এক ধাক্কায় বাতিল গোটা মন্ত্রিসভা! কেন এমন চরম সিদ্ধান্ত কেনিয়ার প্রেসিডেন্টের?

Kenya: দেশ জুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিতেই গোটা মন্ত্রিসভাকেই বরখাস্ত করলেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো।

এক ধাক্কায় বাতিল প্রায় গোটা মন্ত্রিসভা। দেশ জুড়ে সরকারবিরোধী বিক্ষোভ মাথাচাড়া দিতেই গোটা মন্ত্রিসভাকেই বরখাস্ত করলেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটো। রক্ষা পেয়েছেন শুধু সেখানকার বিদেশমন্ত্রী। বেঁচে গিয়েছে ডেপুটি প্রেসিডেন্ট রিগাথি গাচাগুয়া এবং প্রাইম কেবিনেট সেক্রেটারি মুসালিয়া মুদাভাদিও। বাদবাকি সমস্ত মন্ত্রীর কাছ থেকেই কেড়ে নেওয়া হয়েছে পদ। তাদের রেহাই দেওয়া হয়েছে সরকারি কর্তব্য থেকে।

সম্প্রতি আইন এনে কর বাড়ানোর কথা ঘোষণা করেছিল কেনিয়া সরকার। আচমকা করবৃদ্ধির সিদ্ধান্তে ক্ষেপে ওঠে মানুষ। জায়গায় জায়গায় বাড়তে থাকে বিক্ষোভ আন্দোলন। গত মাসে বিক্ষোভ চলাকালীন আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষে অন্তত ৩৯ জনের মৃত্যুর খবর মেলে। সম্প্রতি পার্লামেন্টে এই ইস্যুতে হামলা চালায় কয়েক জন বিক্ষোভকারী। পার্লামেন্টের ভিতরে চালানো হয় ভাঙচুরও।

আরও পড়ুন: থাইল্যান্ড থেকে কেনিয়া! ভিসা ছাড়াই ভ্রমণের সুযোগ দিচ্ছে যে সব দেশ

সেই ঘটনার এক দিন পরেই অর্থাৎ গত ২৬ জুন করবৃদ্ধির সিদ্ধান্তটি প্রত্যাহার করে নেন প্রেসিডেন্ট রুটো। বাতিল করা হয় বিলটিই। তবে সেটুকুতেই শান্ত হন আফ্রিকা মহাদেশের অন্তর্গত এই দেশটির প্রেসিডেন্ট। এরই মধ্যে প্রেসিডেন্ট রুটোর তরফে আসে বড় ঘোষণা। গত বৃহস্পতিবার দেশের গোটা মন্ত্রিসভাকেই বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়ে বসলেন তিনি। এর আগে আর কোনও দেশের প্রেসিডেন্ট এত বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছেন কি কখনও। মনে হয় না।

প্রেসিডেন্ট রুটো জানান, "আমার কাছে কেনিয়ার সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। তাঁরা বিশ্বাস করেন, এ দেশের প্রশাসন আমাদের জাতির ইতিবাসে বড় পরিবর্তন আনতে পারবেন।" সেই বিশ্বাসে চিড় ধরুক, এমনটা চাননি রুটো। সে কারণেই এত বড় পদক্ষেপ। তিনি জানিয়েছেন, সামগ্রিক মূল্যায়ন ও পর্যালোচনার পরেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার নাইরোবিতে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে এই সিদ্ধান্তের কথা জানান কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট।

করবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত নিয়ে যে নিজের মন্ত্রিসভার সদস্যদের দুর্নীতি ও নিষ্ক্রিয়তার দিকেই আঙুল তুলেছেন প্রেসিডেন্ট রুটো, তা বুঝতে অসুবিধা হয় না। করবৃদ্ধির বিরুদ্ধে আন্দোলন চলাকালীন কেনিয়ার সাধারণ মানুষ অর্থাৎ ভোটদাতারাই দাবি করেছিলেন, মন্ত্রিসভার সংস্কারের। প্রেসিডেন্ট রুটো জানান, কেনিয়ার জনগণ যা বলতে চান, তা গভীর মনোযোগ সহকারে শুনে বোঝার চেষ্টা করেছেন তিনি। নিজের দেশের মন্ত্রিসভার সার্বিক কাজকর্ম, তার চ্যালেঞ্জ এবং অর্জনের দিকগুলো খতিয়ে দেখে তবেই ওই সিদ্ধান্ত নেন তিনি। তার পরেই দেশের সমস্ত সচিব ও অ্যাটর্নি জেনারেলকে ডেকে কেনিয়া প্রজাতন্ত্রের গোটা মন্ত্রিসভা বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুন: বিজেপিতে গেলেই ফাঁড়ামুক্তি! দেশের ২৩ দুর্নীতিগ্রস্ত নেতাকে যেভাবে বাঁচিয়েছে মোদি সরকার

তবে সেই সিদ্ধান্ত থেকে বাদ পড়েছেন মন্ত্রিসভার প্রধান সচিব, সে দেশের বিদেশমন্ত্রী ও ডেপুটি প্রেসিডেন্ট। দেশের মন্ত্রিসভা তো বাতিল হল? এবার কীভাবে চলবে দেশ? সে ব্যাপারে কী ভেবেছেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট? রুটোর দাবি, তিনি এ ব্যাপারে বিভিন্ন সেক্টরে আলোচনা করবেন। প্রয়োজনে বিভিন্ন দলকে নিয়ে সরকার তৈরি করবেন, যা তাঁকে দেশকে চালাতে সাহায্য করবে। তিনি সাফ জানান, কোনও ভাবেই অযোগ্য সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে পারেন না। কিংবা এমন কোনও সরকারকেও দায়িত্বে বহাল রাখা যায় না, যারা দেশের তরুণদের হত্যা করে ক্ষমতায় টিকে থাকে। কার্যত পৃথিবীর ইতিহাসে এ যেন এক নজিরবিহীন ঘটনা, যেখানে দুর্নীতির জন্য নিজের দলের মন্ত্রিবর্গকেই বহিষ্কার করলেন কোনও দেশের প্রেসিডেন্ট।

More Articles