মমতা ও ডাক্তারদের দু'ঘণ্টার দীর্ঘ বৈঠক, এখন কি শান্তিকল্যাণ?

Mamata Banerjee Junior Doctor Meeting: হাসপাতাল পরিকাঠামোর রদবদল সংক্রান্ত যাবতীয় দাবি মেনে নিয়েছে রাজ্য।

চারবার ভেস্তে যাওয়ার পর অবশেষে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ২ঘণ্টা ধরে কালীঘাটের বাড়িতে 'লাইভ স্ট্রিমিং' ছাড়াই বৈঠক হলো। সোমবার ২জন স্টেনোগ্রাফারকে নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে অবশেষে পৌঁছে যান জুনিয়র ডাক্তাররা। শেষবার, অর্থাৎ গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ির দোরগোড়া থেকেই ফিরে গেছিলেন আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা। সোমবার সরকারের 'শেষ' চেষ্টায় সাড়া দেন জুনিয়র ডাক্তাররা। ৩৬ দিনের আন্দোলনের পর অবশেষে বহু প্রতীক্ষিত বৈঠক হলো। তবে লাইভ স্ট্রিমিং নয়, দ্বিপাক্ষিক মিনিটস লেখার শর্ত দেয় সরকারপক্ষ। সেই শর্ত মেনেই জুনিয়র ডাক্তারদের ৩০ জনের একটি প্রতিনিধিদল দুই স্টেনোগ্রাফারকে নিয়ে পৌঁছন কালীঘাটে। কালীঘাটে রওনা দেওয়ার আগে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের মধ্যে থেকে চিকিৎসক-অভিনেতা কিঞ্জল নন্দ জানিয়েছিলেন, কালীঘাটে কোনও সিদ্ধান্ত তাঁরা নেবেন না। প্রতিনিধিরা অবস্থানের স্থলে ফিরে এসে সকলের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন। তাতে যদি আন্দোলন দীর্ঘতর হয় তাঁরা তাতেও রাজি। দীর্ঘ বৈঠক শেষে জানা গিয়েছে, হাসপাতাল পরিকাঠামোর রদবদল সংক্রান্ত যাবতীয় দাবি মেনে নিয়েছে রাজ্য। এ বিষয়ে মঙ্গলবারই  রাজ্য সরকার ঘোষণা করতে পারে।

পাঁচদফার মধ্যে দু'টি দফার ক্ষেত্রে কোনওভাবেই যে ডাক্তাররা আপস করবেন না এই বার্তা তারা আগেই দিয়ে রেখেছিলেন। রাজ্যের পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা এবং স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য আধিকারিকের পদত্যাগের দাবি নিয়ে কোনওরকম সমঝোতার পথে তারা হাঁটবেন না এ কথা সাফ জানিয়েছিলেন চিকিৎসকরা। রাতে বৈঠক শেষে সাংবাদিক বৈঠক করার ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী। কালীঘাটে এদিন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠকে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তীও।

আরও পড়ুন- চারবার ভেস্তেছে বৈঠক! তবু কেন বেলাশেষে মুখোমুখি দু’পক্ষ?

আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররা গোড়া থেকেই পাঁচ-ছ'দফা দাবির কথা বলে আসছিলেন। সেগুলি হল —

১। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত সমস্ত দোষীদের দ্রুত চিহ্নিত করা, অপরাধের উদ্দেশ্য সামনে আনা এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি।

২। তথ্যপ্রমাণ লোপাটের সঙ্গে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচার।

৩। সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণে ‘ব্যর্থ প্রমাণিত’ কলকাতা পুলিশের কমিশনার বিনীত গোয়েলের ইস্তফা।

৪। রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা।

৫। রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভয়মুক্ত পরিবেশ গড়া এবং গণতান্ত্রিক পরিবেশ সুনিশ্চিত করা।

৬। স্বাস্থ্যশিক্ষা অধিকর্তা, স্বাস্থ্য আধিকারিকের পদত্যাগ।

উল্লেখ্য, প্রথম ১০ সেপ্টেম্বর নবান্নে আন্দোলনকারীদের প্রতিনিধিদের মেল করে ডাকা হয়েছিল। তবে ওই মেলের ভাষা ‘অবমাননাকর’ বলে দাবি করে বৈঠকে যোগ দিতে যাননি জুনিয়র ডাক্তারেরা। মেল করেছিলেন স্বাস্থ্যসচিব নারায়ণস্বরূপ নিগম। যে স্বাস্থ্যসচিবের তারা পদত্যাগ চাইছেন, সেই তিনিই মেল করায় আরই ক্ষুব্ধ হন আন্দোলনকারীরা। এরপর ১২ সেপ্টেম্বর তাঁদের নবান্নে বৈঠকে ডাকা হয়। মুখ্যমন্ত্রী অপেক্ষা করলেও সেদিন বৈঠক হয়নি কারণ সরকার এই বৈঠকের সরাসরি সম্প্রচারে রাজি হয়নি। তারপর গত শনিবার সকালে স্বাস্থ্য ভবনের কাছে জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নাস্থলে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী। সন্ধেয় কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে আন্দোলনকারী ডাক্তারদের ডাকা হয় বৈঠকের জন্য। সেখানেও লাইভ স্ট্রিমিং বা ভিডিও করার দাবিতে অনড় ছিলেন ডাক্তাররা। ফলে সেদিনও ভেস্তে গিয়েছিল বৈঠক। 

১৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার রয়েছে সুপ্রিম কোর্টের শুনানি। সুপ্রিম কোর্ট গত ৯ তারিখ, সোমবার বলেছিল জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফিরতে হবে ১০ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটার মধ্যে। তবে কাজে ফেরেননি ডাক্তাররা। তারা স্বাস্থ্যভবন অভিযান করেছেন। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে রাত জেগে আন্দোলন চালিয়ে গেছেন। কর্মবিরতি চলেছে। সরকার ইতিমধ্যেই আদালতে হিসেব পেশ করেছে যে জুনিয়র ডাক্তারদের লাগাতার কর্মবিরতির জন্য রোগী মৃত্যু বাড়ছে। কাজে ফেরার নির্দেশ দেওয়ার ১ সপ্তাহ অতিক্রান্ত। এর মধ্যে যদি জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে না ফেরেন তাহলে তা শীর্ষ আদালতকে অবমাননা করা হয়। রাজ্য আদালতে প্রমাণ করতে পারে সরকারের সদিচ্ছা সত্ত্বেও ডাক্তাররা সাড়া দেননি। এতে আন্দোলনের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ হয়। তাই ১৭ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম শুনানির আগে ১৬ তারিখের বৈঠক ছিল গুরুত্বপূর্ণ।

More Articles