লস অ্যাঞ্জেলেসে দাবানলের উপর দিয়ে আকাশে ছড়ানো হচ্ছে গোলাপি পাউডার! কেন?

Los Angeles Wildfires: এই রঙটি পাইলট এবং অগ্নিনির্বাপকদের জন্য 'ভিজ্যুয়াল মার্কার' হিসাবে কাজ করে, তাদের দেখতে সাহায্য করে যে পাউডার কোথায় ছড়ানো হচ্ছে, আগুন কোথায় কোথায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ের বীভৎসতম দাবানল দেখছে লস অ্যাঞ্জেলেস! ভয়াবহ আগুনে ঘর হারিয়েছেন লাখো মানুষ। হলিউড তারকাদের বিলাসবহুল সব বাড়ি যেন খণ্ডহর! এই বিধ্বংসী আগুন আরও ছড়িয়ে পড়েছিল বৃষ্টিপাতের অভাবে এবং দীর্ঘ খরার ফলে জঙ্গলে শুকনো গাছপালার বিপুল জ্বালানি পেয়ে। এই দাবানলকে নিয়ন্ত্রণ করতে আকাশ থেকে ছড়ানো হচ্ছে উজ্জ্বল গোলাপি রঙের একটি পাউডার। আপাতত গোলাপি পাউডারে ঢেকে গেছে লস অ্যাঞ্জেলেসের বাড়িঘরের ছাদ, যানবাহন এবং রাস্তাঘাট। আকাশপথে বায়ু ট্যাঙ্কারগুলি ক্রমাগত এই পাউডার ছড়িয়ে চলেছে৷ গত এক সপ্তাহে হাজার হাজার গ্যালন এই পাউডার ব্যবহার করা হয়েছে যাতে আগুনের শিখা আরও ছড়িয়ে না যায়। কিন্তু এই গোলাপী পাউডারটি আসলে কী এবং কীভাবেই বা তা দাবানল নিয়ন্ত্রণে সাহয্য করে?

এই গোলাপি অগ্নি প্রতিরোধকটি আসলে কী?

এটি আসলে Phos-Chek। মূলত অগ্নি প্রতিরোধক। ১৯৬০ সাল থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এই ফস-চেক ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। পেরিমিটার সলিউশন নামে একটি কোম্পানি এই পাউডার তৈরি করে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অগ্নি প্রতিরোধক এটিই। বিবিসি অনুযায়ী, পেরিমিটারের একজন মুখপাত্র জানিয়েছেন, উজ্জ্বল গোলাপি রঙের কারণ হচ্ছে, ফস-চেকে যোগ করা একটি বিশেষ রঞ্জক। এই রঙটি পাইলট এবং অগ্নিনির্বাপকদের জন্য 'ভিজ্যুয়াল মার্কার' হিসাবে কাজ করে, তাদের দেখতে সাহায্য করে যে পাউডার কোথায় ছড়ানো হচ্ছে, আগুন কোথায় কোথায় নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে আসার বেশ কয়েকদিন পর রঙটি বিবর্ণ হয়ে যায়, মাটির প্রাকৃতিক রঙের সঙ্গে মিশে যায়।

আরও পড়ুন- বীভৎসতম দাবানলে তারকাদের বাড়ি পুড়ে ছাই! কীভাবে আগুন লাগল লস অ্যাঞ্জেলেসে?

এই অগ্নি প্রতিরোধক কীভাবে কাজ করে?

দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস-এর একটি প্রতিবেদন জানাচ্ছে, সরাসরি আগুনের শিখা এতে নেভানো হয় না। পরিবর্তে আগুন যাতে ছড়িয়ে না পড়ে তাই গাছপালা এবং অন্যান্য দাহ্য পৃষ্ঠতলের উপর ফস-চেক স্প্রে করা হয়। এটি অক্সিজেনকে আগুনের জ্বালানি হতে বাধা দেয়। আগুনের বিস্তারকে ধীর করে দেয়। এই গোলাপি পাউডারের মূল উপাদান হলো বিভিন্ন লবণ, যেমন অ্যামোনিয়াম পলিফসফেট। জলের চেয়েও বেশি সময় ধরে এই পাউডার কার্যকরী থাকতে পারে। জলের মতো তা বাষ্পীভূতও হয় না। এই পাউডারটি বিশেষভাবে সেইসব এলাকায় উপযোগী যেখানে রুক্ষ ভূখণ্ডে অগ্নিনর্বাপকরা পৌঁছতেই পারেন না বা পৌঁছনোর পথে নানা বাধার সম্মুখীন হয়।

তবে এই ফস-চেকের সমস্যাও আছে কিছু। যেমন, খুব জোরে যদি হাওয়া দেয় তাহলে আই পাউডার অন্য জায়গায় ছড়িয়ে যেতে পারে এবং লক্ষ্যে পৌঁছনোর আগেই তা ছড়িয়ে গিয়ে কার্যকারিতা হারাতে পারে।

কতটা নিরাপদ এই Phos-Chek?

গোলাপি পাউডারটি দাবানল মোকাবিলায় শক্তিশালী হাতিয়ার হলেও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বাস্তুতন্ত্র এবং মানব স্বাস্থ্যের উপর এর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বেশ কিছু গবেষণা বলছে, এই অগ্নি প্রতিরোধকে ভারী ধাতু সহ এমন কিছু রাসায়নিক আছে যা পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। প্রতি বছর লক্ষ লক্ষ গ্যালন পাউডার ছড়ানো হয় যা বন্যপ্রাণীর ক্ষতি করে, জলপথ দূষিত করে এবং মানব স্বাস্থ্যকেও বিপদের মুখে ফেলে।

ফস-চেকের মতো অগ্নি প্রতিরোধকগুলি মারাত্মক দাবানল নিয়ন্ত্রণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ঠিকই। তবে তাদের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার আরও ঘন ঘন দাবানলের দিকেও চালিত করছে কারণ এই পাউডার পরিবেশে আরও রাসায়নিক ঢেলে দিচ্ছে।

২০২২ সালে ফরেস্ট সার্ভিস এমপ্লয়িজ ফর এনভায়রনমেন্টাল এথিক্সের দায়ের করা একটি মামলায় অভিযোগ করা হয় যে, অগ্নি প্রতিরোধক এই পাউডারের কণা জল আইন লঙ্ঘন করেছে। ইউএস ডিস্ট্রিক্ট কোর্টের একজন বিচারক এই উদ্বেগগুলি স্বীকার করে ঠিকই তবে এই অগ্নি প্রতিরোধকের ব্যবহার চালিয়ে যাওয়ারও অনুমতি দিয়েছেন। তবে ফরেস্ট সার্ভিস কম বিষাক্ত ফস-চেক তৈরির উপর জোর দিচ্ছে। জলপথ এবং বিপন্ন প্রজাতির আবাসস্থল সহ সংবেদনশীল পরিবেশের এলাকার কাছাকাছি এই গোলাপি পাউডার ছড়ানোর উপর বিধিনিষেধও আরোপিত হয়েছে।

More Articles