প্রতি গ্রীষ্মে মাথায় বাড়ে আইফেল টাওয়ার! জানেন কেন ঘটে এমন অদ্ভুত কাণ্ড?

Eiffel Tower: এই জনপ্রিয়তম স্থাপত্যটি নাকি বেশ খানিকটা করে বেড়ে যায় প্রতি গ্রীষ্মকালে। আবার শীতকালে কয়েক সেন্টিমিটার করে কমে যায় আইফেল টাওয়ারটির উচ্চতা। কেমন করে হয় এই ম্যাজিক?

পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে তা পড়ে না বটে। তবে তাতে তার মাহাত্ম্যে ছেদ পড়েনি এতটুকু। পৃথিবীজোড়া মানুষের কাছে আজও এক অমোঘ টান যেন আইফেল টাওয়ার। ১৮৮৭-৮৯ সাল নাগাদ প্যারিস শহরের এই স্থাপত্যটি তৈরি হয়েছিল ফরাসি বিপ্লবের স্মরণে। তার পর কেটে গিয়েছে কয়েকশো বছর। তবে আইফেল টাওয়ারের আবেদন কমেনি একচুলও। আজও প্যারিসের আইফেল টাওয়ার পৃথিবীর পর্যটকের কাছে স্বপ্নের মতো। সেই আইফেল টাওয়ারকে ঘিরে আজও কিংবদন্তির শেষ নেই। কিন্তু জানেন কি, প্রতি গ্রীষ্মে বেড়ে যায় আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা?

হ্যাঁ, অবাক কাণ্ড হলেও এটাই সত্যি। শোনা যায়, একসময় নাকি হিটলার আইফেল টাওয়ারটি ধ্বংসের নির্দেশ দেন। যদিও তেমন কিছু ঘটেনি। এখানেই শেষ নয়। নির্মাণের ২০ বছর পর খুলে ফেলারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল স্থাপত্যটিকে। কিন্তু ততদিনে আইফেল টাওয়ারের জনপ্রিয়তা এতটাই দিকে দিকে ছড়িয়ে পড়েছে যে প্যারিসের পর্যটনের মুখ হয়ে দাঁড়িয়েছে ওই স্থাপত্য।

তবে এই জনপ্রিয়তম স্থাপত্যটি নাকি বেশ খানিকটা করে বেড়ে যায় প্রতি গ্রীষ্মকালে। আবার শীতকালে কয়েক সেন্টিমিটার করে কমে যায় আইফেল টাওয়ারটির উচ্চতা। স্থাপত্যের তো প্রাণ নেই। তবে কেমন করে হয় এই ম্যাজিক? না কি এর পিছনে লুকিয়ে রয়েছে অন্য কোনও রহস্য?

আরও পড়ুন: লাগাতার ৭ দিন মাটির নীচে কফিনবন্দি! তারপর যা হল ইউটিউবারের সঙ্গে…

১৯ শতকে স্থপতিটি তৈরি করেন গুস্তাভা আইফেল নামে এক স্থপতি। তার নামেই স্থপতিটির নাম হয় আইফেল টাওয়ার। শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা প্যারিসের এই দর্শনীয় স্থানটি দেখতে অভাব হয় না পর্যটকের। তবে গ্রীষ্মকালে পর্যটক এসে যে আইফেল টাওয়ারটি দেখেন, শীতেও কি তাকেই দেখেন? না পুরোটা নয়। কারণ শীত আসতেই পাল্টে যায় বিখ্যাত এই আইফেল টাওয়ার। উচ্চতা কমে যায় তার। কিন্তু কেন এমন হয় জানেন?

আসলে এর পিছনে রয়েছে বিজ্ঞানের হাত। আইফেল টাওয়ারটি তৈরি আসলে পুডল লোহা দিয়ে। আসলে পিগ আয়রনকে উত্তাপ দিয়ে তৈরি হয় এই ধরনের লোহা, যা দিয়ে তৈরি হয়েছে আইফেল টাওয়ারটি। বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছেন, এই ধরনের ধাতু নাকি স্বাভাবিক ভাবেই উষ্ণতার পরিবর্তনে আকার বদল করে। তাপমাত্রা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নিজের আকার সম্প্রসারিত করতে শুরু করে এই লৌহদণ্ডগুলি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়। গরম পড়তে না পড়তেই আকারে বাড়তে শুরু করে আইফেল টাওয়ারে ব্যবহৃত ধাতবখণ্ডগুলি। যার ফলে বেড়ে যায় আইফেল টাওয়ারের উচ্চতাও। আবার শীত পড়তে না পড়তেই লোহাগুলি সঙ্কুচিত হতে শুরু করে। ফলে কমতে থাকে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতাও।

একেকবার গরমকালে প্রায় ৬ ইঞ্চি পর্যন্ত উচ্চতা বেড়ে গিয়েছে আইফেল টাওয়ারের। গরম কালে প্যারিসের উষ্ণতা একেকবার ৪০ ডিগ্রি পর্যন্ত ছুঁয়ে ফেলে। সে সময় অবধারিত ভাবেই বেড়ে যায় প্যারিসের এই স্থাপত্যের উচ্চতা। তবে গরম পড়ার সঙ্গে সঙ্গে যেমন ধাতব সম্প্রাসারণ ঘটে, তেমনই শীতকালেও অবধারিত আইফেল টাওয়ারের ছোটো হয়ে যাওয়া।

আরও পড়ুন:জলেস্থলে অবাধ বিচরণ! দেখা মিলল পৃথিবীর ভয়ঙ্করতম পাখির

১৯৮৯ সালে যখন আইফেল টাওয়ারটির উদ্বোধন করা হয়েছিল, তখর এটির উচ্চতা ছিল ১০২৪ ফুট। তবে গত বছর মার্চ মাসে দেখা যায়, সেই স্থাপত্যের উচ্চতা বেড়ে হয়েছে ৩৩০ মিটার। তবে এ বছর গরম পড়তে পড়তে আইফেল টাওয়ারের উচ্চতা যে আরও কয়েক ফুট বেড়ে যাবে না, তা কিন্তু হলফ করে বলা যাচ্ছে না।

More Articles