জুনিয়র ডাক্তারদের অনশনের ৩৬ ঘণ্টা পার! উৎসবমুখী মানুষের কিছু আসে-যায়?

Junior Doctor Hunger Strike: জুনিয়র ডাক্তাররা জানান, সিবিআইয়ের উপর সম্পূর্ণ আস্থাও নেই তাঁদের। অথচ আগে তাঁরাই আথা জানিয়েছিলেন তদন্ত প্রক্রিয়ায়।

বৈঠক হয়েছে একাধিক। কিছু দাবি মানা হয়েছে, কিছু হয়নি। ১০ দফা দাবি সামনে রেখে দ্বিতীয়বার পূর্ণকর্মবিরতি ডেকেছিলেন। তারপর গত শনিবার রাত থেকে ধর্মতলায় মেট্রো চ্যানেলের সামনে আমরণ অনশনে বসেছেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। প্রথমে এই অনশনে আরজি কর হাসপাতালের কোনও প্রতিনিধি ছিলেন না। তারপর আরজি করের জুনিয়র ডাক্তার অনিকেত মাহাতো রবিবার ধর্মতলায় গিয়ে বাকি ছ’জনের সঙ্গে অনশনে যোগ দেন। এই মুহূর্তে ৭ জন জুনিয়র ডাক্তার আমরণ অনশনে বসেছেন। ৩৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গিয়েছে অনশনের। সরকার অবশ্য এখনও সাড়া দেয়নি।

শনিবার রাত্রি থেকে ধর্মতলায় আমরণ অনশনে বসেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের অনুষ্টুপ মুখোপাধ্যায় (এন্ডোক্রিনোলজি বিভাগের পিজিটি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া), স্নিগ্ধা হাজরা (ক্যানসার বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট), তনয়া পাঁজা (ইএনটি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট), এসএসকেএমের অর্ণব মুখোপাধ্যায় (নেফ্রোলজি বিভাগের পিজিটি প্রথম বর্ষের পড়ুয়া), কেপিসি মেডিক্যাল কলেজের সায়ন্তনী ঘোষ হাজরা (প্যাথোলজি বিভাগের পিজিটি তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া) এবং এনআরএস মেডিক্যাল কলেজের পুলস্ত্য আচার্য (অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের পিজিটি প্রথমবর্ষের পড়ুয়া)। আরজি করের কেউ না থাকায় প্রশ্ন ওঠে, যে হাসপাতালের দুর্নীতি, ধর্ষণ ও হত্যা নিয়ে এত আন্দোলন, সেই হাসপাতালের কোনও ডাক্তারই কি রাজি হলেন না অনশনে? তারপর রবিবার থেকে অনশনে যোগ দেন আরজি করের অ্যানাস্থেসিয়া বিভাগের পিজিটি তৃতীয় বর্ষের পড়ুয়া অনিকেত মাহাতো।

মূলত আরজি করের ঘটনার প্রতিবাদ এবং নিরাপত্তার স্বার্থে ১০ দফা দাবি নিয়েই চলছে অনশন। কী কী রয়েছে সেই দশ দফা দাবিতে?

১. স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত নির্যাতিতার ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে হবে।

২. স্বাস্থ্যক্ষেত্রে প্রশাসনিক অক্ষমতা এবং দুর্নীতির দায় নিতে হবে স্বাস্থ্য দফতরকেই। নারায়ণস্বরূপ নিগমকে স্বাস্থ্যসচিবের পদ থেকে অপসারণ করতে হবে।

৩. রাজ্যের প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কেন্দ্রীয় ‘রেফারেল’ ব্যবস্থা' বা রোগীকে অন্যত্র স্থানান্তর করার প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।

৪. প্রতিটি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কতগুলি বেড ফাঁকা রয়েছে, তা জানানোর জন্য একটি করে ডিজিটাল মনিটর রাখতে হবে।

৫. প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে কলেজভিত্তিক টাস্ক ফোর্স গঠন করতে হবে যেখানে জুনিয়র ডাক্তারদের নির্বাচিত প্রতিনিধিও থাকবেন। সিসিটিভি, ডাক্তারদের জন্য অন কল রুম, শৌচালয়, হেল্পলাইন নম্বর, প্যানিক বোতাম চালু করতে হবে।

৬. হাসপাতালগুলিতে পুলিশি নিরাপত্তা আরও বৃদ্ধি করতে হবে। সিভিক ভলান্টিয়ারের বদলে পুলিশকর্মীদের রাখতে হবে দায়িত্বে। মহিলা পুলিশকর্মী নিয়োগ করতে হবে।

৭. হাসপাতালগুলিতে ডাক্তার, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীদের শূন্যপদে দ্রুত নিয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে।

৮. বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে যাঁদের বিরুদ্ধে ‘ভয়ের রাজনীতি’ চালানোর অভিযোগ রয়েছে, তাঁদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান কমিটি গঠন করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। রাজ্যস্তরেও অনুসন্ধান কমিটি গঠন করতে হবে।

৯. প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। মেডিক্যাল কলেজগুলির রেসিডেন্ট ডাক্তারদের সংগঠনকে স্বীকৃতি দিতে হবে। মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতাল পরিচালনার ক্ষেত্রে প্রতিটি কমিটিতে চিকিৎসক পড়ুয়া ও জুনিয়র ডাক্তারদের প্রতিনিধি রাখতে হবে।

১০. পশ্চিমবঙ্গ মেডিক্যাল কাউন্সিল এবং পশ্চিমবঙ্গ হেলথ রিক্রুটমেন্ট বোর্ডে দুর্নীতি ও বেনিয়মের অভিযোগগুলি দ্রুত তদন্ত শুরু করতে হবে।

গত শুক্রবার রাতে সাংবাদিক বৈঠক করে জুনিয়র ডাক্তারেরা ঘোষণা করেছিলেন, কর্মবিরতি তুলে নিলেও যত দিন পর্যন্ত না তাঁদের দাবি পূরণ হচ্ছে, তত দিন অবস্থান চালিয়ে যাবেন। আর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সরকার তাঁদের ওই দশ দফা দাবি না মানলে তাঁরা আমরণ অনশন শুরু করবেন। ২৪ ঘণ্টা পরেও সরকারের তরফে সাড়া মেলেনি। জুনিয়র ডাক্তারেরা বলেছিলেন, ‘‘২৪ ঘণ্টা সময় দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ২৪ ঘণ্টা পর পেলাম শুধুই হুমকি। উৎসবে ফিরতে বলা হচ্ছে, তবে আমরা সেই মানসিকতায় নেই। আজ থেকেই আমরণ অনশনে বসছি আমরা। আমরা কাজে ফিরছি কিন্তু খাবার খাব না।’’ তারা আরও জানান, সিবিআইয়ের উপর সম্পূর্ণ আস্থাও নেই তাঁদের। অথচ আগে তাঁরাই আথা জানিয়েছিলেন তদন্ত প্রক্রিয়ায়। এখন জুনিয়র ডাক্তাররা বলছেন, আদালতে যে শুনানি হচ্ছে তাতে বোঝা যাচ্ছে না, তদন্ত ঠিক কোন পর্যায়ে রয়েছে। পাশাপাশি, জয়নগরে নয় বছরের শিশুর ধর্ষণের ঘটনা আরও ক্ষোভ বাড়িয়ে দিয়েছে।

ক্যালেন্ডার অনুযায়ী পুজো সমাগত। কলকাতার প্যান্ডেলে নিয়ম মেনেই উৎসবে ফিরেও গিয়েছেন বড় অংশের মানুষ। ধর্মতলা চত্বরে ডাক্তারদের এই অনশনে কি উৎসবমুখী মানুষের কিছু আসে-যায়? সরকারের কিছু আসে-যায়? একের পর এক নারকীয় ঘটনা ও প্রশাসনের নীরবতাকে কতখানি আঘাত করতে পারবে ডাক্তারদের জীবন বাজি রেখে এই লড়াই?

More Articles