বিপুল ধনসম্পদ পাহারা দিচ্ছে বিষধর সাপ! যে কারণে আজও রহস্যময় এই মন্দির

Padmanabhaswamy Temple: বহু বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রলয় বা সাপের ঘটনার বর্ণনা করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের মনে ভীতি তৈরি করার জন্য।

তালা চাবি তো দূর, কড়া বা ছিটকিনিও নেই, এমনকী, নাটবল্টুর দেখাও মেলে না। এ এক রহস্যময় দরজা। দরজার গায়ে খোদাই করা রয়েছে দু'টি বিষাক্ত গোখরো সাপের হাঁ-মুখ বিশাল মূর্তি। মনে করা হয়, তালাচাবিহীন এই রহস্যময় দরজার পিছনেই রয়েছে এক গোপন প্রকোষ্ঠ, আর তাতেই নাকি রাখা আছে তিন ভুবনের অতুল ঐশ্বর্য। এক কথায় কুবেরের ধন। হাজার বছরের উপর খোলা হয়নি সেই রহস্যময় দরজা। খোলার নিয়মটুকুও জানে না কেউ। এমনকী, সেই অসাধ্যসাধন করতে গিয়ে প্রাণও খুইয়েছেন কেউ কেউ। আশ্চর্য সেই দরজার কাহিনি ছড়িয়ে পড়েছে দেশে-বিদেশে। কী আছে সেই দরজার পিছনে? সাত রাজার ধন? না, ভয়ংকর কালান্তক কোনও মৃত্যুদূত? যুগ যুগ ধরে এমনই এক রহস্যকে আগলে বসে আছে কেরলের বিখ্যাত পদ্মনাভস্বামী মন্দির।

সৃষ্টিকর্তা পরম করুণার আধার। আবার তিনিই এই জগতের শাসনকর্তা। ভালো কাজ করলে তিনি পুরস্কৃত করেন আবার খারাপ কাজ করলে তিনিই শাস্তি দেন। তবে এর বাইরেও সৃষ্টিকর্তার আদেশ অমান্য করে মানুষ পড়তে পারে তাঁর কোপে। এমনটাই ঘটেছিল ২০১১ সালের ৩০ জুন। বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ও সম্পদশালী মন্দিরগুলোর মধ্যে অন্যতম হল কেরলের অনন্ত পদ্মনাভস্বামী মন্দির। প্রায় সকল পুরাণ যেমন– ব্রহ্মপুরাণ, মৎস্যপুরাণ, স্কন্দপুরাণ, বরাহপুরাণ, পদ্মপুরাণ, বায়ুপুরাণ, ভাগবতপুরাণ এমনকী, মহাভারতেও এই মন্দিরের উল্লেখ পাওয়া যায়। বিষ্ণুর আরেক নাম পদ্মনাভস্বামী। তাঁর নাভিপদ্মে অবস্থান করেন ব্রহ্মা, তাই তাঁকে পদ্মনাভস্বামী বলা হয়। যে মন্দিরের কথা বলা হচ্ছে, সেই মন্দিরের কুলদেবতা নাকি স্বয়ং বিষ্ণু।

ইতিহাস

কেরলের রাজধানী তিরুবনন্তপুরমের ইস্ট ফোর্টের ভেতরে বিষ্ণুর প্রতি উৎসর্গীকৃত শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরটি অবস্থিত। কেরল এবং দ্রাবিড়ীয় স্থাপত্যশিল্পের সংমিশ্রণে মন্দিরটি তৈরি। শুধুমাত্র বিশ্বাসই নয়, কথিত আছে এটি বিশ্বের সবথেকে ধনী মন্দির। শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরটির ইতিহাস খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর। ভারতের দিব্য দেশম-এর বিষ্ণুর ১০৮টি পবিত্র মন্দিরের মধ্যে এটি অন্যতম। দিব্য দেশম হল তামিল আরভারস (সাধু) রচিত গ্রন্থে ভগবান বিষ্ণুর পবিত্রতম স্থান। এই মন্দিরের মূল দেবতা হলেন, ফণা তুলে থাকা অনন্তনাগের ওপরে আধশোয়া অবস্থায় বিষ্ণু। এই মন্দিরকে কখনও কখনও গোল্ডেন টেম্পল বা 'স্বর্ণ মন্দির' নামেও ডাকা হয়। বস্তুত সেই প্রাচীনকাল থেকেই এই মন্দিরের কোষাগার ভরে আছে অতুল ঐশ্বর্যে। অকল্পনীয় ধনী এই মন্দির।

আরও পড়ুন: সুড়ঙ্গ দিয়ে পৌঁছে যাওয়া যায় মাটির তলার শহরে, যে রহস্য লুকিয়ে কৈলাস মন্দিরে

আঠারো এবং উনিশ শতকে কেরলের মধ্য ও দক্ষিণ অংশ নিয়ে গঠিত ট্রাভাঙ্কোর রাজ্যের শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরটি ষোলো শতকে স্থাপিত হয়েছিল বলে অনেক ইতিহাসবিদ মনে করলেও প্রামাণ্য সাক্ষ্য তা বলছে না। প্রাচীন তামিল সাহিত্য ‘সঙ্গম সাহিত্য’ থেকে এই মন্দিরের কথা জানা যায়। খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সাল থেকে খ্রিস্টের জন্মের ৩০০ বছরের মধ্যে এই সাহিত্য রচিত হয়েছিল। ত্রিবাঙ্কুরের প্রসিদ্ধ রাজাদের মধ্যে অন্যতম মার্তণ্ড বর্মা এই মন্দিরটির প্রমুখ সংস্করণ করেন এবং বর্তমান শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরটির কাঠামো তিনিই তৈরি করেন। মার্তণ্ড বর্মা এই মন্দিরে মুরাজাপম এবং ভদ্রা দীপম উৎসবের প্রচলন করেন। 'মুরাজাপম' কথাটির আক্ষরিক অর্থ হল নিরবিচ্ছিন্ন স্তোত্র পাঠ, এটি এখনও প্রতি ছ’বছর অন্তর পালন করা হয়।

১৭৫০ খ্রিস্টাব্দে মার্তণ্ড বর্মা ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যটিকে ভগবান পদ্মনাভর উদ্দেশে উৎসর্গ করেন। মার্তণ্ড বর্মা শপথ নেন যে, রাজপরিবার ভগবানের তরফে রাজ্যপাট পরিচালনা করবে এবং তিনি ও তাঁর উত্তরাধিকারীরা রাজ্যের সেবা করবে পদ্মনাভ দাস নামে অর্থাৎ ভগবান পদ্মনাভর দাস হিসেবে। তখন থেকে ত্রিবাঙ্কুরের সব রাজার নামের আগে পদ্মনাভদাস কথাটি ব্যবহৃত হয়ে আসছে। পদ্মনাভস্বামীকে ত্রিপদিদানমও বলা হয়। বিশ্বাস করা হয়ে থাকে যে, শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরটি যেখানে অবস্থিত, সেটি সপ্ত পরশুরাম ক্ষেত্রের মধ্যে অন্যতম একটি। মন্দিরটি পবিত্র পুকুর ‘পদ্ম তীর্থম’, যার অর্থ হল ‘পদ্ম ঝরনা’-র পাশে অবস্থিত। বর্তমানে মন্দিরটি ত্রিবাঙ্কুরের রাজপরিবারের নেতৃত্বে একটি অছি পরিষদ দ্বারা পরিচালিত হয়।

নান্দনিকতা এবং স্থাপত্য

মন্দিরের স্থাপত্য পাথর এবং ব্রোঞ্জের কর্মের ওপরে প্রতিষ্ঠিত। মন্দিরের ভেতরের অংশে স্থান নিয়েছে সুন্দর চিত্রকর্ম এবং ম্যুরাল। যার মধ্যে কিয়দংশ হল অর্ধশায়িত অবস্থায় বিষ্ণুর পূর্ণদৈর্ঘ্যের মূর্তি, নরসিংহ স্বামী (অর্ধেক সিংহ, অর্ধেক মানুষ-রূপী বিষ্ণু অবতার), গণপতি দেব এবং গজলক্ষ্মী দেবী। মন্দিরের ৮০ ফুট উচ্চতার ধ্বজস্তম্ভটি (পতাকা দণ্ড) সোনার জল করা রূপোর পাত দিয়ে মোড়া। এই মন্দিরের আরও কয়েকটি গঠন বৈশিষ্ট‍্য রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে- বালি পীডা মণ্ডপম এবং মুখ মণ্ডপম। এগুলো হল বিভিন্ন সুন্দর স্থাপত্য এবং বিভিন্ন হিন্দু দেবদেবীর মূর্তি দিয়ে কারুকার্য করা হল-ঘর। আরেকটি আকর্ষক স্থাপত্য হল নবগ্রহ মণ্ডপ। যার ভেতরের ছাদে নবগ্রহের (নয়টি গ্রহ) ছবি প্রদর্শিত আছে। পূর্বদিক থেকে পবিত্রবেদি অবধি একটি বিস্তৃত চওড়া বারান্দা প্রসারিত, যার মধ্যে ৩৬৫ এবং এক-চতুর্থাংশ সুন্দর পাথর-খোদাই করা স্থাপত্য-সহ গ্রানাইট পাথরের থাম রয়েছে। পূর্ব দিকের মূল প্রবেশদ্বারের নিচে একটি গ্রাউন্ড ফ্লোর রয়েছে, যেটি 'নাটকশালা' (প্রাথমিকভাবে 'নাট্যমঞ্চ' বলা হতো) নামে পরিচিত।

দেবমূর্তি

শ্রীপদ্মনাভস্বামী মন্দিরের দেবমূর্তিটি এর গঠনশৈলীর জন্য প্রসিদ্ধ, মন্দিরের ভেতরে ফণা তুলে থাকা অনন্তনাগের ওপরে শায়িত অবস্থায় বিষ্ণুর ১৮ ফুটের এক বিরাট মূর্তি রয়েছে। মূর্তির নাভিতে আছে পদ্মচিহ্ন। এই পদ্মের ওপরেই আসীন থাকেন প্রজাপতি ব্রহ্মা। দক্ষিণে মাথা করে পূর্বমুখী সেই মূর্তি দেখলে মনে হবে যেন নাগরাজ অনন্তের হাজার ফণার ছাতার নিচে যোগনিদ্রায় ঘুমিয়ে আছেন। পাশে বিষ্ণুর দুই স্ত্রী ধনদেবী লক্ষ্মী আর ভূদেবী ধরিত্রীর মূর্তিও রয়েছে। বিষ্ণুর মূল মূর্তিটি ধাতু বা কষ্টিপাথরে তৈরি নয়। কথিত আছে, ১০০৮টি শালগ্রামশিলা সাজিয়ে তার ওপর বিশেষ উপায়ে এক আয়ুর্বেদিক আঠালো মিশ্রণ ঢেলে তৈরি করা হয়েছিল সুবিশাল এই মূর্তি। ভারতে বিষ্ণুর যে ১০৮টি পবিত্র মন্দির রয়েছে, তার মধ্যে তিরুবনন্তপুরমের এই মন্দিরটি অন্যতম প্রধান। মূর্তিটিকে তিনটি ভিন্ন দরজা দিয়ে দর্শন করা যেতে পারে। মস্তক এবং বক্ষ প্রথম দরজা দিয়ে, হস্তগুলো দ্বিতীয় দরজা দিয়ে এবং পদযুগল তৃতীয় দরজা দিয়ে দর্শন করা যায়।

মন্দিরের রহস্য

বলা হয়, দ্রাবিড়ীয় এবং চেরা ঘরানায় নির্মিত এই মন্দিরে যা রাজঐশ্বর্য আছে, পৃথিবীতে ইতিহাস লেখা শুরু হওয়ার পরে সেই পরিমাণ সম্পদ আর কোথাও সঞ্চিত হয়নি। জনশ্রুতি বা কিংবদন্তি যে আদৌ মিথ্যা নয়, তার প্রমাণ কিছুটা হলেও পাওয়া গিয়েছিল ২০১১ সালে। একটি জনস্বার্থ মামলা চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে খোলা হয়েছিল মন্দিরের সম্পদের ভাণ্ডার। দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন শাসক, বণিক এবং সাধারণ ভক্ত এখানে দেবতাকে অর্ঘ্য দিয়েছেন। এমনকী, প্রাচীনকাল থেকে যে বিদেশিরা এসেছেন, তাঁরাও অর্পণ করেছেন বন্দরনগরীর এই দেবালয়ে। সঞ্চিত সম্পদভান্ডার হার মানিয়েছে রূপকথা এবং কল্পনার পরিধিকে। দীর্ঘ কয়েক যুগ ধরে মন্দির কর্তৃপক্ষ জানতেন, মন্দিরে ছ’টি গুপ্ত প্রকোষ্ঠ আছে। মন্দিরের পশ্চিম অংশে গর্ভগৃহের কাছে রয়েছে এই প্রকোষ্ঠগুলি। সুবিধের জন্য পরবর্তীকালে এদের নাম দেওয়া হয়েছে ‘এ’, ‘বি’, ‘সি’, ‘ডি’, ‘ই’ এবং ‘এফ’। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে গুপ্তধন গণনার নির্দেশ দেওয়া হলে জানা যায়, রয়েছে আরও দু’টি প্রকোষ্ঠ। তাদের নাম দেওয়া হয় ‘জি’ এবং ‘এইচ’।

প্রকোষ্ঠ বলা হলেও এগুলি আদপে ঘর। যেগুলির মেঝে থেকে ছাদ অবধি পূর্ণ ঐশ্বর্যে। সি’, ‘ডি’, ‘ই’ এবং ‘এফ’, এই চারটি প্রকোষ্ঠ বছরের নির্দিষ্ট সময়ে খোলা হয়। সেখান থেকে ধনসম্পদ এবং প্রয়োজনীয় জিনিস কাজে লাগানো হয় ধর্মীয় উৎসবে। ২০১১-র ৩০ জুন সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে খোলা হয় এর প্রথম প্রকোষ্ঠ অর্থাৎ ভল্ট ‘এ’। সেখানে ঢোকার জন্যও লোহার এবং কাঠের দু’টি দরজা ভাঙতে হয়। তারপর ঘরে ঢুকে সরাতে হয় পাথরের ভারী ফলক। দেখা যায়, নিচে অন্ধকারে নেমে গিয়েছে গুপ্ত সিঁড়ি। সিঁড়ি দিয়ে নেমে খোঁজ পাওয়া যায় গুপ্তধনের। সংখ্যায় এক লক্ষের বেশি কোটি কোটি টাকার অমূল্য সম্পদ রাখা ছিল এই গুপ্তকক্ষে। বিভিন্ন সূত্র অনুযায়ী সম্পদের বিবরণ প্রকাশিত হয়েছিল সংবাদমাধ্যমে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যে জিনিসগুলো ছিল, তা দীর্ঘদিন সংবাদ শিরোনামে ছিল। তার মধ্যে অন্যতম হল শ্রীবিষ্ণুর চার ফুট উঁচু এবং তিন ফুট চওড়া সোনার মূর্তি। সারা বিগ্রহে খোদাই করা আছে অসংখ্য হিরে ও দামি রত্ন। এই বিগ্রহকে বিশেষ অনুষ্ঠানে পরানোর জন্য আছে সনাতনী পোশাক ‘আঁখি’। সম্পূর্ণ সোনার তৈরি মোট ১৬টি পাল্লার এই পোশাকের ওজন ৩০ কেজি। দেবতার অঙ্গভূষণ হিসেবে রয়েছে ১৮ ফুট লম্বা সোনার হার। আছে সোনার তৈরি ধানের ছড়া, যার ওজন ৫০০ কেজি। সোনার ওড়না আছে, যার ওজন ৭৬ কেজি। মধ্যযুগের সোনার মুদ্রা আছে ৬০০ কেজি ওজনের। আছে মোট ১২০০টি সরপ্পলি। দক্ষিণের এই ঐতিহ্যবাহী সোনার হারে বসানো থাকে দামি পাথর। অস‌ংখ্য বস্তা আছে, যার মধ্যে ছিল মুঠো মুঠো সোনার জিনিস, নেকলেস, কোমরের বিছে। গয়নায় বসানো হয়নি, এরকম হিরে, চুনি, পান্না, পোখরাজ এবং অন্যান্য রত্নপাথর আছে অগণিত। আছে সোনার তৈরি প্রমাণ মাপের সিংহাসনও। পাওয়া গিয়েছে সোনার তৈরি নারকেলের খোল। যার গায়ে বসানো আছে চুনি আর পান্না। গয়না এবং মূল্যবান জিনিসের পাশাপাশি এই মন্দিরে রাখা আছে মুদ্রার বিরল ও অমূল্য ভান্ডার। প্রাচীন রোমান সভ্যতা থেকে শুরু করে অষ্টাদশ শতকের নেপালিয়নের সমসাময়িক মুদ্রা সেখানে উল্লেখযোগ্য। এছাড়া বিভিন্ন দেশের নানা সময়কালের মুদ্রা রাখা আছে মন্দিরের কোষাগারে। খ্রিস্টপূর্ব ২০০ অব্দের সোনার মুদ্রা আছে, যার ওজন প্রায় ৮০০ কেজি।

অন্য ঘরগুলি খোলা হলেও দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠ বা ভল্ট বি-র দরজা খোলা হয়নি গত কয়েকশো বছর ধরে। মনে করা হয়, এর ভেতরে যা সম্পদ আছে, তা গুনতে গেলে যে কোনও একক-ই কম পড়তে পারে। পাশাপাশি, ‘জি’ এবং ‘এইচ’ প্রকোষ্ঠও বন্ধ রয়েছে কয়েকশো বছর ধরে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে অন্য প্রকোষ্ঠের সঙ্গে খোলার চেষ্টা করা হয় ভল্ট বি-কেও। ধাতব গ্রিল, কাঠের দরজা খোলা সম্ভব হয়। তার পরে ছিল একটি লোহার দরজা। সেটা খোলা সম্ভব হয়নি। ঠিক হয়, খবর দেওয়া হবে একজন কর্মকারকে। কিন্তু তার আগেই সুপ্রিম কোর্ট এই ভল্ট খোলার ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দেয়। এই প্রকোষ্ঠের ওই লোহার দরজায় ভীষণদর্শন সাপের মূর্তি খোদাই করা আছে। প্রচলিত বিশ্বাস, ভেতরের সম্পদ পাহারা দিচ্ছে এক যক্ষী। দরজা খুললে অভিশাপ অনিবার্য।

আবার অনেকে মনে করেন, এই ভল্টের পিছনে রয়েছে মারাত্মক বিষধর সাপ। এই ভল্টের দরজা খোলার চেষ্টা করলেই সাপের প্রকোপের মুখে পড়বে মানুষ। তবে মান্যতা রয়েছে যে, এই ভল্ট খোলার জন্য প্রয়োজন বিশেষ শক্তিশালী মন্ত্র বা ‘গরুড়’ মন্ত্র। যে মন্ত্র ভারতের কোনও ব্যক্তির জানা নেই। শুধু তাই নয় এই মন্ত্রের শুদ্ধ এবং সঠিক উচ্চারণের দ্বারাই এই দরজাটি খোলা সম্ভব। মন্ত্রের সামান্য ভুল উচ্চারণে বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে মনে করা হয়। আবার একটি প্রচলিত কথা অনুসারে এই ভল্টের দরজা থেকে জলের শব্দ মাঝে মাঝে শোনা যায়। আবার অনেকের মতে এই দরজা খোলা হলে প্রলয় আসতে পারে। জলের তলায় তলিয়ে যেতে পারে ভারত। এই দরজা জোর করে খোলার চেষ্টা করলে তার ওপর ভগবান বিষ্ণুর প্রকোপ পড়তে পারে।

এই সমস্ত জনপ্রচলিত বক্তব্যের পেছনে কোনও রকম বৈজ্ঞানিক কারণ এখনও খুঁজে পাওয়া যায়নি। বহু বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রলয় বা সাপের ঘটনার বর্ণনা করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র সাধারণ মানুষের মনে ভীতি তৈরি করার জন্য। বহিরাগত শত্রুর আক্রমণের হাত থেকে বাঁচাতেও বহু রাজপরিবার এই মন্দিরের দুর্ভেদ্য কোষাগারে সঞ্চিত রেখেছে তাদের ঐশ্বর্য। পরে হয়তো শত্রুর আক্রমণে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে রাজবংশ। কিন্তু তাদের সম্পদ গচ্ছিত ও নিরাপদ রয়ে গিয়েছে ভগবান পদ্মনাভর আশ্রয়ে। কয়েক হাজার বছর ধরে এভাবেই তিলে তিলে সংরক্ষিত হয়েছে প্রাচীন এই মন্দিরের ঐশ্বর্য।

More Articles