একাই ম্যাজিক ফিগার পার? যেভাবে বিজেপিকে ঠেকাতে সফল হলো কংগ্রেস...

Karnataka Election Results 2023: বিজেপির দক্ষিণ দুর্গ কর্ণাটক গেরুয়া দলের হাতছাড়া হতে চলেছে একথা বলাই যায়।

কর্ণাটকে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন ১১৩ টি আসন। কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফলের প্রবণতা অনুযায়ী কংগ্রেস এগিয়ে রয়েছে ১১৭টি আসনে। অর্থাৎ কোনও জোট ছাড়া, নিজেরাই কর্ণাটকে সরকার গঠন করতে প্রস্তুত কংগ্রেস। অন্যদিকে বিজেপি ৭৫টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। জেডি(এস) ২৭টি আসনে এগিয়ে রয়েছে। ২০১৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে, বিজেপি ১০৪টি আসন জিতেছিল এবং কংগ্রেস পেয়েছিল ৮০টি আসন। কংগ্রেস ২০১৮ সালের নির্বাচনের চেয়ে ৩৭ টি বেশি আসন লাভ করেছে। বিজেপি আগের নির্বাচনে যে আসন পেয়েছিল তার চেয়ে ২৯টি আসন কম পেয়েছে এখনও। রাজ্য জুড়ে ৩৬টি গণনা কেন্দ্রে গণনা শুরু হয়েছে। রাজ্যের শীর্ষ নেতারা, মুখ্যমন্ত্রী বাসভরাজ বোমাই, কংগ্রেসের সিদ্দারামাইয়া এবং ডি কে শিবকুমার এবং জেডি(এস) নেতা এইচডি কুমারস্বামী বিভিন্ন আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন৷

২০১৮ সালের কর্ণাটক নির্বাচনে পরিস্থিতি কেমন ছিল?

২০১৮ সালের নির্বাচনে, কংগ্রেস পেয়েছিল ৩৮.০৪ শতাংশ ভোট। বিজেপি পেয়েছিল ৩৬.২২ শতাংশ এবং জেডি(এস) ১৮.৩৬ শতাংশ। তখন কোনও দল স্পষ্ট সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়াতে এবং কংগ্রেস এবং জেডি(এস) জোট গঠনের চেষ্টা করছিল। কিন্তু আখেরে বিজেপির বিএস ইয়েদুরাপ্পা সরকার গঠন করেন। সরকারের মেয়াদ ছিল স্বল্প। আস্থা ভোটের আগে তিন দিনের মধ্যে প্রয়োজনীয় সংখ্যা না পাওয়ায়ে ইয়েদিউরাপ্পার সরকার পড়ে যায়।

আরও পড়ুন- পিছিয়ে বিজেপি! কর্ণাটকে কংগ্রেসের জয় কতটা নিশ্চিত?

পরবর্তীকালে, কংগ্রেস-জেডি(এস) জোট কুমারস্বামীকে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সামনে রেখে সরকার গঠন করে, কিন্তু ১৭ জন জোট বিধায়কের পদত্যাগের ফলে ১৪ মাসের মধ্যে সরকার নড়বড়ে হয়ে যায়। জোট ছেড়ে বিধায়করা বিজেপিতে যায়। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে, ক্ষমতাসীন দল ১৫টি আসনের মধ্যে ১২টি আসন জিতে নেয়, স্থিতিশীল হয় সরকার।

বিদায়ী বিধানসভায়, ক্ষমতাসীন বিজেপির ১১৬ জন বিধায়ক রয়েছেন, তারপরেই কংগ্রেসের ৬৯, জেডি(এস)-এর ২৯, বিএসপির ১ জন, নির্দল ২, স্পিকার একজন এবং শূন্য আসন ছয়টি (মৃত্যু এবং নির্বাচনের আগে অন্যান্য দলে যোগ দেওয়ার কারণে পদত্যাগের ফলে)।

কংগ্রেস অর্ধেক আসনের লক্ষ্য ইতিমধ্যেই পেরিয়ে গিয়েছে। বিজেপির দক্ষিণ দুর্গ কর্ণাটক গেরুয়া দলের হাতছাড়া হতে চলেছে একথা বলাই যায়। কংগ্রেস ইতিমধ্যেই দলের সমস্ত বিধায়ককে বেঙ্গালুরুতে পৌঁছতে নির্দেশ দিয়েছে। কংগ্রেসের সিদ্দারামাইয়া বলছেন, দল ১২০ টির বেশি আসন পাবে এই বিষয়ে তিনি নিশ্চিত। তবে পূর্ব অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, সাবধানতা অবলম্বন করে কংগ্রেস নিজের বিধায়কদের একসঙ্গে রাখতে বেশ কয়েকটি রিসর্ট বুক করেছে বলে শোনা যাচ্ছে।

কর্ণাটকে কেন হার বিজেপির?

কংগ্রেস নেতা শচিন পাইলট জানিয়েছেন, কংগ্রেসের "৪০% সরকার" স্লোগানটি মানুষ গ্রহণ করেছে। তাই কর্ণাটক বিধানসভা নির্বাচনে দুর্নীতিবাজ বিজেপি সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে মানুষ। শুধুই কি দুর্নীতর কারণে প্রত্যাখ্যান বিজেপিকে, শুধুই কি বিজেপির উগ্রতাকে অপছন্দ করে কংগ্রেসকে বেছে নেওয়া? একথা সত্য যে কর্ণাটকের জনসংখ্যার অধিকাংশই বিজেপির পক্ষে নেই। ২০১১ সালের আদমশুমারি বলছে এই রাজ্যের জনসংখ্যা ৬.১৫ কোটি, যার মধ্যে প্রায় ৮৩% হিন্দু। সুতরাং মনে করাই যায় গুজরাত এবং কর্ণাটকে ফারাক নেই। বিজেপির জয় স্বাভাবিক। কর্ণাটকের জনসংখ্যার ১৭% তপশিলি জাতি এবং ৭% তপশিলি উপজাতি। আরএসএসের ব্রাহ্মণ্যবাদ এবং ভাষার বাধা কর্ণাটকের এই তপশিলি জাতি ও উপজাতিদের উচ্চবর্ণের হিন্দুদের থেকে আরও বিচ্ছিন্ন করে তুলেছে। তাই সব হিন্দুই বিজেপিকে পছন্দ করে এমন ভাবা যায় না। মনে রাখতে হবে, বিজেপি শাসিত রাজ্যে সাম্প্রতিককালে দলিত-উচ্চবর্ণের সংঘর্ষ এবং রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার মতো ঘটনা মানুষ ভুলে যায়নি। এখানে জনসংখ্যার ১৫% সংখ্যালঘু সম্প্রদায়, যারা বিজেপিকে পছন্দ করে না। অন্যন্য পিছিয়ে পড়া জনজাতির মধ্যেও বিজেপির বিরোধিতা প্রবল।

অন্য আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, বিজেপি উত্তর ভারতীয় হিন্দি বলয়ের দল। বিজেপিকে দক্ষিণের রাজ্যগুলি এখনও বহিরাগতই মনে করে। গো-মাংস নিয়ে বিতর্ক হোক বা হিন্দি ভাষার প্রাধান্য, মোদি সরকারকে আরএসএসের বাধ্য শিষ্য হিসাবেই দেখা হয়। বেঙ্গালুরু এবং রাজ্যের অন্য নানা জায়গাতেই উত্তর ভারতীয়রা হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নীতিপুলিশিও এই রাজ্যের মানুষের একটা বড় অংশেরই না-পসন্দ।

কর্ণাটকে ইয়েদুরাপ্পা বনাম সিদ্দারামাইয়ার লড়াই সুপ্রাচীন। ইয়েদুরাপ্পার ক্ষেত্রে তাঁর নামের সঙ্গে জুড়ে যাওয়া দুর্নীতির কলঙ্ক মোছা আর সম্ভব নয়। বিজেপি যদিও দাবি করছে, আদালতে ইয়েদুরাপ্পার সব কলঙ্কই সাফ হয়ে গিয়েছে তবে ভারতের বাস্তব বলে, রাজনীতি শুধুই কৌশলের লড়াই নয়। লড়াই অনেক বেশি ভাবমূর্তির। প্রশাসক হিসেবেও, ইয়েদুরাপ্পার চেয়ে ঢের এগিয়ে সিদ্দারামাইয়া।

আর রইল বাকি জেডি(এস)। ২০১৩ সালে, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী এইচডি দেবগৌড়ার জনতা দল (ধর্মনিরপেক্ষ) ২১% ভোট পেয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিল। কিন্তু সংখ্যালঘু এবং অন্যান্য বর্ণের ভোট ধরে রাখতে না পেরে জেডি(এস)-এর অবস্থা তথৈবচ। সুতরাং বিজেপির হাত থেকে কর্ণাটকের আসন চলে যাবে এমনটা হয়তো স্রেফ সময়ের অপেক্ষাই ছিল। রাহুলের কংগ্রেস ছাড়া বিকল্প পাননি মানুষ।

More Articles