গণঅভ্যুত্থানের আহত যোদ্ধদের জন্য যে বিশেষ পদক্ষেপ মহম্মদ ইউনূসের
Bangladesh Interim Government: এখনও পর্যন্ত চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ১০৭৪ জন চিকিৎসা করিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জনের দুই চোখের দৃষ্টিই চিরতরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে।
৭১-এর মুক্তিযোদ্ধাদের বিশেষ সম্মান দিত হাসিনার সরকার। অভিযোগ উঠেছে, সেই যুদ্ধে একটি পরিবারকে বিশেষ মর্যাদা দিতে গিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধারা থেকে গিয়েছিলেন আড়ালেই। হাসিনার ১৫ বছরের সরকারের পতন ঘটেছিল গত অগাস্টে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের হাত ধরে। এই অভ্যুত্থানকে দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধ হিসেবে দেখেছেন অনেকেই। হাসিনা সরকার সেই অভ্যুত্থানকারীদের বিদ্রোহ দমনে ব্যাপক নৃশংস নিপীড়ন চালিয়েছে। বাংলাদেশ থেকে ক্ষমতাচ্যুত শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পরে সেই দেশের শাসনভার এখন অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে। সেই সরকার এই জুলাই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের এবার বিশেষ মর্যাদা, বিশেষ সুবিধা দিতে উদ্যোগী। নতুন বছরের গোড়ার দিনেই এই গণঅভ্যুত্থানের যোদ্ধাদের জন্য বিশেষ স্বাস্থ্যকার্ড বিতরণ শুরু হয়েছে সেই দেশে।
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত হয়েছেন দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ, আহত বহু! আহত সেই যোদ্ধাদের সারাদেশে সমস্ত সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসাপরিষেবা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রক এক বিশেষ হেলথকার্ড জারি করেছে। ১ জানুয়ারি সেই কার্ড বিতরণ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন প্রধান উপদেষ্টা মহম্মদ ইউনূস। বুধবার গণঅভ্যুত্থানে আহত দু'জন পড়ুয়ার হাতে এই হেলথ কার্ড তুলে দেন ইউনূস।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশ ২০২৪: আওয়ামী যুগকে পেছনে ফেলে সামনের দিকে তাকাবার সময়
গণঅভ্যুত্থানের এই দুই যোদ্ধা হলেন— নরসিংদী ইউনাইটেড কলেজের পড়ুয়া ইফাত হোসেন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের পড়ুয়া ইসরাত জাহান ইমু। গত বছরের ১৯ জুলাই আন্দোলনের সময় নরসিংদীতে পুলিশের গুলিতে দুই চোখের দৃষ্টিশক্তি হারান ইফাত। তিনি এখনও একটি চোখে দেখতে পান না। ১৫ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ছাত্রীদের উপর নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের হামলায় গুরুতর আহত ইসরাত বর্তমানে বিএসএমএমইউতে চিকিৎসাধীন। এঁদের দু'জনের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা ও অন্যান্য বিষয়ে খোঁজ নেন প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস। স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত যোদ্ধাদের প্রতি সপ্তাহে নির্দিষ্ট জেলায় হেলথ কার্ড বিতরণ করা হবে।
বাংলাদেশের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক খায়ের আহমেদ চৌধুরী জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ১০৭৪ জন চিকিৎসা করিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৩৯ জনের দুই চোখের দৃষ্টিই চিরতরে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রায় ৪৫০ জনের এক চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি আরও জানান, চোখের আঘাতের প্রায় ৬৫০ অপারেশন করা হয়েছে। এর মধ্যে দ্বিতীয় দফায় তিনশোরও বেশি রেটিনা সার্জারি করা হয়। চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ছাড়াও আরও দুই হাসপাতালে ৬০ জন রোগীর অস্ত্রোপচার হয়েছে। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে তৃতীয় দফাতেও অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ছে বলে জানান তিনি। জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত চিন, ফ্রান্স, নেপাল ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে চিকিৎসকরা চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছেন এবং চিকিৎসা প্রক্রিয়া খতিয়ে দেখে পরামর্শও দিয়েছেন।
জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন প্রতিষ্ঠানের (নিটোর) পরিচালক ডাঃ মহম্মদ আবুল কেনান জানিয়েছেন, এখনও পর্যন্ত তাঁদের হাসপাতালে ২১ জন রোগীর হাত অথবা পা কেটে ফেলতে হয়েছে। কয়েকজন রোগীকে বিদেশে পাঠানোর কথাও ভাবা হয়েছে চিকিৎসার জন্য। তবে চিকিৎসাধীন অধিকাংশ রোগীই ধীরে ধীরে সুস্থ হবেন এবং তাঁদের কারওই মৃত্যুর আশঙ্কা নেই বলেও জানান তিনি।
আরও পড়ুন- বাংলাদেশ ইস্যুতে অতি সক্রিয় বিজেপি কি তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্কে থাবা বসাবে?
বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, "এই হেলথ কার্ড থাকার অর্থ হলো এক বছর পরে হোক, দু’বছর পরে হোক যেকোনও সময় দেশের যেকোনও সরকারি হাসপাতালে কার্ডধারীরা চিকিৎসা পাবেন। এই কার্ড সবসময়ই থাকবে।" ইউনূস আরও বলেছেন, "জুলাইয়ে আহত যোদ্ধাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। সেটা আমরা করব। অভ্যুত্থানে শহিদ পরিবার ও আহতদের আর্থিক নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগের কোনও কারণ নেই। তাদের আর্থিক নিরাপত্তা সরকার নিশ্চিত করবে। তবে এর পাশাপাশি জুলাইয়ে আহত যোদ্ধাদের মানসিকভাবে, সামাজিকভাবে পুনর্বাসন করার বিষয়ে আমাদের ভাবতে হবে। এটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। মানুষগুলো যেন আনন্দে তাদের জীবনযাপন করতে পারে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে সে বিষয়ে যথাযথ উদ্যোগ নিতে হবে।’"
নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে নাগরিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপরও জোর দিচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকার। "যার যেটাতে আগ্রহ আছে তারা যেন সে কাজটি আনন্দ নিয়ে করতে পারে, ধাপে ধাপে সেটার পথ তৈরি করে দিতে হবে। চিকিৎসা দিয়ে শারীরিকভাবে সুস্থ করার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের দিকেও মনোযোগ দিতে হবে," বলছেন অভ্যুত্থান-পরবর্তী নতুন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারের প্রধান।