ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো আওরংজেবের 'মুবারক মঞ্জিল'! নেপথ্যে কারা?

Mubarak Manzil Agra: ১০০টিরও বেশি ট্রাক্টর নামিয়ে ঐতিহাসিক মুবারক মঞ্জিলের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলা হয়েছে।

ইতিহাস বদলে ফেলা শুধু সাময়িক ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাময়িক এজেন্ডা কখনই নয়। ইতিহাস মুছে ফেলা আসলে দীর্ঘমেয়াদে ক্ষমতাশীল সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের ভিত্তিস্থাপন। ইতিহাস এক সময়সারণী, যার অংশবিশেষ মুছে ফেলে নিজস্ব সুবিধার্থে নতুন সংযোজন সময়কালকে বিকৃত করা বৈ কিছুই নয় তো! যে সমস্ত ঐতিহাসিক স্থান (তা সে কুখ্যাত কর্মকাণ্ডের স্থানই হোক না কেন) দেখে ফেলে আসা শতকগুলিকে মানুষ মনে রাখে তা রীতিমতো বদলে ফেলা হচ্ছে সাম্প্রতিক দশকে। কোথাও বদল, কোথাও চিরতরে বিলুপ্তি। যেমন, চিরতরে শেষ করে দেওয়া হলো আগ্রার ঐতিহাসিক মুবারক মঞ্জিল। ১৭ শতকের মুঘল ঐতিহ্যবাহী স্থানটিকে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। স্বাভাবিকইভাবেই তা একাংশের নাগরিকের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। শোনা যাচ্ছে একজন নির্মাতা এবং কর্মকর্তাদের মধ্যে যোগসাজশের ফলেই মুবারক মঞ্জিলের এই ভবিতব্য!

মুবারক মঞ্জিল আওরঙ্গজেবের হাভেলি নামেও পরিচিত। শাহজাহান, সুজা এবং আওরঙ্গজেব সহ বিশিষ্ট মুঘল ব্যক্তিত্বদের বাসস্থান হিসেবে এই মঞ্জিল ব্যবহার করা হতো। ব্রিটিশ শাসনামলে কাঠামোটির পরিবর্তন করা হয়। ১৯০২ সাল নাগাদ এই মুবারক মঞ্জিল কাস্টমস হাউস, সল্ট অফিস এবং অবশেষে তারা নিবাসে রূপান্তরিত হয়।

টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাজ্যের প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ এই ঐতিহাসিক স্থানটিকে সুরক্ষার জন্য তালিকাভুক্ত করার তিন মাস পরে তা ধ্বংস করে দেওয়া হলো। ১০০টিরও বেশি ট্রাক্টর নামিয়ে ঐতিহাসিক মুবারক মঞ্জিলের ধ্বংসাবশেষ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ওই প্রতিবেদন অনুসারে, সেপ্টেম্বর মাসে রাজ্য প্রত্নতাত্ত্বিক বিভাগ মুবারক মঞ্জিলের সুরক্ষার প্রস্তাব করে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে। বলা হয়, আপত্তি থাকলে তা এক মাসের মধ্যে জানাতে হবে। কোনও আপত্তি না পেয়ে, লখনউয়ের কর্মকর্তারা সংরক্ষণের প্রচেষ্টা শুরু করতে দুই সপ্তাহ আগেই এই ঐতিহাসিক স্থান পরিদর্শন করেন। তাঁদের পরিদর্শনের পরপরই মুবারক মঞ্জিল গুঁড়িয়ে দেওয়ার কাজ শুরু হয়।

 

স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, আপত্তি থাকা সত্ত্বেও এবং কাছাকাছি একটি পুলিশ ফাঁড়ি থাকা সত্ত্বেও পুলিশ ও প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে যোগসাজশ করেই এক বিল্ডার এই ভাঙচুর চালিয়েছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা উল্লেখ করেছেন, আগে একাধিক অভিযোগ দায়ের করা সত্ত্বেও কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ঐতিহাসিক এই কাঠামর ৭০ শতাংশই গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। একটি বিষয় স্পষ্ট যে, সংবেদনশীল স্থানে থাকা সত্ত্বেও কর্মকর্তাদের সম্মতিতেই তা ধ্বংস করা হয়েছে।

আগ্রার জেলা ম্যাজিস্ট্রেট অরবিন্দ মাল্লাপ্পা বাঙ্গারি জানিয়েছেন, আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (এএসআই) এবং রাজস্ব বিভাগকে নিয়ে একটি তদন্ত চলছে। এসডিএমকে ওই স্থান পরিদর্শন করার এবং রিপোর্ট জমা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ওই স্থানে আর কোনও পরিবর্তনের অনুমতিও নেই৷

আর্কিবল্ড ক্যাম্পবেল কার্লাইলের ১৮৭১ সালের রিপোর্ট এবং ওই স্থানে একটি মার্বেল ফলক সহ ঐতিহাসিক নথিতে, সামুগড়ের যুদ্ধে জয়ের পর আওরঙ্গজেব নির্মিত মুবারক মঞ্জিলের তাৎপর্য তুলে ধরা হয়েছে। মুঘল এবং ব্রিটিশ স্থাপত্যের মিশ্রণে তৈরি হয়েছিল এই মুবারক মঞ্জিল। লাল বেলেপাথরের মেঝে, খিলান এবং মিনারে গড়া মুবারক মঞ্জিল এখন শুধুই ধ্বংসস্তূপ। অনেকেই উদ্বিগ্ন, এই অঞ্চলের অন্যন্য ঐতিহাসিক স্থানগুলি আর বেঁচে থাকবে তো?

More Articles