আরও এক যুদ্ধ শুরুর আশঙ্কা! হিজবুল্লাহের সঙ্গে সংঘাত কোথায় নিয়ে যাবে ইজরায়েলকে?
Israel Hezbollah Conflict: হিজবুল্লাহ-ইজরায়েলের সংঘাতের আঁচ দিব্য়ি টের পাচ্ছে লেবানন। বাড়ছে উত্তাপ। এই পরিস্থিতিতে লেবাননে বসবাসকারী ভারতীয়দের সতর্ক করেছেন লেবাননের রাজধানী বেইরুটের ভারতীয় দূতাবাস।
গাজায় যুদ্ধের তীব্রতা সামান্যতমও কমায়নি ইজরায়েল। দেখতে দেখতে প্রায় ৩০০ দিন ছুঁই ছুঁই হামাস-ইজরায়েল যুদ্ধ। মধ্যিখানে তীব্র হয়ে উঠেছিল ইরানের সঙ্গে সংঘাতের সম্ভাবনা। লেবাননের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল্লাহের সঙ্গে অনেকদিন ধরেই অশান্তি লেগেই রয়েছে ইজরায়েলের। প্রায়শই ইজরায়েলকে নিশানা করে রকেট হামলা চালায় হিজবুল্লাহ জঙ্গিরা। প্রত্যুত্তর ফিরিয়ে দেয় ইজরায়েল। তবে এবার সেই হামলা-প্রতিহামলাই বড়সড় সংঘাতের মুখে দাঁড়িয়ে। একদিন আগে ইরানের মদতপুষ্ট হিজবুল্লাহরা ফের হামলা চালায় ইজরায়েলে। অন্য হামলাগুলির চেয়ে যা ছিল অনেকটাই বড়। সেই হামলায় ইজরায়েল অধিকৃত গোলান হাইটসে মৃত্যু হয় অন্তত ১২টি শিশুর। হিজবুল্লাহর এই পদক্ষেপে ক্ষোভে ফুঁসে উঠেছে ইজরায়েল। স্বভাবচিত ভঙ্গিতেই ইজরায়েল হুঙ্কার দিয়েছে, এর দাম দিতেই হবে হিজবুল্লাহকে।
গত ৭ অক্টোবর ইজরায়েলে হামলা চালিয়েছিল প্যালেস্টাইনের সশস্ত্র জঙ্গি গোষ্ঠি হামাস। সেই হামলার প্রত্যুত্তর এক বছর ধরে দিয়েই চলেছে ইজরায়েল। সে সময়ই ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গর্জে উঠেছিলেন, শেষ দেখে থামবেন। তার পর থেকে লাগাতার যুদ্ধ চালিয়ে গিয়েছে গাজায় ইজরায়েল। প্রায় চল্লিশ হাজারের মুখে এসে ঠেকেছে গাজায় মৃত্যুর সংখ্যা। জখম কত, তার কোনও ঠিক ঠিকানা নেই। সেই যুদ্ধের মধ্যেই আরও এক ভয়ানক যুদ্ধশুরুর আতঙ্কে কাঁপছে বিশ্ব। এবার কি লেবাননের বিরুদ্ধেও অস্ত্র ধরতে চলেছে ইজরায়েল? উঠেছে প্রশ্ন।
আরও পড়ুন:গাজার শরণার্থী শিবিরে ভয়ঙ্কর হামলা! ফের নিরপরাধ মানুষের রক্তে ভিজল নেতানিয়াহুর হাত
দীর্ঘদিন ধরেই লেবাননের মাটিকে ব্যবহার করে ইজরায়েলে হামলার পর হামলা চালিয়ে গিয়েছে হিজবুল্লাহ। অভিযোগ, হিজবুল্লাহের কর্মকাণ্ডে সরাসরি মদত জুগিয়ে চলে ইরান। ইরানের সঙ্গেও ইজরায়েলের সংঘাত দীর্ঘদিনের। সম্প্রতি ইরানের প্রেসিডেন্ট খুনেও ইজরায়েলের হাত রয়েছে অভিযোগ উঠেছিল। এরই মধ্যে হিজবুল্লাহের সাম্প্রতিকতম হামলা যেন ইজরায়েলের ক্ষোভের আগুনে ঘি ঢেলেছে। ইতিমধ্যেই প্রমাদ গুনেছে আমেরিকা-ব্রিটেন। মিত্র দেশ ইজরায়েলকে একই সঙ্গে একাধিক যুদ্ধে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে তারা। যদিও রবিবারের হামলার পর সোমবার দিনভর ইজরায়েলি যুদ্ধবিমান টহল দিয়েছে লেবাননের আকাশে। এমনকী নিশানাও করা হয় হিজবুল্লাহের একাধিক ঘাঁটি। নজর রাখা হয় সীমান্তবর্তী এলাকাগুলিতেও।
যত সময় পেরোচ্ছে, ততই তীব্র হচ্ছে নয়া যুদ্ধের আশঙ্কা। সোমবার লেবাননের দক্ষিণে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইজরায়েল। সংবাদসংস্থা রয়টার্স সূত্রের খবর, ওই হামলায় অন্তত ২ জন প্রাণ হারিয়েছেন। পরিস্থিতির গন্ধ শুঁকে সতর্কতা জারি করেছে নয়াদিল্লিও। হিজবুল্লাহ-ইজরায়েলের সংঘাতের আঁচ দিব্য়ি টের পাচ্ছে লেবানন। বাড়ছে উত্তাপ। এই পরিস্থিতিতে লেবাননে বসবাসকারী ভারতীয়দের সতর্ক করেছেন লেবাননের রাজধানী বেইরুটের ভারতীয় দূতাবাস। তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলারও পরামর্শ দিল। লেবাননে বসবাসকারী ভারতীয়দের জন্য জরুরিকালীন একটি ফোন নম্বর এবং ইমেল আইডিও প্রকাশ করেছে তারা। লেবাননে ভারতীয় দূতাবাসের প্রকাশিত নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, ‘‘সম্প্রতি এই অঞ্চলে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তার দিকে নজর রেখে লেবাননে বসবাসকারী ভারতীয় এবং যাঁরা সে দেশে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন, তাঁদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। বেইরুটে ভারতীয় দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেও চলতে বলা হচ্ছে।’’ এর পর দূতাবাসে যোগাযোগের জন্য ই-মেল আইডি এবং ফোন নম্বরও প্রকাশ করা হয়েছে নির্দেশিকায়। অ্যাসোসিয়েট প্রেস (এপি) দাবি করেছে, ইজ়রায়েল এবং হেজবুল্লার সংঘর্ষের কারণে বেইরুট বিমানবন্দরে বহু বিমান বাতিল হয়েছে। বেশ কিছু বিমান দেরিতে চলছে।
রবিবার যে আকারের হামলা গোলান হাইটসে চালিয়েছে হিজবুল্লাহরা, তা সাম্প্রতিক অতীতে হয়েছে কিনা বলা মুশকিল। যদিও সেই হামলার দায় নেয়নি হিজবুল্লাহরা। যদিও সে কথা মানতে নারাজ তেল আভিভ। ইজরায়েলের তরফে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, হিজ়বুল্লা যে জড়িত, তার সমস্ত প্রমাণ রয়েছে তাদের কাছে। ইজ়রায়েলের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছেন, ‘‘হিজ়বুল্লা এই ঘটনার জন্য দায়ী এবং এর দাম ওদের দিতে হবে। শত্রুদের উপর চরম প্রত্যাঘাত করা হবে।’’ ইজ়রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর দফতর থেকে ঘোষণা করা হয়েছে, আনুমানিক ৩০টি রকেট লেবাননের দিক থেকে ইজ়রায়েলে এসে পড়েছিল রবিবার। ১২টি শিশুর মৃত্যুর পাশাপাশি অন্তত ৪৪ জন জখম হয়েছেন ওই হামলায়। যে শিশুগুলি হামলায় মারা গিয়েছে, সে সময় একটি ফুটবল মাঠে খেলছিল তারা। হঠাৎ করেই সেখানে রকেট এসে পড়ে।
আরও পড়ুন:হামাসের কায়দায় ইজরায়েলে হামলা হিজবুল্লাহের, নতুন যুদ্ধের শঙ্কায় কাঁপছে বিশ্ব
সেই ১৯৬৭ সালে সিরিয়ার কাছ থেকে গোলান হাইটস অঞ্চলের দখল নিয়েছিল ইজ়রায়েল। ১৯৮১ সাল নাগাদ সেখানে নিজেদের প্রশাসন গঠন করে তেল আভিভ। আন্তর্জাতিক আইন ও রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের ঘোষণা অনুযায়ী গোলান হাইটসকে ইজ়রায়েল-অধিকৃত এলাকা হিসেবে গণ্য করা হয়। কম পক্ষে ২০ হাজার ড্রুজ় আরবের বাস এখানে। এরা অবশ্য নিজেদের সিরীয় বলেই দাবি করে। ইজ়রায়েলি নাগরিকত্ব এরা গ্রহণ করেনি কোনওদিনই। সেই হিসেবেই হিজ়বুল্লার হামলার পরে আঞ্চলিক প্রশাসন জানিয়েছে, যে ১২টি বাচ্চার মৃত্যু হয়েছে, তারা কেউ ইজ়রায়েলি নাগরিক নয়। ইজ়রায়েলের বিরোধী দলনেতা জাইর লাপিদের কথায়, ‘‘ফুটবল মাঠে যে বাচ্চাগুলি মারা গিয়েছে, তারা আমাদের পরিবারের যে কেউ হতে পারত। তাই ওরা আমাদেরই সন্তান।’’ ফলে যুদ্ধের সম্ভাবনা তীব্র করেই ইজরায়েলের তরফ থেকে ভয়াবহ যুদ্ধের হুঁশিয়ারি মিলেছে। এরই মধ্যে ইরানের তরফে পাল্টা হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে ইজরায়েলকে। লেবাননে প্রত্যাঘাতের আঘাত মারাত্মক হবে বলেই নেতানিয়াহুকে হুমকি দিয়েছে তারা। এই পরিস্থিতিতে ফের কি যুদ্ধের পথই বেছে নেবে ইজরায়েল? আরও এক ভয়াবহ মানবতার সঙ্কটের সামনে উপস্থিত হবে লেবানন? বিশ্ব জুড়ে ঘনিয়েছে প্রবল উদ্বেগ।