HMPV: গুজব না কি আতঙ্ক? বাস্তবে কতটা বিপজ্জনক এই ভাইরাস?
HMPV Virus: গবেষণায় দেখা গেছে, বিশেষ করে নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের HMPV ভাইরাস সৃষ্ট রোগে ভুগে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি।
নতুন বছরের গোড়াতেই সোশ্যাল মিডিয়া তোলপাড় হয়েছে নতুন একটি ইস্যুতে। সৌজন্যে ভারতীয় মূলধারার মিডিয়া। কোভিডের আতঙ্ক কাটিয়ে জীবন প্রায় স্বাভাবিকই এখন। তবু, ভাইরাসঘটিত রোগবালাই বললেই অন্তত আগামী কয়েক দশক করোনাভাইরাসই প্রকাণ্ডতম উদাহরণ হয়ে থাকবে। জানা গিয়েছিল, ওই ভাইরাসের উৎসস্থল চিনের উহান প্রদেশ। বছর চারেক পর আবারও শিরোনামে ওই একই প্রদেশ, আবারও কারণ ভাইরাসই। সোশ্যাল মিডিয়ায় চোখ পাতলেই দেখা যাচ্ছে, কোনও এক মস্ত ভাইরাস 'ধেয়ে' আসছে (প্রায় ধূমকেতুসমই) আবার। কী লক্ষণ, কী উপসর্গ, কতটা ভয়াবহ, আদৌ বিপজ্জনক কিনা এই নিয়ে অবশ্য সেখানে বিশদ নেই। সংবাদবাধ্যমগুলি জানাচ্ছে HMPV মূলত শিশু আর বয়স্কদের কাবু করে ফেলছে। খবরটা ভুল নয়। কিন্তু তা নয়া মহামারী বা তা ভারতের ক্ষেত্রেও কি বিপজ্জনক?
SARS-CoV-2 ভাইরাসের সূত্রপাত চিনের উহান প্রদেশেই। সেই ঘটনার প্রায় বছর পাঁচেক পরে, শিশু এবং বয়স্কদের মধ্যে হিউম্যান মেটাপনিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) সহ ভাইরাসসৃষ্ট তীব্র শ্বাসযন্ত্রের রোগ এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং রেসপিরেটরি সিনসাইটিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই দেশে, বিশেষ করে এর উত্তরাঞ্চলে। বছরের এই সময়ে শ্বাসযন্ত্রের রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়া অস্বাভাবিক কোনও ঘটনা নয়। চিনের একজন কর্মকর্তার মতে, ২০২৪ সালে এই ধরনের যত ঘটনা ঘটেছে সেই সংখ্যাটা ২০২৩ সালের তুলনায় কমই। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ইউএস সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন এখনও পর্যন্ত এই ভাইরাস নিয়ে কোনও বার্তাই দেয়নি, এটি বিপজ্জনক কিনা তা নিয়ে কোনও শব্দও খরচ করেনি। এমনকী আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলিও প্রায় নীরব। কিন্তু ভারতীয় মূলধারার সংবাদমাধ্যম চিনে এইচএমপিভি-র প্রকোপ নিয়ে একের পর এক খবরে উদ্বেগ বাড়িয়েই চলেছে।
আরও পড়ুন- আমাদের শরীরে লুকিয়ে প্রাচীন ভাইরাসের জিন! নতুন গবেষণায় তোলপাড় বিশ্বজুড়ে
কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রকের তত্ত্বাবধানে যৌথ মনিটরিং গ্রুপের একটি সাম্প্রতিক বৈঠকে উল্লেখ করা হয়েছে, চিনের পরিস্থিতি "চলমান ফ্লু ঋতুর পরিপ্রেক্ষিতে অস্বাভাবিক নয়”। বলা হয়েছে এই মরশুমে প্রত্যাশিত স্বাভাবিক রোগজীবাণুর কারণেই মানুষ অসুস্থ হচ্ছেন, শ্বাসযন্ত্রের রোগের বৃদ্ধি দেখা দিচ্ছে। ২০০১ সালে নেদারল্যান্ডে শিশুদের মধ্যে প্রথম HMPV ভাইরাস শনাক্ত করা হয়। HMPV-এর সংক্রমণ সাধারণত পাঁচ বছর বয়সের মধ্যে থাকা শিশুদেরই হয় এবং সারা জীবন পুনঃসংক্রমণ ঘটে কারণ ভাইরাসটি আমাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয় যার ফলে শরীর সংক্রমণ প্রতিরোধের শক্তি হারিয়ে দেয়। এই ভাইরাসটি উপরের এবং/অথবা নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ ঘটায়। নিম্ন শ্বাসনালীর সংক্রমণ সবচেয়ে সাধারণ ঘটনা। এই ভাইরাসটি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই হালকাই সংক্রমণ ঘটায়। তবে এটি গুরুতর অসুস্থতার কারণও হতে পারে যার জন্য শিশু, বয়স্ক এবং যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন পড়তেও পারে।
আরও পড়ুন- কোথা থেকে এল ভয়াবহ নিপা ভাইরাস? জেনে নিন
২০২১ সালের একটি গবেষণাপত্র অনুসারে, ২০১৮ সালে পাঁচ বছরের কম বয়সি শিশুদের ৩%-১০% হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। এদের মধ্যে ১% নিম্ন শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণজনিত মৃত্যুর মুখে পড়ে, যা HMPV ভাইরাস ঘটিত অসুখ। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, বিশেষ করে নিম্ন এবং নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশগুলিতে ছয় মাসের কম বয়সি শিশুদের HMPV ভাইরাস সৃষ্ট রোগে ভুগে মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। চিনে ১৪ বছরের কম বয়সি শিশুদের মধ্যে বিপুল সংখ্যক HMPV কেস শনাক্ত করা গেছে কারণ এই ভাইরাসটি নিয়ে ব্যাপক নজরদারি চলছে, চলছে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও।
ভারতে কিন্তু এই ভাইরাসের আক্রমণ পরীক্ষার কোনও অনুমোদিত সস্তা পদ্ধতিই নেই। তীব্র শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত রোগীদের HMPV পরীক্ষা বাধ্যতামূলক হওয়া উচিত কারণ ভাইরাসটি ভারত সহ বিশ্বে বহু বছর ধরেই রয়েছে। অল্পবয়সি শিশুদের মধ্যে প্রাণহানির হার ১%। ভারত এখন শুধুমাত্র HMPV-এর জন্য পরীক্ষাগারের সংখ্যা বাড়াচ্ছে চিনে HMPV সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে। তবে ভারতে অত্যন্ত জরুরিভাবে প্রয়োজন একটি নিয়ন্ত্রক কাঠামোর। কম পরিচিত ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়ার স্থানীয় এবং বিশ্বব্যাপী প্রাদুর্ভাবের পরিপ্রেক্ষিতে তা পরীক্ষা করে দ্রুত শনাক্ত করার মতো কাঠামোই নেই ভারতে। তাই HMPV নিয়ে আতঙ্ক ছড়ানোর বদলে পরিকাঠামোগত উন্নয়নের সওয়াল তোলাও বেশিই জরুরি।