চাল-গমেই কোটি কোটি টাকা নয়ছয়! কীভাবে রেশন দুর্নীতিতে জড়ালেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়?
Jyotipriya Mallick Ration Scam : সাড়ে ৫৩ ঘণ্টা তল্লাশির পর খাদ্য সরবরাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১০৯টি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয় বাকিবুরের বাড়ি থেকে।
তৃণমূলের মন্ত্রী বিধায়কদের দিন ভালো যাচ্ছে না দীর্ঘকাল ধরেই। তৃণমূল ও দুর্নীতি শব্দ দু'টিও যেন সমার্থক হয়ে উঠছে দিন দিন। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতিতে পার্থ চট্টোপাধ্যায়, মানিক ভট্টাচার্য, জীবনকৃষ্ণ সাহার গ্রেফতারির পর এবার রেশন দুর্নীতিকাণ্ডে গ্রেফতার রাজ্যের আরেক মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক! জ্যোতিপ্রিয়র গ্রেফতারির ঠিক আগেই গ্রেফতার হয় বাকিবুর রহমান। চাল ও গমকল ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের মিলে তল্লাশি চালিয়ে রেশন দপ্তর থেকে শুরু করে রাজ্য সরকারের ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল এসেনসিয়াল কমোডিটিস সাপ্লাই কর্পোরেশন লিমিটেড’-এর জাল স্ট্যাম্প ও সিল উদ্ধার করে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট। কলকাতায় বাকিবুরের কৈখালির ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালিয়ে ইডি একশোর বেশি সরকারি দফতরের সিলমোহর উদ্ধার করে। বাকিবুরকে গ্রেফতার করার পরেই এই রেশন বন্টন কাণ্ডে নাম উঠে আসে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। পুজো শেষ হতেই, ইডি গ্রেফতার করেছে জ্যোতিপ্রিয়কেও।
সাড়ে ৫৩ ঘণ্টা তল্লাশির পর খাদ্য সরবরাহ সংক্রান্ত বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের ১০৯টি স্ট্যাম্প উদ্ধার করা হয় বাকিবুরের বাড়ি থেকে। বাকিবুরের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট-সহ যে নথিগুলি উদ্ধার করে ইডি সেই সব খতিয়ে দেখে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে বাকিবুরের বিভিন্ন সংস্থায় ৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ ঢুকেছে। এই বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে রয়েছে একাধিক হোটেল, রিসর্ট, বার এবং বেশ কয়েকটি রাইস মিল। বাকিবুরের ঘনিষ্ঠ অভিষেক বিশ্বাসের বাড়িতেও তল্লাশি চালায় ইডি। জানা যায়, সম্পর্কে বাকিবুরের শ্যালক অভিষেক, বাড়ি চিনার পার্কে। অভিষেক এবং বাকিবুরের স্ত্রীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার লেনদেন করেছিলেন বাকিবুর। ইডি নদিয়ার বিভিন্ন রেশন দোকান এবং দোকানের মালিকের বাড়িতে হানা দেয়। জানা যায়, বাংলার বাইরে আরও তিনটি রাজ্যে বাকিবুরের বিরুদ্ধে পুলিশে অভিযোগ রয়েছে।
আরও পড়ুন- ২০ ঘণ্টার জেরা-তল্লাশি! জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে ইডির গ্রেফতারি কি সত্যিই ‘ষড়যন্ত্র’?
বছর তিনেক আগে খাদ্যবীজের দুর্নীতির সূত্রে প্রথম বাকিবুরের নাম প্রকাশ্যে আসে। উদ্ধার হওয়া খাদ্যবীজের বস্তায় বাকিবুরের সংস্থার নাম ছিল। বাকিবুরের প্রতিপত্তি ২০১১ সালের পরে রাতারাতি বাড়লেও এর সূচনা হয়ে যায় বাম জমানা থেকেই। রেশনের চাল, গম নিয়ে খোলা বাজারে কারবার তাঁর তখন থেকেই শুরু। তৃণমূলের জমানাতে ১০৯টি জাল সরকারি স্ট্যাম্প ও সিল ব্যবহার করে রেশন বন্টনে ব্যাপক দুর্নীতি শুরু হয়। বাকিবুরের ডায়েরি ও রেজিস্টার খাতা থেকেও দুর্নীতির বহু তথ্য মেলে। যোগ মেলে বৈদেশিক বিনিয়োগেরও।
ইডির দাবি, রেশন বন্টন দুর্নীতির কোটি কোটি টাকা দুবাইয়ে বাইকের ব্যবসায় বিনিয়োগ করছিল বাকিবুর। দুবাইয়ে বিলাসবহুল পানশালা তৈরির চেষ্টাও ছিল তাঁর। এই দুর্নীতির প্রায় ৫১ কোটি টাকা বাকিবুর ভুয়ো শেয়ারেও বিনিয়োগ করে। মোট ৬ টি সংস্থার নামে ওই জালি শেয়ার প্রিমিয়ামের নামে মোট ৫০ কোটি ৫০ লাখ ৭৭ হাজার ৫৫০ টাকা পাচারের প্রমাণ ইডির হাতে এসেছে। তবে বাকিবুরের প্রতি সন্দেহ প্রথম শুরু হয় ২০২০ সালে। নদিয়া থেকে ৭৬২ কিলো কালোবাজারির আটা উদ্ধার হয়। অভিযোগ, ধান ও মূলত রেশনের গম বাকিবুরের চালকলে পাঠাতেন রেশন ডিলাররা। ২০ থেকে ৪০ শতাংশ গম সরিয়ে ফেলে তা সরকারি ছাপ দিয়েই কালোবাজারি করে বিপুল টাকায় বিক্রি করা হতো। বাকিবুরের ডায়েরিতেই রেশনের আটা কেনাবেচার হিসাব রয়েছে।
আরও পড়ুন- পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উত্থান ও পতন
রেশনের শস্য বাইরেও বিক্রি করতেন বাকিবুর। সরকারের জাল স্ট্যাম্প দিয়ে কয়েক কোটি টাকা এভাবেই এদিক ওদিক করে ফেলতেন তিনি। বাকিবুর ইডির হাতে আসতেই প্রথম উঠে আসে প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের নাম। বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের বোলপুরের বিলাসবহুল বাড়ি 'দোতারা'ও নজরে রয়েছে ইডির। দেড় কোটি টাকায় বাড়িটি কিনেছিলেন মন্ত্রী, ২০১৭ সালে। তারপর প্রায় ৮৫ লক্ষ টাকা এই বাড়ির পিছনে খরচ করেন তিনি। সব মিলে এই বাড়ির বর্তমান আনুমানিক বাজার মূল্য ৬ কোটি টাকা। বাকিবুরের সঙ্গে জ্যোতিপ্রিয়র কী যোগাযোগ, কীভাবে এই দুর্নীতিতে জড়িয়ে আছেন 'বালু' এখনও খোলসা করেনি ইডি।