বাড়ছে ভারতীয়দের দানের মন! নেপথ্যে কি শুধুই পুণ্যের ঝোঁক নাকি...
Donations by Indian: সামগ্রিক ভাবে সমস্ত অনুদানের পরিমাণই বেড়েছে এ বছর। আর সব ক্ষেত্রেই এ বছর ভারতীয় পরিবারগুলি বেশি মাত্রায় উদারতা দেখিয়েছে। বেড়েছে ধর্মীয় সংগঠনগুলিতে অনুদানের পরিমাণও।
দান মানেই পুণ্য। আর সেই পুণ্যের দিকে নাকি একটু বেশিই হেলে ভারতীয়দের দাঁড়িপাল্লা। তেমনটাই বলছে একটি রিপোর্ট। অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড ফিলানথ্রপি (CSIP) সম্প্রতি একটি গবেষণায় জানিয়েছে, ২০২১-২২ সালে নাকি উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে ভারতীয়দের সেই দানধ্যানের পরিমাণ। আর ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলিতেই বেশি জমা পড়েছে নাকি সেই দানের অঙ্ক।
সেই সমীক্ষার রিপোর্টে ভারতীয়দের দানের যে অঙ্ক দেখানো হয়েছে, তা চোখ কপালে তোলার মতোই। দেখা যাচ্ছে, ভারতীয় পরিবারগুলো নয় নয় করে অন্তত ২৭ হাজার কোটি টাকা দান করেছে সারা বছর ধরে বিভিন্ন দাতব্য সংস্থাগুলিতে। ২০২০-২১ অর্থবর্ষে সেই দানের পরিমাণ ছিল ২৩,৭০০ কোটি টাকার কাছাকাছি।
আরও পড়ুন: আয়ু কমছে ভারতীয়দের! প্রতিদিন কত কদম হাঁটলেই কমতে পারে হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা?
২০২১-২২ সালে 'হাউ ইন্ডিয়া গিভস' নামে একটি প্রতিবেদনে অনুযায়ী, এই যে এত কোটি কোটি টাকা দান, তার প্রধান কারণ হিসেবে উঠে এসেছে বয়স্কদের যত্ন, জনস্বাস্থ্য এবং শিশুদের কল্যাণের বিষয়টি। ২০২১ সাল থেকেই বাজারের আকার বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে দাতার সংখ্যা। এবং তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে অনুদানের অঙ্কটাও।
তবে এত সব কিছুর মধ্যেও সবচেয়ে বেশি অনুদান কিন্তু যাচ্ছে বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠনগুলির কাছেই। অর্থাৎ জিরাফের চেয়ে ধর্মের দিকেই বেশি হেলে আজও ভারতবাসীরা। এর পাশাপাশি ভিক্ষুকেরাও কিন্তু কিছু কম অনুদান পাননি। তবে ধর্মীয় সংগঠনে দানধ্যানের পরিমাণ অনেক বেশি বেড়েছে ভারতীয়দের। যে কারণে ধর্মীয় সংগঠনগুলির মার্কেট শেয়ার ৭০ শতাংশ থেকে ৭৫ শতাংশে পৌঁছতে সময় লাগেনি। দেখা যাচ্ছে, প্রায় ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পরিবারই ধর্মীয় উৎসব বা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে গিয়ে বা ধর্মীয় স্থান পরিদর্শন করতে দিয়ে দানধ্যানে মজেছেন। আর সেই সব দানের অঙ্ক ছোট থেকে শুরু করে বেশ বড়সড় আকারেও পৌঁছে যায় প্রায়শই। তবে এই অনুদান পাওয়ার জন্য় সংস্থাগুলি প্রায়শই পরিবারগুলির সঙ্গে যোগাযোগ করে থাকে। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায় এই ধরনের প্রচারের পরিমাণ বেশ ব্যপক।
সমীক্ষা বলছে, ভারতীয় পরিবারগুলি মূলত বয়স্কদের যত্ন, জনস্বাস্থ্য ও শিশুকল্যাণের জন্যই সবচেয়ে বেশি অনুদানে রাজি হয়। তবে অনুদানে রাজি হলেও স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার বিষয়ে আগ্রহী খুব কম মানুষই। সমীক্ষা রিপোর্ট অনুযায়ী, মাত্রা ১ শতাংশ পরিবার এই ধরনের স্বেচ্ছাসেবক হওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করে থাকে।
মজার ব্যাপার এই যে এত বড় বড় অঙ্কের অনুদান, এর ৯৮ শতাংশই নাকি নগদে দেওয়া হয়ে থাকে। আর ১১ শতাংশ ইন-কাইন্ডে দান করে থাকেন। ইন-কাইন্ডের অর্থ জামাকাপড়, খাবারদাবার বা পড়াশোনার জিনিস কিনে দেওয়া বা ব্যক্তিগত ভাবে জড়িত থেকে কিছু করা। না, সেই জায়গাটা উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। বরং টাকা দিয়েই দানের পুণ্য কিনে নিতেই বেশি আগ্রহী ভারতীয়েরা। হ্যাঁ, তেমনটাই জানাচ্ছে সেন্টার ফর সোশ্যাল ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড ফিলানথ্রপি-র ওই রিপোর্ট। পাশাপাশি মাথায় রাখতে হবে কিন্তু নগদের ব্যাপারটিও। প্রায়শই তারকাদেরও এমন বহু স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত থাকতে দেখা যায়। বহু ক্ষেত্রেই কিন্তু আয়কর বাঁচানোর ব্যাপারটিও থাকে এই দানধ্যানের পিছনে।
তবে ভারতীয়রা দান-ধ্যানের ক্ষেত্রে মাথা খাটিয়েই কাজ করেন। ফলে যে সব সংস্থা অনুদান চাওয়ার ক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্য এবং স্বচ্ছতা দেখাতে পারে, তারাই বেশি অনুদান পায়। তবে অনেকেই নিজের চোখে দেখার পরেই অনুদানের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে চান বলেও মনে করা হচ্ছে রিপোর্টে। ওই সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ভিক্ষুকদের অনুদান বা ইউনিসেফ বা পিএম কেয়ারের মতো ত্রাণ তহবিলে অনুদানের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত নিতে দেখা গিয়েছে মহিলাদের। এদিকে, বিভিন্ন ধর্মীয় সংগঠন বা কোনও একটা কারণ বা পিটিশনকে সমর্থন করে অনুদান দেওয়ার ক্ষেত্রে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এগিয়ে এসেছেন পুরুষেরা। এদিকে, ৪৬-৬০ বছর বয়সের যারা, তাঁরা বহুক্ষেত্রেই কোনও একটা কারণের জন্য অনুদান দিতে পছন্দ করেন।
কিন্তু এই যে এত লক্ষ-কোটি টাকা দান, কারা দিচ্ছেন সেসব। সমীক্ষা বলছে, আর্থ-সামাজিক ভাবে যারা একটু এগিয়ে থাকা অর্থাৎ তথাকথিত উচ্চবিত্ত গোষ্ঠী থেকে ৫০ শতাংশ অনুদান। দেখা যাচ্ছে বিশেষত বড় বড় শহরগুলি থেকেই আসছে মোট অনুদানের প্রায় ৫১ শতাংশ। এর মধ্যে বয়স্কদের দেখাশোনার খাতে জমছে ৫৩ শতাংশ, জনস্বাস্থ্যের পরিকাঠামো উন্নয়ন খাতে জমা পড়ছে ৩৬ শতাংশ। আর শিশুদের শিক্ষা এবং তাদের সামাজিক কল্যাণের পিছনে জমা পড়ে ৩৩ শতাংশ। বেশিরভাগ ভারতীয় পরিবার এই তিনটি কারণেই অনুদান দিতে রাজি হচ্ছে বলে জানাচ্ছে ওই সমীক্ষা।
আরও পড়ুন:অপুষ্টিতে ভুগে মরছে লাখো লাখো শিশু, এই ভারত চেয়েছিলেন নেতাজি?
আর এ বছর সামগ্রিক ভাবে এই সমস্ত অনুদানের পরিমাণই বেড়েছে। প্রায় সবকটি জায়গাতেই অনুদানের ক্ষেত্রে এ বছর ভারতীয় পরিবারগুলি বেশি মাত্রায় উদারতা দেখিয়েছে। আর তাতে উল্লেখযোগ্য ভাবে বেড়েছে ধর্মীয় সংগঠনগুলিতে অনুদানের পরিমাণও। দেশ জুড়ে যেভাবে ধর্মের নামে আগ্রাসন বাড়ছে, তাতে এ ঘটনা কিছু অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু প্রশ্ন জাগে, সাম্প্রতিক কালে অনুদানের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে, সেই তুলনায় মানুষের রোজগার আদৌ বেড়েছে কি? নাকি একটি গোষ্ঠির কাছে বেআইনি কালো টাকা সাদা করার এক অন্যতম রাস্তা হয়ে উঠেছে এই ধর্মীয় বা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলিতে দেওয়া অনুদান!