োর নামে রাজনৈতিক যাত্রা ‘ভারত মাতা কি জয়’ ধ্বনিকে এত ঘৃণা করে?” বিজেপি পাল্টা যে ধারণাটি সামনে আনছে তা হচ্ছে, কংগ্রেসের কোনও শ্রদ্ধা নেই দেশের প্রতি, না তো শ্রদ্ধা আছে দেশের সংবিধানের প্রতি। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম শরিকদল তৃণমূলের নেত্রী বলছেন, ইন্ডিয়া নামে সারা বিশ্ব চেনে। ভারতের সব মানুষই জানেন দেশের নাম ভারত! তাহলে হঠাৎ কী এমন প্রয়োজন পড়ছে দেশের নাম বদলের?
বিজেপি ক্ষমতায় আসার পর থেকে নাম বদলের ধারা বজায় রেখেছে। মুসলিম কোনও নামের সৌধ, স্টেশন, ঐতিহাসিক স্থানের নাম পাল্টে ফেলা হয়েছে। মোগল ইতিহাস সিলেবাস থেকে বাদ পড়েছে। দেশ তো আর মোঘলসরাই নয়, চাইলেই দীনদয়াল উপাধ্যায় স্টেশন হয়ে যাবে! দেশের নাম বদলে ফেলার মতো সিদ্ধান্ত, ২০২৪ এর আগে অন্যতম বড় ইস্যু। ইন্ডিয়া জোট, মণিপুর সহ সমস্ত কিছুকে ঢেকে ফেলার মতো বড়!