কাঠুয়ায় সেনার উপর হামলা, ৫০০০ রাউন্ড গুলি! কাশ্মীর নয়, কেন জঙ্গিদের নিশানায় জম্মু?

Kathua Ambush: কাশ্মীর টাইগার্স, পাকিস্তানের নিষিদ্ধ জইশ-ই-মহম্মদের ছায়া সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে।

২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে কাশ্মীরের পুলওয়ামাতে হামলা চালিয়েছিল জঙ্গিরা। সেই হামলায় প্রাণ যায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ানের। পাঁচ বছর পর সেই স্মৃতিই উস্কে দিয়েছে কাঠুয়া। সম্প্রতি কাঠুয়া জেলায় জঙ্গি হামলায় শহিদ হয়েছেন ৫ ভারতীয় জওয়ান, আহত আরও ৫। কাঠুয়া জেলার মাছেদি এলাকায় ভারতীয় সেনার কনভয়ে হামলা চালানো হয়েছিল। জানা গেছে, এই হামলা চালানোর আগে স্থানীয় গ্রামের বেশ কয়েকটি বাড়িতে ঢুকে ভয় দেখায় জঙ্গিরা। বাড়ির সদস্যের মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে তাদের দিয়ে রান্না করিয়ে, সেখানেই বসে খাওয়াদাওয়া সেরে সেনা কনভয়ে হামলা চালায় তারা।

মাছেদি-কিন্ডলি-মালহার পাহাড়ি রাস্তায় সেনার দু'টি কনভয়ে গুলি চালায় সন্ত্রাসীরা। অবিরাম চলে দ্বিপাক্ষিক গুলিবর্ষণ। সন্ত্রাসবাদীরা নাকি সংখ্যায় ছিল মাত্র তিনজন। দু'টি ভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে যানবাহন এবং সেনাদের লক্ষ্য করছিল তারা। গত এক মাসের মধ্যে জম্মুতে এটি পঞ্চম হামলা। কাশ্মীর উপত্যকার তুলনায় তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণ অঞ্চল কাঠুয়া। এই হামলা প্রমাণ করে দিচ্ছে কাশ্মীর শুধু নয়, জম্মু জুড়েও হিংসা বাড়ছে।

আরও পড়ুন- কাশ্মীরের শান্তি নষ্টের মূল কারিগর, কাশ্মীর টাইগার আসলে কারা?

২২ গাড়ওয়াল রেজিমেন্টের জওয়ানরা আহত সহকর্মীদের রক্ষা করতে ৫,১০০ রাউন্ডেরও বেশি গুলি চালায়। পাঁচ সেনা কর্মী নিহত হন, পাঁচজন আহত হন। কাঠুয়াতে এই ভয়াবহ সন্ত্রাসবাদী হামলার দুই দিন পরে অতর্কিত হামলার তদন্ত করতে গিয়ে অদ্ভুত সব তথ্য পাচ্ছেন সেনা আধিকারিকরা। দুই ঘণ্টারও বেশি গুলিযুদ্ধের আগে ঠিক কী ঘটেছিল?

জঙ্গিদের শরীরে বিশেষ ক্যামেরা লাগানো ছিল। তাতে হামলার সব ভিডিও রেকর্ড করা হচ্ছিল। পাঁচ হাজার রাউন্ডের গুলিযুদ্ধের শেষে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছিল জঙ্গিরা। ইতিমধ্যেই এই হামলার ঘটনায় ২০ জন সন্দেহভাজনকে আটক করা হয়েছে। সেনার অনুমান, জঙ্গিদের হামলা করতে সাহায্য করেছে তারা। এখনও অবধি ৬০ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এদের মধ্যে সন্ত্রাসবাদীদের খাবার ও আশ্রয় দেওয়ার সন্দেহে ধৃত তিনজনও আছেন। এদের মধ্যে একজন মহিলা খাবার রান্না করে একজনের মারফৎ পাঠাতেন। প্রায় ১০ থেকে ১৫ জনের জন্য রান্না করা হয়েছিল।

সেনা জানাচ্ছে, কনভয়ে হামলা হওয়ার আগে ঠিক সামনে একটি ট্রাক চলে এসেছিল। ফলে কনভয়ের গতি কমাতে হয়। তারপরই হামলা চালায় জঙ্গিরা। জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের অনুমান, ট্রাক চালক হয়তো ইচ্ছে করেই কনভয়ের সামনে চলে এসেছিলেন। তার সঙ্গে জঙ্গিদের যোগ রয়েছে কিনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

এই হামলায় নিহতরা হলেন নায়েব সুবেদার আনন্দ সিং, হাবিলদার কমল সিং, নায়েক বিনোদ সিং, রাইফেলম্যান অনুজ নেগি এবং রাইফেলম্যান আদর্শ নেগি, সবাই উত্তরাখণ্ডের বাসিন্দা। সেনাদের নেতৃত্বে ছিলেন জুনিয়র কমিশনড অফিসার নায়েব সুবেদার আনন্দ সিং। আহতদের মধ্যে রয়েছেন রাইফেলম্যান কার্তিক সিং। সন্ত্রাসবাদীদের ছোড়া গ্রেনেডে তার ডান হাত ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিন্তু বাঁ হাত দিয়েই বন্দুক চালিয়ে যান তিনি।

আরও পড়ুন- কাশ্মীরে সন্ত্রাস মোকাবিলায় দক্ষ! আগামী ভারতীয় সেনাপ্রধান উপেন্দ্র দ্বিবেদী আসলে কে?

কাশ্মীর টাইগার্স, পাকিস্তানের নিষিদ্ধ জইশ-ই-মহম্মদের ছায়া সংগঠন এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। জঙ্গিদের হাতে ছিল আমেরিকায় তৈরি হওয়া এম৪ কার্বাইন রাইফেল। ২০২৩ সালে জম্মুতে ৪৩টি সন্ত্রাসবাদী হামলা ঘটেছিল। এই বছর এখনও অবধিই অন্তত ২০ টি এই ধরনের ঘটনার খবর মিলেছে। জম্মু অঞ্চলে গত কয়েক মাসে নিরাপত্তা বাহিনী এবং সাধারণ নিরস্ত্র নাগরিকদের উপর হামলার বৃদ্ধি ঘটেছে। কিন্তু কেন?

কাশ্মীর উপত্যকা অশান্ত থাকলেও জম্মু গত ২০ বছরে, ২০২১ সাল পর্যন্ত তুলনামূলকভাবে শান্তিপূর্ণই ছিল। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলি আন্তর্জাতিক সীমান্ত এবং নিয়ন্ত্রণ রেখা জুড়ে সশস্ত্র জঙ্গি পাঠাতে জম্মুর বিস্তীর্ণ এবং জটিল ভূখণ্ডের সুবিধা নিচ্ছে। সন্ত্রাসবাদীরা আম জনতার ছদ্মবেশে এবং স্থানীয় গাইডদের সাহায্যে গোপন আস্তানা থেকে অস্ত্র সংগ্রহ করছে। নতুন কিছু সন্ত্রাসবাদী গোষ্ঠীরও উত্থান ঘটেছে। এই বছরের শেষের দিকেই কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। তার আগে ক্রমবর্ধমান সন্ত্রাসবাদী হামলা যথেষ্ট পরিকল্পিতই। ৩৭০ ধারা বাতিলের পর থেকে জঙ্গিগোষ্ঠীগুলি তাদের হামলার কৌশলগত পরিবর্তন করেছে। কাশ্মীর উপত্যকায় নিরাপত্তা বাহিনীর দাপট বেশি হওয়াতে, সেখান থেকে লক্ষ্য সরে গিয়ে জম্মুই এখন নিশানায়।

More Articles